F-35 Lighting II Vs Su-57 Felon

যুক্তরাষ্ট্রের ‘এফ-৩৫’? রুশ ‘এসইউ-৫৭’? বায়ুসেনার ‘পাওয়ার-বুস্টিংয়ে’ নজরে কোন লড়াকু বিমান?

উদ্দেশ্য যুদ্ধবিমানের সংখ্যা বাড়ানো। তাই বিদেশ থেকে পঞ্চম প্রজন্মের লড়াকু বিমান আমদানির চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছে নয়াদিল্লি। আমেরিকার ‘এফ-৩৫ লাইটনিং টু’ না কি রাশিয়ার তৈরি ‘এসইউ-৫৭ ফেলন’— পঞ্চম প্রজন্মের কোন যুদ্ধবিমান হাতে পেতে শেষ পর্যন্ত ঝাঁপাবে নরেন্দ্র মোদী সরকার?

Advertisement
আনন্দবাজার অনলাইন ডেস্ক
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৬ ডিসেম্বর ২০২৪ ০৯:৫৫
Share:
০১ ১৭

লড়াইয়ের রং বদলাতে চাই পঞ্চম প্রজন্মের যুদ্ধবিমান। চোখের সামনে রয়েছে দু’টি বিকল্প। আমেরিকা না রাশিয়া, শেষ পর্যন্ত কোন দেশের লড়াকু বিমান ভারতীয় বায়ুবীরদের হাতে তুলে দেবে কেন্দ্র? বছরশেষে এই নিয়েই তুঙ্গে উঠেছে জল্পনা। তবে চূড়ান্ত সিদ্ধান্তের ব্যাপারে মুখে রা কাড়েনি প্রতিরক্ষা মন্ত্রক।

০২ ১৭

যুক্তরাষ্ট্রের তৈরি ‘এফ-৩৫ লাইটনিং টু’ এবং রুশ নির্মিত ‘এসইউ-৫৭ ফেলন’। বর্তমানে পঞ্চম প্রজন্মের এই দুই যুদ্ধবিমানকে পাখির চোখ করেছে ভারতীয় বায়ুসেনা। সূত্রের খবর, লড়াকু উড়ানের স্বল্পতা মেটাতে দু’টির মধ্যে যে কোনও একটিকে বেছে নেবে প্রতিরক্ষা মন্ত্রক। দ্রুত মস্কো বা ওয়াশিংটনের সঙ্গে এগুলি কেনার ব্যাপারে হবে চুক্তি।

Advertisement
০৩ ১৭

এখন প্রশ্ন হল, দু’টির মধ্যে কোন যুদ্ধবিমান হতে চলেছে ভারতীয় বায়ুসেনার প্রথম পছন্দ? বিশেষজ্ঞদের কথায়, সে ক্ষেত্রে বেশ কয়েকটি বিষয়ের উপর ভিত্তি করে নিজেদের সর্বশেষ মতামত জানাবেন বায়ুসেনার পদস্থ কর্তারা। দীর্ঘমেয়াদি প্রযুক্তিগত সমস্যার দিকটি নিয়ে সবচেয়ে বেশি চিন্তাভাবনা করতে হবে তাঁদের।

০৪ ১৭

২০১৪ সালে ক্ষমতায় আসার পর থেকেই ঘরের মাটিতে উন্নত হাতিয়ার তৈরির উপর জোর দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। ফলে বর্তমানে বিদেশ থেকে অস্ত্র আমদানির ক্ষেত্রে প্রযুক্তি হস্তান্তরের শর্ত রাখছে কেন্দ্র। আর সেই নিরিখে রুশ ‘এসইউ-৫৭ ফেলন’-এর পাল্লা সামান্য ভারী বলে মনে করছেন প্রতিরক্ষা বিশেষজ্ঞেরা।

০৫ ১৭

সূত্রের খবর, আগামী বছরের (পড়ুন ২০২৫) জানুয়ারিতে ভারতে আসবেন রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। তাঁর এই সফরের মধ্যেই মস্কোর সঙ্গে ‘এসইউ-৫৭ ফেলন’ যুদ্ধবিমান নিয়ে প্রতিরক্ষা চুক্তি সেরে ফেলতে পারে নয়াদিল্লি। এর প্রযুক্তি হস্তান্তরের ব্যাপারে কোনও সমস্যা নেই বলে ইতিমধ্যেই স্পষ্ট করেছে ক্রেমলিন।

