সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম। ফাইল চিত্র।
নেতা-মন্ত্রীদের সম্পত্তি বৃদ্ধির মামলা নিয়ে বিতর্কে এ বার তৃণমূলকে পাল্টা চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিল সিপিএম। বুধবার সাংবাদিক বৈঠকে তৃণমূল দাবি করেছে, মামলার নথিতে কেবল তৃণমূলের নেতা-মন্ত্রীদের নাম নেই। মামলার নথিতে কংগ্রেস নেতা অধীর চৌধুরী থেকে শুরু করে সিপিএম নেতা সূর্যকান্ত মিশ্র, কান্তি গঙ্গোপাধ্যায়েরও নাম রয়েছে। তার প্রেক্ষিতে তৃণমূলকে এক মাসের মধ্যে তথ্য দিয়ে আদালতে পিটিশন দায়ের করার চ্যালেঞ্জ ছুড়লেন সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম। সিপিএমের বক্তব্য, আইনজীবী শামিম আখতারের উল্লেখ করা পিটিশনের ভিত্তিতে আদালত যে নির্দেশ দিয়েছে, সেখানে নির্দিষ্ট ব্যক্তিদের কথাই রয়েছে। কিন্তু ব্রাত্য বসুরা ওই নির্দেশে আরও অনেকের কথা রয়েছে বলে মন্তব্য করে ‘মিথ্যাচার’ করছেন।
২০১৭ সালে কলকাতা হাই কোর্টে জনস্বার্থ মামলা দায়ের হয়। গত সোমবার মামলাকারীদের আইনজীবী শামিম আহমেদ হাই কোর্টে বাংলার ১৯ জন নেতা-মন্ত্রীর একটি তালিকা-সহ তাঁদের স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তির হিসাব দিয়েছিলেন। সেখানে দেখান, ২০১১ সাল থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত এই ১৯ জনের সম্পত্তি ‘বিপুল ভাবে’ বেড়েছে। বুধবার দুপুরে সংশ্লিষ্ট মামলার রায়ের কপি নিয়ে সাংবাদিক বৈঠক করেন ওই তালিকায় থাকা তৃণমূলের ছ’জন নেতা-মন্ত্রী— ফিরহাদ হাকিম, ব্রাত্য বসু, অরূপ রায়, শিউলি সাহা, মলয় ঘটক এবং জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক। বৈঠকে ফিরহাদ বলেন, ‘‘মানুষের কাজ করার জন্য আমরা ব্যক্তিগত সুখ বিসর্জন দিয়েছি। মানুষের স্বার্থে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে লড়েছি। কিন্তু রাজনৈতিক উদ্দেশ্য নিয়ে ধারাবাহিক ভাবে আমাদের অপমান করা হচ্ছে।’’
দুপুরে তৃণমূলের এই সাংবাদিক বৈঠকের পর সেলিম বলেন, ‘‘এমন এক জন শিক্ষামন্ত্রী পেয়েছি, যিনি রায় আর পিটিশনের মধ্যে ফারাক করতে জানেন না! মামলার পরবর্তী শুনানি রয়েছে ১২ সেপ্টেম্বর। তার মধ্যে ব্রাত্যবাবু তাঁর আইনজীবীদের মাধ্যমে সূর্যকান্ত মিশ্র, অশোক ভট্টাচার্য বা কান্তি গঙ্গোপাধ্যায়-সহ যাঁদের নাম বলছেন, যাঁদের কথা বলতে চান, তাঁদের সম্পর্কে পিটিশনে তথ্য দিন। দরকারে আমাদের কাছে সহায়তা নিন। তার পরে মোকাবিলা হবে। আর যদি না তথ্য দিতে না পারেন, তা হলে মানহানির মামলার জন্য প্রস্তুত থাকুন!’’
