ফাইল চিত্র।
রাজ্য সরকারের সংস্থা ‘দুর্গাপুর প্রজেক্টস লিমিটেড’ (ডিপিএল)-এর স্বেচ্ছাবসর প্রকল্প নিয়ে নতুন করে তৎপরতা শুরু হয়েছে। বিদ্যুৎ দফতর সূত্রে খবর, অর্থ দফতরের সঙ্গে পরামর্শ করে প্রস্তাব চূড়ান্ত করে তা ক্যাবিনেটে অনুমোদনের জন্য পাঠানো হয়েছে। তা অনুমোদিত হলে সরকারি নির্দেশিকা (জিও) জারি করা হবে।
বিদ্যুৎ দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, আপাতত ৫৫ বছরের ঊর্ধ্বে থাকা ১৫০ জন কর্মী সংখ্যা কমানোর লক্ষ্যমাত্রা নেওয়া হয়েছে। এর ফলে ওই কর্মীদের জন্য মাথা পিছু গড়ে ৪৮ লক্ষ ৭২ হাজার টাকা বাঁচবে ১৯৬০-এ তৈরি ডিপিএল-এর। বিদ্যুৎ দফতরের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক আধিকারিক বলেন, “ইতিমধ্যেই স্বেচ্ছাবসর প্রকল্পের জন্য নির্দিষ্ট ‘আর্থিক প্যাকেজ’ অর্থ দফতর অনুমোদন করে দিয়েছে। এখন শুধু ক্যাবিনেটের অনুমোদনের অপেক্ষায়।”
বছরে গড়ে দু’শো কোটি টাকা হারে লোকসানের দায় ছিল সংস্থার ঘাড়ে। তাছাড়া সুদ-আসল মিলিয়ে দেনা বাকি ছিল, প্রায় সাড়ে তিন হাজার কোটি টাকা। এই পরিস্থিতিতে রুগ্ণ ডিপিএল-কে বাঁচাতে ২০১৯-এর ১ জানুয়ারি থেকে ডিপিএল-এর মালিকানা চলে যায় পশ্চিমবঙ্গ বিদ্যুৎ উন্নয়ন নিগমের হাতে। বর্তমানে ৩০০ ও ২৫০ মেগাওয়াটের দু’টি ইউনিট চালু আছে।
সংস্থার পুনর্গঠনে কর্মী সংখ্যা কমাতে স্বেচ্ছাবসর প্রকল্প চালু করা হয় ২০১৮-র ৩০ নভেম্বর। ২০১৯-এর ১ জানুয়ারি যাঁদের বয়স কমপক্ষে ৪৫ বছর এবং সর্বোচ্চ ৫৮ বছর, তাঁদের এই প্রকল্পের আওতায় আনা হয়। শর্ত ছিল, অবসরের পরে নতুন করে আর কোনও সরকারি সংস্থায় চাকরি করা যাবে না। তিন মাসের মধ্যে তিন ধাপে প্রাপ্য মিটিয়ে দেওয়া হবে এবং অবসরের দু’মাসের মধ্যে আবাসন ছেড়ে দিতে হবে। আর্থিক প্যাকেজ নিয়ে আপত্তি জানিয়ে মাত্র ১২ জন ছাড়া অন্য কর্মীরা কেউই স্বেচ্ছাবসর প্রকল্পে সাড়া দেননি। অরূপ বিশ্বাস বিদ্যুৎমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব নিয়ে ২০২১-এর জুনে এক বৈঠকে স্বেচ্ছাবসর প্রকল্পকে আরও আকর্ষণীয় করার নির্দেশ দেন। এত দিনে সেই নতুন প্রস্তাবই চূড়ান্ত হয়েছে বলে বিদ্যুৎ দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে।
কিন্তু নতুন স্বেচ্ছাবসর প্রকল্প নিয়ে কটাক্ষ করছেন বিরোধীরা। সিপিএমের জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য পঙ্কজ রায় সরকার বলেন, “বর্তমান রাজ্য সরকারের কাছে কোনও সংস্থার পুনর্গঠনের মানে হল শ্রমিক-সঙ্কোচন! সময়ে অবসর নেওয়া কর্মীদেরই এখনও অনেকে গ্র্যাচুইটি ও অন্য বকেয়া পাননি। সেখানে স্বেচ্ছাবসর প্রকল্পে যোগ দেওয়ার সাহস কী ভাবে পাবেন কর্মীরা?” বিজেপির আসানসোল সাংগঠনিক জেলার সহ-সভাপতি তথা কাউন্সিলর চন্দ্রশেখর বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “বাম আমলে ডিপিএল-এর পতন শুরু হয়েছিল। এই আমলে কফিনে শেষ পেরেক পোঁতার কাজ চলছে।” দুর্গাপুরের তৃণমূল নেতা উত্তম মুখোপাধ্যায় অবশ্য বলেন, “মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উদ্যোগে পরিকল্পনা অনুযায়ী ডিপিএল-কে ঘুরিয়ে দাঁড় করানোর প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। বিরোধীদের ভিত্তিহীন কথাবার্তার কোনও গুরুত্ব নেই।”