অমরনাথ চট্টোপাধ্যায় এবং বিজেপি কাউন্সিলর চৈতালি তিওয়ারি
বাম আমলের মার্কেটিং কমপ্লেক্স তৈরির পরিকল্পনা বাস্তবায়িত করতে গিয়ে বিতর্কে জড়াল আসানসোল পুরনিগম। টেন্ডার না ডেকেই পুরনিগমের নিজস্ব জমি ওই মার্কেটিং কমপ্লেক্স তৈরির জন্য একটি বেসরকারি সংস্থার হাতে তুলে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে পুরবোর্ডের চেয়ারম্যান অমরনাথ চট্টোপাধ্যায়। তিনিই পছন্দের সংস্থার হাতে মার্কেটিং কমপ্লেক্স তৈরির বরাত তুলে দিচ্ছেন— বিরোধীদের এই অভিযোগ ঘিরে সরগরম শিল্প-শহরের রাজনীতি। যদিও এই অভিযোগ সম্পূর্ণ অস্বীকার করেছেন অমরনাথ।
১৯৯৬ সালে তৎকালীন রানিগঞ্জ পুরসভা একটি বেসরকারি সংস্থাকে জমি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় মার্কেটিং কমপ্লেক্স তৈরির জন্য। রানিগঞ্জ শিশু বাগানে ৬০ নম্বর জাতীয় সড়কের ধারে ছিল সেই জমি। রাজ্যে পালাবদলের পর ২০১৫ সালে আসানসোল পুরনিগমের সঙ্গে জুড়ে হয়ে যায় রানিগঞ্জ পুরসভা। সম্প্রতি আসানসোল পুরনিগম ফের ওই মার্কেটিং কমপ্লেক্স তৈরির সিদ্ধান্ত নেয়। কিন্তু বাম আমলে যে বেসরকারি সংস্থাকে জমি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল, বর্তমান পুরবোর্ড সেই সংস্থাকে জমি দিতে অস্বীকার করায় তারা আদালতে মামলা দায়ের করে। পরে আদালত এই জট নিজেদের মধ্যে মিটমাট করে নেওয়ার নির্দেশ দেয়। বিরোধীদের অভিযোগ, আদালতের ওই নির্দেশের পরেই বর্তমান পুরবোর্ড এবং ওই বেসরকারি সংস্থা নিজেদের মধ্যে বৈঠক করে পুরনিগমের জমি অন্য একটি সংস্থার হাতে তুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়।
বিরোধীদের দাবি, জুন মাসে পুরবোর্ডের বৈঠকে ওই সিদ্ধান্ত সংক্রান্ত বিল পাশ করানো হয়। বিজেপি কাউন্সিলর চৈতালি তিওয়ারি সম্প্রতি একটি ফেসবুক পোস্টে দাবি করেন, টেন্ডার ছাড়াই আসানসোল পুরনিগমের ১০০ কোটির সম্পত্তি এক ব্যবসায়ীর হাতে তুলে দেওয়া হচ্ছে। তিনি লেখেন, ‘রানিগঞ্জে অবস্থিত ব্লু চিপ প্রজেক্ট প্রাইভেট লিমিটেড এবং আসানসোল পুরনিগমের ১০০ কোটি টাকার সম্পত্তি বিনা টেন্ডারে তুলে দেওয়া হচ্ছে এক ব্যবসায়ীকে। মাস্টার মাইন্ড— পুরনিগমের প্রাক্তন প্রশাসক ও বর্তমান চেয়ারম্যান অমরনাথ চট্টোপাধ্যায়।’
এ বিষয়ে আসানসোলের মেয়র বিধান উপাধ্যায়ের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন চৈতালি। তাঁর কথায়, ‘‘ভাল মেয়রের সুযোগ নিয়ে আসানসোল পুরনিগমে একের পর এক দুর্নীতি হচ্ছে। আমরা যত দিন আছি, এ ভাবেই দুর্নীতির বিরুদ্ধে সরব হব।’’
এ বিষয়ে রাজ্যের মুখ্যসচিবকে একটি চিঠি দিয়েছেন বলেও জানান পুরনিগমের কংগ্রেস কাউন্সিলর গোলাম সরোবর। তিনি বলেন, ‘‘অবশ্যই টেন্ডার ডাকতে হবে। পুরনিগমের যাতে বেশি লাভ হয়, সেটা করতে হবে।’’
সরাসরি তাঁর নামে করে অভিযোগ ওঠায় মুখ খুলেছেন অমরনাথ। তিনি বলেন, ‘‘এখনও কোনও চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি। সামনের বোর্ড মিটিংয়ে সিদ্ধান্ত হবে। আমি একা সিদ্ধান্ত নেওয়ার কেউ নই। কারণ আমি চেয়ারম্যান। বোর্ড মিটিংয়ে সকলের মতামত নিয়েই সিদ্ধান্ত হবে। সেই সিদ্ধান্তের কথা আবার কোর্টকেও জানিয়ে দেওয়া হবে।’’