০৬ ১৭

‘এসইউ-৫৭’র মূল নির্মাণকারী সংস্থা হল ‘ইউনাইটেড এয়ারক্র্যাফ্‌ট কর্পোরেশন’। তবে স্টেলথ ক্যাটেগরির দুই ইঞ্জিন বিশিষ্ট এই যুদ্ধবিমানের নকশা তৈরি করেছে বিখ্যাত রুশ লড়াকু বিমান কোম্পানি ‘সুখোই’। ২০২০ সালের ডিসেম্বর থেকে এই যুদ্ধবিমান ব্যবহার করে আসছে রুশ বায়ুসেনা।

০৭ ১৭

স্টেলথ ক্যাটেগরির হওয়ায় ‘এসইউ-৫৭’কে রাডারে চিহ্নিত করা বেশ কঠিন। মাঝ আকাশে অন্য লড়াকু বিমানের সঙ্গে ‘ডগফাইট’ হোক বা আকাশপথে আক্রমণ শানিয়ে মাটির উপরে থাকা শত্রুঘাঁটি গুঁড়িয়ে দেওয়া, সবতেই এই যুদ্ধবিমানের জুড়ি মেলা ভার। এ ছাড়া ‘ইলেকট্রনিক যুদ্ধ’-এর সুবিধাও পাবেন ‘এসইউ ৫৭’-এর যোদ্ধা পাইলট।

০৮ ১৭

ভারতীয় বায়ুসেনা দীর্ঘ দিন ধরেই এই সংস্থার তৈরি ‘এসইউ-৩০এমকেআই’ নামের যুদ্ধবিমান ব্যবহার করে আসছে। এককথায়, সুখোইয়ের সঙ্গে এ দেশের ফাইটার পাইলটদের আত্মার সম্পর্ক রয়েছে। প্রতিরক্ষা বিশেষজ্ঞদের কথায়, ‘এসইউ-৫৭’ থেকে রুশ ক্ষেপণাস্ত্রের পাশাপাশি দেশীয় প্রযুক্তিতে তৈরি নানা মারণাস্ত্র ব্যবহারের সুযোগ থাকছে। এর মধ্যে অন্যতম হল ‘ব্রহ্মস’ এবং প্রতিরক্ষা গবেষণা সংস্থা ‘ডিআরডিও’-র তৈরি ‘অস্ত্র’ নামের ক্ষেপণাস্ত্র।

০৯ ১৭

কিন্তু, ‘এসইউ-৫৭’ যুদ্ধবিমানের বেশ কিছু নেতিবাচক দিকও রয়েছে। ২০২২ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি থেকে ইউক্রেনে বিশেষ সেনা অভিযান চালাচ্ছে রাশিয়া। দু’বছর পেরিয়ে পূর্ব ইউরোপে চলা যুদ্ধ থেমে যাওয়ার নামগন্ধ নেই। শুধু তা-ই নয়, এই লড়াইয়ে আমেরিকার নেতৃত্বাধীন ‘নেটো’ভুক্ত দেশগুলির জড়িয়ে পড়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

১০ ১৭

ফলে মস্কোর সঙ্গে প্রতিরক্ষা চুক্তি করলে এই যুদ্ধবিমান আদৌ সময় মতো হাতে পাওয়া যাবে কি না, তা নিয়ে প্রশ্ন থেকে যাচ্ছে। ২০১৮ সালের অক্টোবরে রাশিয়ার সঙ্গে ‘এস-৪০০ ট্রায়াম্ফ’ আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা (এয়ার ডিফেন্স সিস্টেম) কেনার চুক্তি করে নয়াদিল্লি। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে এই হাতিয়ারের সব ক’টি ইউনিট সরবরাহ করতে পারেনি ক্রেমলিন।

১১ ১৭

আর সেই কারণেই আমেরিকার তৈরি পঞ্চম প্রজন্মের ‘এফ-৩৫ লাইটনিং টু’ লড়াকু বিমানের কথা ভেবে রেখেছেন বায়ুসেনার পদস্থ কর্তারা। যুক্তরাষ্ট্রের বিখ্যাত সংস্থা ‘লকহিড মার্টিন’-র তৈরি এই যুদ্ধবিমান ইতিমধ্যেই তার ক্ষমতা দেখিয়েছে পশ্চিম এশিয়ার যুদ্ধে। ইরান, লেবানন হোক বা সিরিয়া, গত কয়েক মাসে শত্রু সংহারে বার বার ‘এফ-৩৫ লাইটনিং’ নিয়ে উড়তে দেখা গিয়েছে ইজ়রায়েল ডিফেন্স ফোর্সের (আইডিএফ) লড়াকু পাইলটদের।

