বাঁ দিক থেকে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়, নিরঞ্জন জ্যোতি। গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।
দিল্লিতে রাজ্যের শাসকদলের প্রতিনিধিদের সঙ্গে দেখা করেননি। তার দিন চারেক পর রাজ্যে আসতে পারেন কেন্দ্রীয় গ্রামোন্নয়ন প্রতিমন্ত্রী নিরঞ্জন জ্যোতি। শনিবার সকাল সাড়ে ১১টা নাগাদ তাঁর কলকাতায় আসার কথা। বিজেপির তরফে জানানো হয়েছে, দুপুর ১টায় সেক্টর ফাইভে সাংবাদিক বৈঠক হবে। বিজেপি সূত্রে খবর, সেখানে জ্যোতি থাকতে পারেন। শনিবার সকালেই দিল্লি থেকে তাঁর রওনা দেওয়ার কথা। তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের ধর্নার জেরে চাপে পড়েই কি রাজ্যে আসছেন কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রী, উঠছে প্রশ্ন।
জ্যোতি কলকাতায় এসে কথা বলতে পারেন রাজ্য বিজেপির সভাপতি সুকান্ত মজুমদারের সঙ্গে। সুকান্ত নিজের কেন্দ্র বালুরঘাটে ছিলেন। শুক্রবার রাতেই তিনি বালুরঘাট থেকে কলকাতার উদ্দেশে রওনা দিয়েছেন।
মঙ্গলবারই দিল্লিতে কৃষিভবনে জ্যোতির সঙ্গে দেখা করে বাংলার মানুষের দাবি জানাতে গিয়েছিলেন অভিষেক-সহ দলের প্রতিনিধিরা। তৃণমূলের অভিযোগ, বাইরে দীর্ঘ ক্ষণ অপেক্ষা করার পরেও দেখা করেননি কেন্দ্রীয় মন্ত্রী। দফতর থেকে পিছনের দরজা দিয়ে বেরিয়ে গিয়েছেন। তৃণমূলের প্রতিনিধিদের সঙ্গে দেখা করার আগে রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর সঙ্গে দেখা করেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী। তা নিয়ে অভিযোগের আঙুল তুলে তৃণমূল নেতৃত্ব জানান, শুভেন্দুর সঙ্গে দেখা করার সময় পেলেও তাঁদের সঙ্গে দেখা করেননি মন্ত্রী। নেপথ্যে শুভেন্দুর ইন্ধন থাকতে পারে বলেও কটাক্ষ করেন কেউ কেউ। মন্ত্রী বেরিয়ে গেলে তৃণমূল নেতৃত্বকে আটক করে তুলে নিয়ে যায় পুলিশ।
এর পর বৃহস্পতিবার ‘রাজভবন চলো’ কর্মসূচির ডাক দেন অভিযেক। রাজ্যপালের সঙ্গে দেখা করে স্মারকলিপি জমা দেওয়ার কথাও জানান তিনি। কিন্তু রাজ্যপাল না-থাকায় রাজভবনের সামনে ধর্নায় বসেছেন তৃণমূল সাংসদ অভিষেক। জানিয়েছেন, রাজ্যপালের সঙ্গে দেখা করে স্মারকলিপি জমা না দেওয়া পর্যন্ত ধর্না দেবেন তিনি। এই পরিস্থিতিতে কেন রাজ্যে আসছেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী, উঠছে প্রশ্ন।
মনে করা হচ্ছে, অভিষেক ধর্নায় বসার ফলে বিজেপির উপর যে চাপ তৈরি হয়েছে, তার জেরেই সাংবাদিক বৈঠক করতে আসছেন জ্যোতি। বিজেপির একাংশ মনে করছে, একতরফা ভাবে এ রাজ্যে অভিষেকের বক্তব্য প্রচার করছে শাসকদল। দিল্লি কেন টাকা আটকে রেখেছে, তা এখানে এসে রাজ্যের মানুষকে কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের তরফে বোঝানো উচিত। এর আগে এ নিয়ে দিল্লিতে মুখ খুলেছেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী অনুরাগ ঠাকুর, গিরিরাজ সিংহ। কিন্তু রাজ্য বিজেপি মনে করছে, এখানে এসে তা নিয়ে কোনও কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর কথা বলা উচিত। আর সেই কাজটাই করতে পারেন জ্যোতি।
এর আগে দিল্লিতে বসেই জ্যোতি জানিয়েছেন, কেন তিনি অভিষেকদের সঙ্গে দেখা করেননি। কেন সময় দিয়েও তিনি দেখা করলেন না, তার ব্যাখ্যা দিয়ে জ্যোতি বলেছিলেন, “আমি যেটা জানতাম, তাতে তৃণমূলের সাংসদ ও মন্ত্রীরা আমার সঙ্গে ৬টার সময়ে দেখা করতে আসবেন। সে জন্যই সময় নিয়েছিলেন তাঁরা। কিন্তু পরে সাধারণ জনতাকে নিয়ে ওঁরা দেখা করতে চাইছিলেন। যা অফিসের নিয়মবিরুদ্ধ।” একই সঙ্গে তাঁর দাবি, আসল বিষয় নিয়ে আলোচনার উদ্দেশ্য তৃণমূলের ছিল না। ওঁদের উদ্দেশ্য ছিল রাজনীতি করা। পাশাপাশি, আক্রমণ করেন অভিষেককে। তিনি বলেন, ‘‘অভিষেককে বাঁচাতেই ১০০ দিনের কাজের দুর্নীতির তদন্ত করেনি বাংলার সরকার।’’ এ বার তাঁর এই বক্তব্য রাজ্যে এসে রাখতে পারেন জ্যোতি। মনে করা হচ্ছে, সে জন্যই শনিবার রাজ্যে আসছেন জ্যোতি।