গ্রাফিক: আনন্দবাজার অনলাইন।
পুলিশ নাকচ করে দিলেও হাই কোর্টের নির্দেশে ধর্মতলায় অবস্থান-বিক্ষোভ শুরু করেছে চিকিৎসকদের যৌথ মঞ্চ। শুক্রবার বিচারপতি তীর্থঙ্কর ঘোষের নির্দেশের পরেই কর্মসূচি শুরু হয়েছে। কিন্তু ওই দিনই সিঙ্গল বেঞ্চের নির্দেশের বিরোধিতা করে প্রধান বিচারপতির এজলাসে মামলার আবেদন জানিয়েছিল রাজ্য। সোমবার বিচারপতি হরিশ টন্ডন ও বিচারপতি হিরণ্ময় ভট্টাচার্যের ডিভিশন বেঞ্চে সেই মামলার শুনানি হয়। তাতে রাজ্যের আবেদন খারিজ করে সিঙ্গল বেঞ্চের নির্দেশই বহাল রাখল হাই কোর্টের ডিভিশন বেঞ্চ। তবে অবস্থান বিক্ষোভে ২০০-২৫০ জন উপস্থিত থাকার সংখ্যা কমিয়ে ১০০ করার নির্দেশ দিয়েছে ডিভিশন বেঞ্চ।
এ দিন আর জি করের চিকিৎসক-পড়ুয়ার খুন ও ধর্ষণের ঘটনার প্রেক্ষিতে শহরের বিভিন্ন প্রান্তে একাধিক প্রতিবাদ কর্মসূচি পালিত হয়। সিজিও কমপ্লেক্স অভিযান করে ইন্ডিয়ান মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশন (আইএমএ)-এর রাজ্য শাখা। শ্যামবাজারে নাগরিক কনভেনশনের আয়োজন করেছিল ‘মেডিক্যাল সার্ভিস সেন্টার’, ‘সার্ভিস ডক্টর্স ফোরাম’ ও ‘নার্সেস ইউনিটি’-সহ বহু সামাজিক সংগঠন। আবার সুবোধ মল্লিক স্কোয়ার থেকে ধর্মতলার অবস্থান মঞ্চ পর্যন্ত প্রতিবাদ মিছিল করে একাধিক নাগরিক সংগঠন। উৎসবের আনন্দে সব কিছু ভুলে না গিয়ে ন্যায়বিচারের দাবিতে নতুন বছরে আন্দোলনকে আরও তীব্র করার আহ্বান জানানো হয় প্রত্যেকটি কর্মসূচি থেকেই।
আর জি করের ঘটনার প্রতিবাদে ধর্মতলার ডোরিনা ক্রসিংয়ে অবস্থান-বিক্ষোভ চালাচ্ছে ‘ওয়েস্ট বেঙ্গল জয়েন্ট প্ল্যাটফর্ম অব ডক্টর্স’ ও ‘অভয়া মঞ্চ’। পুলিশের অনুমতি না মেলায় হাই কোর্টের দ্বারস্থ হয়েছিল চিকিৎসকদের ওই যৌথ মঞ্চ। সেই মামলার শুনানিতে অস্থায়ী মঞ্চ তৈরি করে অবস্থান-বিক্ষোভ করার জায়গার মাপ, জমায়েতের লোক সংখ্যা নির্দিষ্ট করে দিয়ে কর্মসূচি পালনে অনুমতি দিয়েছিল হাই কোর্ট। চিকিৎসকদের যৌথ মঞ্চের তরফে দাবি করা হয়েছে, তাঁরা আদালতের নির্দেশের বাইরে কোনও কিছু করছেন না। কিন্তু তার পরেও সিঙ্গল বেঞ্চের নির্দেশকে চ্যালেঞ্জ করে রাজ্যের ডিভিশন বেঞ্চে যাওয়ার প্রসঙ্গে অবস্থানের আয়োজক চিকিৎসকদের অনেকেই প্রশ্ন তুলেছেন, ‘‘রাজ্য প্রশাসন কেন বার বার ন্যায় বিচারের আন্দোলনকে রুখে দেওয়ার চেষ্টা করছে? কাকে আড়াল করতে এত প্রচেষ্টা?’’
এ দিন রাজ্যের আইনজীবী কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় আদালতে অভিযোগ করেন, রাজ্য প্রশাসনের আপত্তি থাকা সত্ত্বেও সিঙ্গল বেঞ্চ অবস্থানের অনুমতি দিয়েছে। তাঁর আরও অভিযোগ, চিকিৎসকদের সংগঠনের আবেদনপত্রে ১০০ জন অংশগ্রহণকারীর কথা বলা থাকলেও ২০০-২৫০ জনের অনুমতি দিয়েছে সিঙ্গল বেঞ্চ। কল্যাণ জানান, বড়দিন ও নতুন বছর উপলক্ষে বহু মানুষ শহরে আসেন। এই সময়ে ডোরিনা ক্রসিংয়ের মতো ব্যস্ত ও গুরুত্বপূর্ণ সংযোগ স্থলে অবস্থান কর্মসূচির ফলে যানবাহন চলাচল বিঘ্নিত হবে এবং শহরে আসা সাধারণ মানুষকে যানজটের কবলে পড়তে হবে। কল্যাণ দাবি করেন, রাজ্যের প্রশাসনিক ক্ষমতায় হস্তক্ষেপ করতে পারে না আদালত। প্রশাসনের কাজকর্ম ও আদালতের নির্দেশের মধ্যে একটা ভারসাম্য থাকা উচিত। তাই আইনশৃঙ্খলা বজায় রাখতে সিঙ্গল বেঞ্চের নির্দেশের উপর স্থগিতাদেশ দেওয়ার আর্জি জানান রাজ্যের আইনজীবী।
পাল্টা চিকিৎসকদের যৌথ মঞ্চের আইনজীবী বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য দাবি করেন, ওই কর্মসূচির ফলে যানজটের সমস্যা হচ্ছে না। তাঁর অভিযোগ, ধর্নাস্থলের জায়গা ব্যারিকেড করে রেখেছে পুলিশ। বিকাশ আরও জানান, বড়দিন উপলক্ষে মানুষ পার্ক স্ট্রিট চত্বরে ভিড় করেন, ডোরিনা ক্রসিংয়ে নয়। তাই রাজ্যের বিরোধিতার পর্যাপ্ত যুক্তি নেই। শান্তিপূর্ণ অবস্থান করা নাগরিকদের মৌলিক অধিকার এবং রাজ্য সেই অধিকার খর্ব করতে পারে না বলেও দাবি করেন বিকাশ। উভয় পক্ষের বক্তব্য শুনে ডিভিশন বেঞ্চ রাজ্যের আবেদন খারিজ করে। তবে ২৫ ডিসেম্বর ধর্না মুলতুবি করে ২৭ ডিসেম্বর করার জন্য চিকিৎসক সংগঠনকে বিবেচনা করতে বলে ডিভিশন বেঞ্চ। চিকিৎসকেদের তরফের আর এক আইনজীবী শামিম আহমেদ জানান, দিবারাত্রি কর্মসূচির কোনও পরিবর্তন করা সম্ভব নয়। এর পরেই সদস্য সংখ্যা কমিয়ে ও আইনশৃঙ্খলা বজায় রেখে কর্মসূচি চালিয়ে যাওয়ার অনুমতি দেওয়া হয়।