—প্রতীকী ছবি।
গত পঞ্চায়েত ভোটে তৃণমূলের সঙ্গে সম্মুখ সমরে টক্কর দিয়েছিল জমি কমিটি। তাদের মনোনয়নে বাধা দেওয়া হয়েছে বলে বিস্তর অভিযোগ ওঠে। মামলাও হয়। হাই কোর্টের নির্দেশ কিছু আসনে হোয়াটসঅ্যাপে মনোনয়ন দিয়েছিলেন জমিকমিটির প্রার্থীরা।
এ বারে পরিস্থিতি বদলে গিয়েছে দক্ষিণ ২৪ পরগনার ভাঙড়ে। মনোনয়ন জমার সময়ে তৃণমূলের সঙ্গে আইএসএফের একাধিকবার সংঘর্ষ হয়। তৃণমূলের ২ জন এবং আইএসএফের এক কর্মীর প্রাণ যায়। তবে মনোনয়ন নিয়ে জমি কমিটির সঙ্গে কারও কোনও বড় গোলমাল বাধেনি। কোন রসায়নে এমনটা সম্ভব হল, উঠছে সেই প্রশ্ন।
২০১৬ সালে ভাঙড়ে পাওয়ার গ্রিড বিরোধী আন্দোলনকে কেন্দ্র করে তৈরি হয়েছিল জমি, জীবিকা ও বাস্তুতন্ত্র রক্ষা কমিটি বা সংক্ষেপে জমি কমিটি। কমিটির যুগ্ম সম্পাদক মির্জা হাসানের অবশ্য দাবি, ‘‘এ বারও প্রথম দিন বাধা দিতে চেয়েছিল তৃণমূল। কিন্তু আমরা তাদের মনে করিয়ে দিই, আমাদের উপরে হামলা হলে পাওয়ার গ্রিডই অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ করে দেব।’’
তৃণমূল নেতা তথা পোলেরহাট ২ পঞ্চায়েতের উপপ্রধান হাকিমুল ইসলাম বলেন, ‘‘আমরা কাউকেই মনোনয়ন জমা দিতে বাধা দিইনি।’’
২০১৮ সালে পঞ্চায়েত নির্বাচনে পোলেরহাট ২ পঞ্চায়েতের ১৬টি আসনের মধ্যে তৃণমূল বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় ৮টি আসনে জিতেছিল। বাকি ৮টিতে জমি কমিটির সঙ্গে লড়াই হয়েছিল তাদের। তার মধ্যে জমি কমিটি পেয়েছিল পাঁচটি আসন। তৃণমূল জেতে ৩টি আসনে। মনোনয়ন ঘিরে অশান্তি হয়েছিল। জমি কমিটিকে কিছু জায়গায় আটকে দেওয়ার অভিযোগ ওঠে, ব্লক অফিসের মধ্যেই তাদের প্রার্থীদের মারধর করা হয় বলেও দাবি। পরে কমিটি হাই কোর্টের দ্বারস্থ হয়। আদালতের নির্দেশে তারা হোয়াটসঅ্যাপে মনোনয়নের দাখিলের অনুমতি পায়। পোলেরহাট ২ পঞ্চায়েতে ৮টি আসনে মনোনয়ন দিয়েছিল তারা।
তৃণমূল ১৬টি আসনের মধ্যে ১১টি আসনে জিতে পঞ্চায়েতে বোর্ড গঠন করলেও জমি কমিটির বাধায় গত পাঁচ বছর কার্যত পঞ্চায়েত অফিসেই ঢুকতে পারেনি তারা। প্রধান, উপপ্রধানেরা পঞ্চায়েত অফিসে ঢুকতে গেলে জমি কমিটির সঙ্গে একাধিকবার গন্ডগোল বাধে।
পোলেরহাট ২ পঞ্চায়েতের আসন বেড়ে এ বার হয়েছে ২৪টি। সব ক’টিতেই প্রার্থী দিয়েছে জমি কমিটি। পঞ্চায়েত সমিতিতে তিনটি এবং জেলা পরিষদের একটি আসনেও মনোনয়ন জমা দিয়েছে তারা।
অন্য দিকে, ২০২১ সালে ভাঙড় বিধানসভা কেন্দ্র থেকে আইএসএফ জয়ী হওয়ার পর থেকে তারাই এখন এলাকায় প্রধান বিরোধী। জমি কমিটির সঙ্গে সাম্প্রতিক অতীতে তৃণমূলের বড় ধরনের গোলমাল বাধেনি বলেই স্থানীয় সূত্রের খবর। বরং জমি কমিটির সঙ্গে আইএসএফেরই গন্ডগোল বেধেছে একাধিকবার। আইএসএফের একটি সূত্রের দাবি, ভাঙড়ে পাওয়ার গ্রিড বিরোধী আন্দোলন স্তিমিত। গ্রিড এলাকায় কাজ চলছে। ফলে জমি কমিটি তুলনায় দুর্বল হয়ে পড়েছে। তাদের দাবি মেনে প্রশাসন নানা উন্নয়নমূলক ব্যবস্থা নিয়েছে এলাকায়। তৃণমূলের সঙ্গে জমি কমিটি ইদানীং তলায় তলায় ‘সমঝোতা’ করে চলছে বলেও দাবি আইএসএফের স্থানীয় নেতৃত্বের একাংশের। ভোট কাটাকাটির খেলায় আইএসএফকে বেগ দিতে তাই জমি কমিটিকে তৃণমূল ব্যবহার করছে বলে অভিযোগ উঠছে। এমনকি, এর পিছনে আর্থিক লেনদেন আছে কি না, তা নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে অনেকের।
অভিযোগ মানেননি জমি কমিটি বা তৃণমূলের নেতারা। মির্জার কথায়, ‘‘অমূলক কথাবার্তা বলা হচ্ছে। এই এলাকায় তৃণমূলের সঙ্গে আমরা দিনের পর দিন লড়াই করে গিয়েছি। আইএসএফের সঙ্গে আমাদের নানা বিষয়ে মতপার্থক্য থাকলেও তৃণমূলের সঙ্গে সমঝোতার প্রশ্নই ওঠে না।’’ হাকিমুলও বলেন, ‘‘জমি কমিটির বাধায় এলাকার উন্নয়ন বহু দিন ধরে স্তব্ধ। ওদের সঙ্গে বোঝাপড়ার কোনও সম্ভাবনাই নেই।’’