এই মূর্তিটি অবহেলার অভিযোগ। নিজস্ব চিত্র।
বছরখানেক ধরে পলিথিনে ঢাকা দেওয়া স্বামী বিবেকানন্দের পূর্ণাবয়ব মূর্তি। সে পলিথিনে নোংরা জমেছে। দুর্গাপুরের বাঁকুড়া মোড়ে ডিভিসি-র বর্ধমান সেচখালের সেতুর পাশে মূর্তিটি রয়েছে। মূর্তিটি এত দিন ধরে কেন অবহেলায় পড়ে রয়েছে, তা নিয়ে ক্ষোভপ্রকাশ করেছেন এলাকাবাসীর একাংশ। তবে বিতর্কের মুখে দক্ষিণবঙ্গ রাষ্ট্রীয় পরিবহণ নিগম (এসবিএসটিসি) জানিয়েছে, আগামী ১২ জানুয়ারি, বিবেকানন্দের জন্মদিনে মূর্তিটির আবরণ উন্মোচন করা হবে।
প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, ২০১৮ সালের নভেম্বর মাসে বর্ধমান সেচখালের উপরের নতুন সেতুটি খুলে দেওয়া হয় ব্যবহারের জন্য। পুরসভার তৎকালীন ৪ নম্বর বরো চেয়ারম্যান তথা ৪৩ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর চন্দ্রশেখর বন্দ্যোপাধ্যায় সেতুর সৌন্দর্যায়ন ও স্বামী বিবেকানন্দের মূর্তি বসানোর আর্জি জানিয়ে চিঠি দেন এসবিসিএসটিসি-র তৎকালীন চেয়ারম্যান প্রয়াত তমোনাশ ঘোষকে। তমোনাশবাবু সেই চিঠি পাঠান তৎকালীন পরিবহণমন্ত্রী শুভেন্দু অধিকারীকে। পরিবহণ দফতর প্রায় ১৮ লক্ষ টাকা বরাদ্দ করে এর জন্য। সেই টাকায় সৌন্দর্যায়নের পাশাপাশি, বছরখানেক আগে স্বামী বিবেকানন্দের মূর্তি প্রতিষ্ঠা করা হয় সেতুর পাশে।
অভিযোগ, তার পরে থেকে মূর্তির আবরণ উন্মোচিত হয়নি। পলিথিনের আবরণ রোদ-বৃষ্টিতে ছিঁড়ে গিয়েছে নানা জায়গায়। ধুলোর আস্তরণ জমছে পলিথিনের উপর। ছেঁড়া পলিথিনের ফাঁক দিয়ে মূর্তির অংশ বিশেষ দেখা যায়। এই পরিস্থিতিতে সম্প্রতি ওই সেতু দিয়ে যাওয়ার সময়ে নবম শ্রেণির ছাত্র জয়দীপ দত্ত ও তার ভাই সপ্তম শ্রেণির ছাত্র সোহমের প্রশ্ন, ‘‘স্বামীজির মূর্তি এ ভাবে নোংরা পলিথিন দিয়ে কেন ঢাকা?’’ তাদের বাবা বিশ্বদীপবাবু বলেন, ‘‘বহুদিন ধরেই এই অবস্থায় রয়েছে মূর্তিটি। কেন জানি না।’’
এসবিএসটিসি-র ম্যানেজিং ডিরেক্টর গোদালা কিরণকুমার জানান, ১২ জানুয়ারি রাজ্যের শ্রমমন্ত্রী মলয় ঘটকের মূর্তির আবরণ উন্মোচন করার কথা। এ ছাড়া, উপস্থিত থাকার কথা আসানসোল-দুর্গাপুর উন্নয়ন পর্ষদের চেয়ারম্যান তাপস বন্দ্যোপাধ্যায়, দুর্গাপুর পশ্চিমের বিধায়ক বিশ্বনাথ পাড়িয়াল ও কাউন্সিলরদের। তিনি বলেন, ‘‘অনুষ্ঠানে সংশ্লিষ্ট সবাইকে আমন্ত্রণ জানানো হবে।’’
স্থানীয় কাউন্সিলর চন্দ্রশেখরবাবু সম্প্রতি বিজেপিতে যোগ দিয়েছেন। এই পরিস্থিতিতে প্রশ্ন উঠেছে মূর্তি উন্মোচন অনুষ্ঠানে তাঁকেও আমন্ত্রণ জানানো হবে কি না? বিতর্ক উস্কে দিয়ে চন্দ্রশেখরবাবুর দাবি, ‘‘১২ জানুয়ারি ওই মূর্তির উদ্বোধন করার কথা ছিল তৎকালীন মন্ত্রী শুভেন্দু অধিকারীর। তৃণমূল আমাকে বহিষ্কার করেছে। বিজেপিতে যোগ দিয়েছি। তাই আমি এখন বিজেপির কাউন্সিলর। তবে স্থানীয় কাউন্সিলর হিসেবে ওই অনুষ্ঠানে আমারও ডাক পাওয়ার কথা।’’ এসবিএসটিসি-র এমডি এ বিষয়ে কোনও প্রতিক্রিয়া জানাননি। পাশাপাশি, এত দিন ধরে কেন ‘অবহেলা’য় পড়ে ছিল মূর্তিটি, সে প্রশ্নেরও উত্তর মেলেনি সংস্থার কর্তাদের থেকে। তবে মূর্তির আবরণ উন্মোচনের পরে, তিনি আলাদা ভাবে গিয়ে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ করে স্বামী বিবেকানন্দের প্রতি শ্রদ্ধা জানাবেন বলে জানান চন্দ্রশেখরবাবু।