কোনও তদন্তেই তাঁদের ভয় নেই বলে জানিয়ে দেন সেলিম। তাঁর কথায়, ‘‘আমরা দিল্লিতে সেটিং করতে যাব না। রাতের অন্ধকারে প্রধান বিচারপতির বাড়িতেও যাব না। হোক তদন্ত! আদালতে এবং রাস্তায় লড়াই চলবে।’’ সেলিম প্রশ্ন তোলেন, সূর্যকান্ত সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক বা বিরোধী দলনেতা থাকার সময়েও রাজ্য সরকারের তরফে যে তদন্ত হয়েছিল, তার কী হল?
তৃণমূলের বিরুদ্ধে আক্রমণ শানিয়েছেন সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সুজন চক্রবর্তীও। বলেন, ‘‘এত দিন অভিযোগ করেনি কেন? ২০১১ সাল থেকে ২০১৬ সাল, পাঁচ বছর! তার পর ২০১৭ সালে মামলা দায়ের হল। তার পর আরও পাঁচ বছর কেটে আজ ২০২২ সাল। এত দিন কি ঘুমাচ্ছিল? লুটেরা বাহিনী যেন বোঝে তারা লুটেরা বাহিনী। তারা যেন চোখ না রাঙায়।’’
ঘটনাচক্রে, সুজনকে আক্রমণ করেন ফিরহাদ। তাঁর মন্তব্য, ‘‘আমি সুজন চক্রবর্তীকে বলতে চাই, আপনাদের ছেলেদের বলতে বলুন, চেতলা এলাকায় কোনও দিন কোনও অন্যায় ফিরহাদকে করতে দেখেছেন কি না।’’ সুজনও পরে বলেন, ‘‘অনেকে বলছেন, ওয়ান-টু-থ্রি-ফোর, তৃণমূলের সবাই চোর। আমি বলছি, ওয়ান-টু-থ্রি-ফোর, তৃণমূলের নেতারা চোর। যত বড় নেতা, তত বড় চোর।’’
প্রসঙ্গত, সাংবাদিক বৈঠকে একটি তালিকা তুলে ধরতে দেখা যায় ব্রাত্যকে। সেটিকে ‘সম্পূর্ণ’ তালিকা আখ্যা দিয়ে বেশ কয়েক জন সিপিএম নেতার নাম বলেন তিনি। সেই তালিকায় সূর্যকান্ত, কান্তি ছাড়াও রয়েছেন বাম আমলের মন্ত্রী তথা শিলিগুড়ির প্রাক্তন মেয়র অশোক ভট্টাচার্য। এর প্রেক্ষিতে অশোক বলেন, ‘‘পৈতৃক ছোট একটা বাড়িতে বরবার থাকি। আগে ভাতা পেতাম, এখন সরকারি পেনশন পাই। স্ত্রী মারা যাওয়ার পরে নমিনি হিসাবে সরকারি কিছু টাকা-পয়সা পাই। কলকাতায় এক সরকারি ভাড়া করা ফ্ল্যাট রয়েছে। আসলে ব্রাত্যদের পার্টিরা চোরেদের ও দুর্নীতিবাজদের পার্টি, তাই সবাইকে ওঁরা নিজেদের মতো মনে করেন!’’
বিপাকে পড়ে তৃণমূল অন্যের দিকে আঙুল তুলতে চাইছে বলে মন্তব্য করেন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরীও। তিনি বলেন, ‘‘একে বলে চোরের মায়ের বড় গলা! কেলেঙ্কারি সামনে আসছে, টাকা উদ্ধার হচ্ছে, আদালত নির্দেশ দিচ্ছে। বিপাকে পড়ে এখন অন্যের দিকে আঙুল তুলতে চাইছেন! তদন্ত হলে ক্ষতি কী?’’
তৃণমূলকে কটাক্ষ করে বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর বক্তব্য, ‘‘ওঁরা নিজেদের জালেই নিজেরা জড়িয়েছেন। ওঁরা বলুন, ওঁদের শেষ ১০ বছরের আয়কর রিটার্ন, প্যান কার্ডের তথ্যের সঙ্গে ওঁদের সম্পত্তির কোনও গরমিল নেই। ওঁরা বলছেন সূর্যকান্ত মিশ্রের নাম আছে, অধীর চৌধুরী দোষী। কিন্তু এক বারও বলতে পারছেন না, আমি নির্দোষ!’’