১২ ১৭

পঞ্চম প্রজন্মের হলেও ‘এফ-৩৫’ আবার এক ইঞ্জিনবিশিষ্ট যুদ্ধবিমান। আক্রমণের পাশাপাশি ইলেকট্রনিক যুদ্ধ থেকে শুরু করে নজরদারি— একাধিক কাজে একে ব্যবহার করার সুযোগ রয়েছে। ছোট রানওয়ে দিয়ে দিব্যি একে আকাশে ওড়ানো যায়। এতে রয়েছে ভার্টিক্যাল ল্যান্ডিং বা উল্লম্ব ভাবে নীচে নেমে আসার সুবিধা। অর্থাৎ, রানওয়ে ছাড়াই লড়াকু বিমানটিকে মাটিতে নামাতে পারবেন পাইলট।

১৩ ১৭

‘এফ-৩৫ লাইটনিং টু’র প্রতিরক্ষা চুক্তির প্রথম বাধা হল, প্রযুক্তি হস্তান্তর। এ ব্যাপারে এখনও কোনও সবুজ সঙ্কেত দেয়নি আমেরিকা। দ্বিতীয়ত, এই যুদ্ধবিমানের রক্ষণাবেক্ষণের খরচ যথেষ্ট বেশি। ফলে নিজেদের পছন্দের কথা জানানোর ক্ষেত্রে এ সব দিক মাথায় রাখতে হচ্ছে ভারতীয় বায়ুসেনাকে।

১৪ ১৭

দু’টি লড়াকু বিমানের ক্ষেত্রেই দাম নিয়ে কোনও চূড়ান্ত কথাবার্তা হয়নি। সূত্রের খবর, রাশিয়ার তরফে ‘এসইউ ৫৭’-এর দাম কমানোর প্রস্তাব পেয়েছে নয়াদিল্লি। অন্য দিকে সরসারি না-হলেও ঘুরপথে একই রকমের প্রস্তাব দিয়ে রেখেছে ওয়াশিংটনও।

১৫ ১৭

বিদেশ থেকে যুদ্ধবিমান আমদানির পাশাপাশি দেশীয় প্রযুক্তিতে লড়াকু বিমান তৈরির উপর জোর দিয়েছে নয়াদিল্লি। আগামী দু’-তিন বছরের মধ্যে ‘তেজস মার্ক টু’ এবং ‘অ্যাডভান্স মিডিয়াম কমব্যাট এয়ারক্রাফ্‌ট’ বা অ্যামকার নির্মাণকাজ শেষ করতে চাইছে প্রতিরক্ষা মন্ত্রক। এই দুই যুদ্ধবিমানের জন্য বিদেশ থেকে জেট ইঞ্জিন আমদানি করা হয়েছে।

১৬ ১৭

বায়ুসেনা সূত্রে খবর, ২০২৯-’৩০ সালের মধ্যে ‘তেজস মার্ক টু’ ফাইটার জেট হাতে পাবেন তাঁরা। এই যুদ্ধবিমানকে আরও শক্তিশালী করতে সম্প্রতি এর নকশায় সামান্য কিছু বদল করা হয়েছে। অন্য দিকে ৫.৫ প্রজন্মের স্টেলথ ক্যাটেগরির লড়াকু বিমান অ্যামকার জন্য অপেক্ষা করতে হবে ২০৩৫ সাল পর্যন্ত। দু’টি যুদ্ধবিমানেরই নির্মাণকারী সংস্থা ‘হিন্দুস্তান অ্যারোনটিক্স লিমিটেড’ বা হ্যাল।

১৭ ১৭

বর্তমানে পর্যাপ্ত যুদ্ধবিমানের অভাবে ভুগছে ভারতীয় বায়ুসেনা। এই পরিস্থিতিতে ‘এফ-৩৫ লাইটনিং টু’ এবং ‘এসইউ ৫৭ ফেলন’-এর মধ্যে কোনটিকে নিয়ে শেষ পর্যন্ত প্রতিরক্ষা চুক্তি হয়, সে দিকে তাকিয়ে রয়েছে গোটা দেশ। সম্প্রতি সেনার আধুনিকীকরণে ব্যয়বরাদ্দ বাড়িয়েছেন অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন। ফলে বাজেট বাড়িয়ে দু’টি বিমানই কেনার দিকে ঝুঁকতে পারে প্রতিরক্ষা মন্ত্রক।

সব ছবি: সংগৃহীত।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
Follow us on:
আরও গ্যালারি
Advertisement