অনুব্রত মণ্ডলের বিরুদ্ধে দেওয়া সিবিআইয়ের চার্জশিটে মৃত ব্যক্তির নাম। — ফাইল চিত্র।
গরু পাচার মামলায় সাক্ষী দেবেন এক জন মৃত ব্যক্তি! ওই মামলায় ধৃত বীরভূম জেলার তৃণমূল সভাপতি অনুব্রত মণ্ডলের বিরুদ্ধে গত ৭ অক্টোবর সিবিআই যে চার্জশিট জমা দিয়েছে, সেখানে সাক্ষী হিসাবে মাধব কৈবর্ত্য নামে এক জনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। তবে সাত মাস আগে সেই মাধবের মৃত্যু হয়েছে।
গরু পাচার মামলায় সিবিআইয়ের দেওয়া চার্জশিটে মোট ৯৫ জন সাক্ষীর একটি তালিকা রয়েছে। সেই তালিকায় ৫৮ নম্বরে নাম রয়েছে মাধবের। তিনি গরু পাচার মামলায় সিবিআইয়ের হাতে ধৃত সহগল হোসেনের বন্ধু। এই মাধবেরই গাড়ি দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয়েছে চলতি বছরের এপ্রিলে। পুলিশ জানিয়েছে, সহগলের পরিবারের সঙ্গে দুর্গাপুর থেকে বোলপুর ফেরার পথে তাঁদের গাড়ি দুর্ঘটনার কবলে পড়েছিল। সেই দুর্ঘটনার জেরে মৃত্যু হয় মাধব এবং সহগলের ছোট মেয়ের। সেই ঘটনার প্রায় সাত মাস পর গরুপাচার মামলার চার্জশিট দাখিল করেছে সিবিআই। তাতে সাক্ষী হিসেবে রয়েছে মাধবের নাম। যা চমকপ্রদ ঘটনা বলেই মনে করছেন অনেকে।
সিবিআই সূত্রে জানা গিয়েছে, মাধব কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থাকে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য এবং নথি সরবরাহ করেছিলেন। যা অনুব্রতের বিরুদ্ধে তদন্তে অত্যন্ত প্রাসঙ্গিক বলে তদন্তকারীদের ধারণা। অনুব্রতের প্রাক্তন দেহরক্ষী সহগল হোসেনের ঘনিষ্ঠ বন্ধু ছিলেন মাধব। তিনি বোলপুরের বাসিন্দা। তবে সিবিআইয়ের চার্জশিটে উল্লেখ রয়েছে, মাধবের বয়ান রেকর্ড করা হয়নি। তা সত্বেও কী করে তাঁকে এই মামলায় সাক্ষী করা হল, তা নিয়েই প্রশ্ন তুলছে পুলিশও। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক পুলিশকর্তার মতে, ‘‘সিবিআই বা পুলিশ কাউকে জেরা করলে সাক্ষী হিসাবে তাঁর বয়ান নিতে পারে। কিন্তু তিনি মারা গেলে চার্জশিটে সেই সাক্ষ্যের কোনও কোনও মূল্য নেই। তা দেওয়াও যায় না।’’
বিষয়টি নিয়ে আসানসোল আদালতের আইনজীবী সুব্রত দত্ত বলেন, ‘‘বয়ান রেকর্ড না হয়ে থাকলে সাক্ষী হিসাবে তাঁর নাম থাকার কথা নয়। কী হিসাবে সিবিআই সাক্ষী তালিকায় ওঁর নাম রেখেছে তা সাক্ষীদের নথি দেখলে বোঝা যাবে।’’
সুপ্রিয় হাজরা নামে আসানসোল আদালতের অন্য এক আইনজীবী বলেন, ‘‘জীবিত অবস্থায় যাঁর বয়ান রেকর্ড হয়েছে পরবর্তী কালে তাঁর মৃত্যু হলে শুনানি চলাকালীন তদন্তকারী আধিকারিক আদালতকে ওই বিষয়টি জানাবেন। তার পরেই তাঁর নাম চার্জশিট থেকে বাদ যাবে। এখন দেখতে হবে সিবিআই কী হিসাবে তাঁর নাম রেখেছে। চার্জশিটের পুরো কপি না দেখলে সঠিক তথ্য বলা সম্ভব নয়।’’