আইনজীবী তথা সাংসদ বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য। —ফাইল চিত্র
এক সময় কলকাতার মেয়র ছিলেন। এখন রাজ্যসভার সাংসদ। বর্ষীয়ান আইনজীবী হিসেবেও তাঁর খ্যাতি রয়েছে। সেই তিনিই এখন কোভিড পরিস্থিতির মধ্যে শোভাযাত্রা করার পক্ষে মামলা লড়ছেন! এটা কি শোভা পায়? কলকাতা হাই কোর্টে বিপক্ষ শিবিরের আইনজীবীর কাছ থেকে এমনই সব মন্তব্য শুনে কৃষ্ণনগরের জগদ্ধাত্রী পুজোর বিসর্জনের মামলা থেকে সরে দাঁড়ালেন বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য। বৃহস্পতিবার ওই মামলার শুনানির দ্বিতীয়ার্ধে বিকাশ উপস্থিতও ছিলেন না। সে কথা নিজেও স্বীকার করেছেন তিনি।
দীর্ঘ দিন ধরে প্রথা মেনে ‘সাং’ এর মাধ্যমে কৃষ্ণনগরে জগদ্ধাত্রী প্রতিমা বিসর্জন হয়ে আসছে। এই অনুষ্ঠানে প্রচুর মানুষের সমাগম ঘটে। কোভিডের কারণে গত বছর তা বন্ধ ছিল। এ বছরও ওই কারণ দেখিয়ে অনুষ্ঠান বাতিল করে দেয় প্রশাসন। যা নিয়ে আপত্তি জানায় কয়েকটি পুজো কমিটি। এ নিয়ে অজয় দত্ত নামে এক ব্যক্তি জনস্বার্থ মামলা দায়ের করেন কলকাতা হাই কোর্টে। বৃহস্পতিবার প্রধান বিচারপতি প্রকাশ শ্রীবাস্তব ও বিচারপতি রাজর্ষি ভরদ্বাজের ডিভিশন বেঞ্চে ছিল ওই মামলার শুনানি। রাজ্যের হয়ে সওয়াল করেন অ্যাডভোকেট জেনারেল সৌমেন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায়। বিকাশ সওয়াল করেন মামলাকারীর পক্ষে।
প্রথমার্ধের শুনানিতে আদালতে অ্যাডভোকেট জেনারেল জানান, ওই শোভাযাত্রায় প্রচুর মানুষের ভিড় হয়। জায়গায়ও অত্যন্ত কম। রাজবাড়ি থেকে কদমঘাট পর্যন্ত রাস্তাটি খুবই সংকীর্ণ হওয়ায় সেখানে কোভিড বিধি মানা সম্ভব নয়। তিনি উল্লেখ করেন, কৃষ্ণনগরে প্রায় ১৫০টি পুজো ক্লাব রয়েছে। ফলে প্রচুর মানুষের সমাগম হওয়ার সম্ভাবনা আছে। তাই কোভিড পরিস্থিতিতে গত বছরের মতো এ বছরও অনুমতি বাতিল করেছে সরকার। এর পরেই মামলাকারীর আইনজীবী বিকাশরঞ্জন বলেন, ‘‘ওই অনুষ্ঠানের সঙ্গে দীর্ঘ দিনের প্রথা ও ঐতিহ্য জড়িয়ে রয়েছে। সেই কথা ভেবে অনুমতি দেওয়ার প্রয়োজন ভেবে দেখা উচিত।’’
মঙ্গলবার থেকে ওই অনুষ্ঠানের দাবিতে ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ শুরু হয়। যার ফলে বুধবার সময়ে হাসপাতালে পৌঁছতে না পেরে মৃত্যু হয় এক অসুস্থ এক শিশুর। ওই ঘটনা তুলে ধরে আদালতে অ্যাডভোকেট জেনারেল বলেন, ‘‘এই অনুষ্ঠানের দাবিতে রাস্তা অবরোধ করে প্রতিবাদ চলছিল। টায়ার জ্বলছিল। যখন পুলিশ এসে অ্যাম্বুল্যান্সটি উদ্ধার করে তখন অনেক দেরি হয়ে যায়। একটি প্রাণ চলে যায়।’’ এর পরই এই মামলা থেকে বিকাশরঞ্জনকে সরে যেতে বলেন অ্যাডভোকেট জেনারেল। তাঁর আবেদন, ‘‘আপনি তো মেয়র ছিলেন। আপনার কি এই ধরনের মামলায় দাঁড়ানো শোভা পায়! এক জন প্রাক্তন মেয়র হিসেবে এই মামলা থেকে আপনার সরে দাঁড়ানো উচিত।’’ প্রত্যুত্তরে বিকাশরঞ্জন বলেন, ‘‘পুরনো প্রথা ও ঐতিহ্য মেনে চলার কথা বলেছি। কোভিড পরিস্থিতিকে বাদ দিতে বলিনি। দুটোই মাথায় রাখা হোক।’’
প্রথমার্ধে এই অবধি শুনানি চলেই বিরতি হয়ে যায়। তখন ভার্চুয়াল মাধ্যমে উপস্থিত ছিলেন আইনজীবী বিকাশরঞ্জন। বিরতির পর ফের শুনানির জন্য মামলাটি ওঠে। কিন্তু তখন তাঁকে আর দেখা যায়নি। তাঁর বদলে মামলাকারীর হয়ে সওয়াল করেন আইনজীবী কমলেশচন্দ্র সাহু এবং আইনজীবী পায়েল মিত্র। যা দেখে অনেকের প্রশ্ন, তবে কি রাজ্যের কৌঁসুলির কথা শুনেই মামলা থেকে সরে দাঁড়ালেন বাম সাংসদ? বিকাশরঞ্জন অবশ্য সেই বিতর্কে না গিয়েই জবাব দেন, ‘‘শুনানির শুরুতে আমি ছিলাম। অন্য কাজের জন্য রায় দানের সময় থাকতে পারেননি।’’