ট্রাক্টরের এই ট্রলিতেই ধাক্কা দেয় ট্রাক। মেমারিতে। নিজস্ব চিত্র।
বিয়ের পরে, নবদম্পতিকে নিয়ে বাড়ি ফেরার পথে দুর্ঘটনায় মৃত্যু হল নাবালক ছেলে-সহ এক মহিলা ও এক কিশোরীর। আহত হয়েছেন চার শিশু-সহ ১১ জন। বৃহস্পতিবার সকালে দুর্ঘটনাটি ঘটে পূর্ব বর্ধমানের মেমারির পলতা গ্রামের কাছে দেবীপুর-কালনা রোডে। পুলিশ জানিয়েছে, আহতদের মধ্যে এক-শিশু সহ চার জন বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল ও অনাময় সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। দুর্ঘটনায় জখম হয়েছেন নবদম্পতিও। তাঁরা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের পর্যবেক্ষণ ওয়ার্ডে ভর্তি রয়েছেন।
পুলিশ জানিয়েছে, মৃত রূপালি বাস্কে (৪২), তাঁর সাত বছরের ছেলে রাজদীপ বাস্কে এবং লক্ষ্মী মান্ডি (১৫) নামে ওই কিশোরীর বাড়ি হুগলির পাণ্ডুয়ার পয়রা গ্রামের চাঁদাইপাড়ায়। পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, ট্রাক্টরের ট্রলিতে চড়ে যাচ্ছিলেন অনেকে। একটি ট্রাকের ধাক্কায় ট্রলিটি উল্টে যায় কালভার্টে। কালভার্টের ধারে থাকা ছোট-ছোট থামের উপরে পড়েন যাত্রীরা। তাতেই অনেকে হাত-পা-মাথায় চোট পান। ঘটনাস্থলেই রূপালিদেবীর মৃত্যু হয়। বর্ধমানে নিয়ে যাওয়ার পথে বাকি দু’জনের মৃত্যু হয়। পুলিশ জানায়, ট্রাক ও ট্রলি-সমেত ট্রাক্টরটি আটক করা হয়েছে। ট্রাকের চালক ঘুমে আচ্ছন্ন হয়ে পড়ার ফলেই দুর্ঘটনাটি ঘটেছে বলে পুলিশের প্রাথমিক অনুমান।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, বুধবার রাতে মেমারির মাচ্ছার-মাইনগর গ্রামের বাসিন্দা সত্যজিৎ মান্ডির সঙ্গে পাণ্ডুয়ার অনিতা হেমব্রমের বিয়ে হয়। পাণ্ডুয়া থেকে দু’টি ট্রলি-সহ ট্রাক্টরে মেয়েকে নিয়ে জনা ষাটেক বাসিন্দা পাত্রের বাড়িতে যান। সেখানে বিয়ের পরে, বৃহস্পতিবার ভোর সাড়ে ৫টা নাগাদ গ্রাম থেকে বেরিয়ে পড়েন। আধ ঘণ্টা পরেই দুর্ঘটনাটি ঘটে।
সদ্য মেয়েকে হারিয়ে কার্যত হতবাক হয়ে পড়েছেন লক্ষ্মীর বাবা সুখলাল মান্ডি। এ দিন বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজে ময়না-তদন্তের ঘরের সামনে দাঁড়িয়ে তিনি বলেন, ‘‘আমি ওই ট্রলিতেই ছিলাম। একটা ট্রাক হঠাৎ ট্রলির পেটে ধাক্কা মারল। অন্যদের সঙ্গে আমার মেয়েও পড়ে গেল। রাস্তার ধারে থাকা পিলারে চোট পেল। বর্ধমানে নিয়ে আসার পথে কোলেই মারা গিয়েছে!’’ লক্ষ্মী স্থানীয় স্কুলে অষ্টম শ্রেণিতে পড়ত। অনাময় হাসপাতালে চিকিৎসাধীন সরলা কিস্কু, ডুমি মান্ডিদের দাবি, ‘‘আমাদের ট্রাক্টরটা আস্তেই যাচ্ছিল। উল্টো দিক থেকে একটি ট্রাকে টলতে-টলতে আসছিল। তা দেখে ট্রাক্টর চালক ভয়ে দাঁড়িয়ে পড়েন। তার পরেও ট্রাকটা গোঁত্তা খেয়ে ট্রলিতে ধাক্কা মারে। আমাদের আর কিছু মনে নেই।’’ প্রত্যক্ষদর্শীদের দাবি, ট্রাক্টরের ট্রলিটি রাস্তার উপরে উল্টে যায়। আশপাশের লোকজন ছুটে গিয়ে যাত্রীদের উদ্ধার করে। মেমারি থানার পুলিশ আহতদের মেমারি ও বর্ধমানে পাঠানোর ব্যবস্থা করে।
প্রত্যক্ষদর্শীদের একাংশের দাবি, রূপালির কোলেই ছিল তাঁর ছেলেমেয়ে। ট্রলিটি উল্টোতেই তাঁরা ছিটকে রাস্তায় পড়েন। পিছনের গাড়িতেই আসছিলেন রূপালিদেবীর স্বামী মঙ্গল বাস্কে। তিনি ছেলেমেয়েকে বর্ধমানের অনাময় হাসপাতালে নিয়ে আসার সময়ে ছেলেটির মৃত্যু হয়। মেয়ে আশঙ্কাজনক অবস্থায় বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি। মঙ্গলবাবুর ভাই রূপচাঁদ বাস্কে বলেন, ‘‘দাদাকে সামলানো যাচ্ছে না। ভাইঝির অবস্থা আশঙ্কাজনক। কী হবে, ভেবে উঠতে পারছি না!’’
বৃহস্পতি ও শুক্রবার নতুন দম্পতির জন্য রীতি মেনে একাধিক অনুষ্ঠানের আয়োজন হয়েছিল পয়রা গ্রামের চাঁদাইপাড়ায়। সে সব অনুষ্ঠান বাতিল করা হয়েছে বলে পরিজনেরা জানান। তাঁদেরই এক জনের কথায়, “বর-কনেও আহত। পরিবারে এত বড় বিপর্যয়ের পরে, কী কোনও অনুষ্ঠান সম্ভব!’’