ফাইল চিত্র।
ডাম্পারের ধাক্কায় দুই তৃণমূল কর্মীর মৃত্যুর ঘটনায় অবৈধ বালি পাচার নিয়ে জোর তরজা পশ্চিম বর্ধমানের আসানসোলে। বুধবার মৃত দুই যুবকের দেহ হীরাপুর থানার সামনে এনে দীর্ঘ ক্ষণ ধরে বিক্ষোভ দেখালেন শাসক দলের কর্মী-সমর্থকেরা। অভিযোগ, রাতে লরিতে অনিয়ন্ত্রিত ভাবে অবৈধ বালি পাচার হয়। জেলা ও পুলিশ প্রশাসন সে ব্যাপারে কোনও পদক্ষেপ করেনি বলেই দুটো প্রাণ চলে গিয়েছে। যদিও পুলিশের বক্তব্য, সমস্ত অভিযোগই ভিত্তিহীন। পুলিশ কমিশনার সুধীরকুমার নীলকণ্ঠম বলেন, ‘‘নির্দিষ্ট কোনও অভিযোগ থাকলে তা লিখিত আকারে জানানো উচিত। অভিযোগ হাতে এলেই পদক্ষেপ করা হয়।’’
মঙ্গলবার রাতে মোটরবাইকে করে বাড়ি ফেরার পথে চিত্রা মোড়ের কাছে বালির ডাম্পারের ধাক্কায় মৃত্যু হয় বার্নপুরের নবঘণ্টির বাসিন্দা বিদেশ দেওঘরিয়া এবং পূর্ণিমা তালাওয়ের বাসিন্দা বিট্টু সিংহের। রক্তাক্ত অবস্থায় তাঁদের উদ্ধার করে আসানসোল জেলা হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার হলে মৃত ঘোষণা করেন চিকিৎসক। এর পর বুধবার সকালে ময়নাতদন্তের পর ওই দু’জনের দেহ হিরাপুর থানার সামনে এনে বিক্ষোভ দেখাতে থাকেন শাসক দলের কর্মীরা। বিক্ষোভে নেতৃত্ব দিতে দেখা যায় আসানসোল পুরসভার ৭৮ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর অশোক রুদ্রকে।
তৃণমূলের প্রাইমারি শিক্ষক সংগঠনের রাজ্য সভাপতি বলেন, ‘‘বালির ডাম্পার রাত ১০টার পর যাতে না যায় রাস্তা দিয়ে, তার জন্য বারবার পুলিশ ও জেলা প্রশাসনকে জানিয়েছিলাম। কিন্তু প্রশাসন আমাদের কথা শোনেনি বলেই দু’জন তরতাজা যুবকের প্রাণ গেল। মে মাসেও এই ভাবে দুর্ঘটনা ঘটেছে। এই বিবেকানন্দ সরণিতে কয়েক মাসের মধ্যে বেশ কয়েক জনের প্রাণ গেল এই বড় বড় ডাম্পার অনিয়ন্ত্রিত ভাবে চলার জন্য।’’
অশোকের আরও দাবি, অবৈধ ভাবে বালি পাচার নিয়ে প্রশাসনের দরজায় কড়া নাড়ার জন্য তাঁর একমাত্র নিরাপত্তারক্ষীকেও তুলে নেওয়া হয়েছে। তাঁর কথায়, ‘‘আমার এক জন নিরাপত্তারক্ষী ছিল। অবৈধ বালি পাচার নিয়ে বিভিন্ন সরকারি দফতরে চিঠি দেওয়ার জন্য পশ্চিম বর্ধমান জেলা প্রশাসন আমার নিরাপত্তা তুলে নিয়েছে। এক জন নিরাপত্তারক্ষী ছিল। তাঁকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে।’’ ওই দুই যুবকের পরিবারকে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার দাবি তোলেন বিক্ষোভকারীরা। সূত্রের খবর, নদীতে বালির ড্রেজিংয়ের দায়িত্বে যে সংস্থা ছিল, তাদের পক্ষ থেকে মৃতদের পরিবারকে ছ’লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণ দেওয়ার পরেই বিক্ষোভ তুলে নেওয়া হয়।
এই ঘটনা প্রসঙ্গে পুলিশ কমিশনার বলেন, ‘‘জেলা প্রশাসনের বিরুদ্ধে যে সব অভিযোগ উঠেছে, তা ভিত্তিহীন। নির্দিষ্ট অভিযোগ থাকলে লিখিত ভাবে জানানো উচিত। জুবলি মোড় দিয়ে গাড়ি আসা-যাওয়া নিয়ে কিছু সমস্যা রয়েছে। ইতিমধ্যেই ১০টা থেকে ৬টার বদলে রাত ১১টা থেকে ভোর ৫টা পর্যন্ত ভারী গাড়ি যাতায়াত করবে বলে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। বাকি সমস্যা নিয়ে জেলা প্রশাসনের সঙ্গে বৈঠক করা হবে।’’