man

Sariful Sheikh: সরিফুলের ‘কীর্তিতে’ প্রতিবেশীরা অবাক

জানা গিয়েছে, ২০১৬ সালে রেণুর বাড়ির লোক বিয়েতে রাজি না হওয়ায় আত্মহত্যা করতে গিয়েছিল শের মহম্মদ।

Advertisement

প্রণব দেবনাথ , বিপ্লব ভট্টাচার্য

কেতুগ্রাম ও দুর্গাপুর শেষ আপডেট: ০৮ জুন ২০২২ ০৭:২৯
Share:

আক্রান্ত বধূর ধৃত শ্বশুর ও শাশুড়ি। আদালতে। ছবি: অসিত বন্দ্যোপাধ্যায়

সরকারি চাকরি পেয়ে তাকে ছেড়ে চলে যাবেন সন্দেহে কব্জি থেকে স্ত্রীয়ের ডান হাত কেটে নিয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে কেতুগ্রামের কোজলসার শের মহম্মদ ওরফে সরিফুলের বিরুদ্ধে। মঙ্গলবার রাতে কেতুগ্রামের হলদিগ্রাম থেকে তাকে গ্রেফতারও করেছে পুলিশ। তবে বছর চব্বিশের ওই যুবক এমনটা করতে পারে, বিশ্বাস করতে পারছেন না প্রতিবেশীরা। এ দিনই সরিফুলের বাবা-মা, সিরাজ শেখ ও মেহেরনিকা বিবিকেও গ্রেফতার করে পুলিশ।

Advertisement

ওই গ্রামে মঙ্গলবার গিয়ে দেখা যায়, রাস্তার উপরে তালাবন্ধ সরিফুলের বাড়ি দেখতে গাড়ি থামাচ্ছেন অনেকে। প্রতিবেশীদের প্রশ্ন, মেয়েটা কী এমন করেছিল, যে হাত কেটে ফেলা হল! তাঁদের দাবি, ছোট থেকেই সরিফুল বিনয়ী, মেধাবী। উচ্চ মাধ্যমিকে ভাল ফল করেছিল। পলিটেকনিকে ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ত। তবে পড়া শেষ করতে পারেনি। অভিযুক্তদের বাড়ির সামনে থাকেন আবদুল্লা শা। তিনি বলেন, ‘‘ও এটা করেছে বিশ্বাস করতে কষ্ট হচ্ছে।’’

জানা গিয়েছে, ২০১৬ সালে রেণুর বাড়ির লোক বিয়েতে রাজি না হওয়ায় আত্মহত্যা করতে গিয়েছিল শের মহম্মদ। পরে অবশ্য রেণুর পরিবার বিষয়টি মেনে নেন। অভিযুক্তের এক তুতো দিদি সোনালি বিবির দাবি, ‘‘ভাই বদমেজাজি ছিল না। বিয়ের পর থেকে রেণুর পড়াশোনার সব দায়িত্ব নিয়েছিল। পরে, রেণুর দুর্গাপুরে একটা সম্পর্ক হয় শুনেছি। ভাই সেটা মানতে পারেনি। তবে তার জন্য মেয়েটার হাত কাটা অপরাধ।’’ রেণু যদিও দুর্গাপুরের হাসপাতাল থেকেই এ দিন দাবি করেন, ‘‘আমার কোনও সম্পর্ক নেই। ছিল না। সব স্বামী বলে বেড়িয়েছে।’’

Advertisement

কোজলসার পাশের গ্রাম চিনিসপুরে রেণুর বাড়িতেও এ দিন প্রতিবেশীদের ভিড়। হাসপাতালে যাওয়া-আসা করছেন রেণুর দাদা, জামাইবাবুরা। প্রতিবেশী বেলি বিবি, আলি হোসেনরা বলেন, ‘‘স্বামী-স্ত্রীর অশান্তি মেটানোর অনেক রাস্তা আছে। হাত কেটে দেওয়া বিকৃত মনের পরিচয়। সরিফুলের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই আমরা।’’ জানা গিয়েছে, দুর্গাপুরে স্ত্রী চাকরি পাওয়ার পরে ঘর ভাড়া করে সরিফুলও থাকত সেখানে। ওই হাসপাতালেই ওয়ার্ড বয় হিসাবে কাজ করেছে কয়েক মাস। তবে ছ’মাস আগে বাবার শরীর খারাপ হওয়ার পরে, সে ফিরে আসে কেতুগ্রামে। দোকানের দায়িত্ব নেয়। তার মধ্যেই সরকারি চাকরি পান রেণু। তবে হাত না থাকায়, চাকরিতে কোনও প্রভাব পড়বে কি না, উঠেছে সেই প্রশ্ন। রেণু বলেন, ‘‘আমার এই হাল যারা করল, তাদের কঠোর শাস্তি হোক। সরকারের কাছে আর্জি জানাচ্ছি, চাকরিটা যাতে থাকে।’’

এ দিন রাজ্য মহিলা কমিশনের চেয়ারপার্সন লীনা গঙ্গোপাধ্যায় ও কমিশনের আরও তিন প্রতিনিধি দুর্গাপুরের হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রেণুর সঙ্গে দেখা করেন। লীনাদেবী জানান, রেণু তাঁর কাছে আর্জি জানিয়েছেন, তাঁকে যেন সরকারি চাকরিতে যোগ দিতে দেওয়া হয়। নার্সিং পরীক্ষায় সংরক্ষিত কোটায় ওই তরুণী ২২ র‌্যাঙ্ক করেছিলেন। কমিশনের চেয়ারপার্সন বলেন, ‘‘রেণু জানিয়েছেন, ওঁর দু’টি আবেদন রয়েছে। প্রথমত, ওঁর সরকারি চাকরিটা যাতে থাকে, তার ব্যবস্থা করতে হবে। দ্বিতীয়ত, স্বামীর উপযুক্ত শাস্তি যাতে হয়, তা নিশ্চিত করতে হবে।’’ কমিশনের প্রতিনিধিরা হাসপাতালে থাকাকালীন কেতুগ্রাম থানার কোনও আধিকারিক সেখানে ছিলেন না। স্থানীয় থানা মারফত কেতুগ্রাম থানার এক আধিকারিকের সঙ্গে কথা হয় লীনার। অভিযুক্তদের দ্রুত গ্রেফতার করা হবে বলে পুলিশ আশ্বাস দিয়েছে, দাবি তাঁর। রেণুর বাবা আজিজুল হক রাতে বলেন, ‘‘জামাই ধরা পড়েছে জেনে একটু আশ্বস্ত লাগছে। তবে আমার মেয়েটার যা হাল করেছে, ওর কড়া সাজা চাই।’’

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তেফলো করুন আমাদের Google News, Twitter এবং Instagram পেজ

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement