বিধাননগর পুলিশ ফোন ট্র্যাক করছিল সত্যেন্দ্রের। নিজস্ব চিত্র।
লোডশেডিংয়েই কপাল পুড়ল সত্যেন্দ্রর। তা না হলে এ বারও বাগুইআটি জোড়া খুনের মামলার মূল অভিযুক্ত সত্যেন্দ্র চৌধুরি পুলিশকে ফাঁকি দেওয়ার ছক কষে ফেলেছিলেন। ট্রেনের টিকিট কেটে অন্য রাজ্যে পালিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা প্রায় গুটিয়েই এনেছিলেন। কিন্তু শেষ মুহূর্তে কারেন্ট চলে গিয়ে ভন্ডুল হয়ে যায় তাঁর সমস্ত পরিকল্পনা। কারেন্টের জন্য অপেক্ষারত সত্যেন্দ্রকে ধরার অনেকটা সময় পেয়ে যায় পুলিশ।
সময়ই ছিল না সত্যেন্দ্রের হাতে। হাওড়া স্টেশনের উল্টো দিকে একটি বেসরকারি টিকিট বুকিং কাউন্টার থেকে গ্রেফতার করা হয় জোড়া খুনের অভিযুক্তকে। ওই বুকিং কাউন্টারগুলি চালান বেসরকারি ট্রাভেল এজেন্টরা। সত্যেন্দ্র সেখানে গিয়েছিলেন দূরপাল্লার ট্রেনের টিকিট কাটতে। টিকিট কাটার প্রক্রিয়া শুরুও করেছিলেন কাউন্টারের কর্মী। হঠাৎ কারেন্ট চলে যায়। বন্ধ হয়ে যায় কম্পিউটার। বাধ্য হয়েই বিদ্যুৎ সংযোগ ফিরে আসার জন্য অপেক্ষা করতে হয় সত্যেন্দ্রকে। কাউন্টারের কর্মী জানিয়েছেন, এই সময়েই সাদা পোশাকের দু’জন এসে গোয়েন্দা পরিচয় দিয়ে সত্যেন্দ্রকে ধরেন। দোকান থেকে বার করে দেন কাউন্টার কর্মীকেও। ইতিমধ্যেই পুলিশের একটি গাড়ি এসে দাঁড়ায় বুকিং কাউন্টারটির সামনে। সেই গাড়িতেই সত্যেন্দ্রকে দড়ি দিয়ে বেঁধে তুলে নিয়ে চলে যান তাঁরা।
পুলিশের অনুমান, কলকাতা থেকে মুম্বই যাওয়ার পরিকল্পনা করেছিলেন সত্যেন্দ্র। ওই ট্রাভেল এজেন্টই জানিয়েছেন, সত্যেন্দ্র তাঁকে মুম্বইয়ের ট্রেন নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করেন। ট্রেন কোন সময় আছে, টিকিট পাওয়া যাবে কি না, তা-ও জানতে চেয়েছিলেন সত্যেন্দ্র। তবে সেই মুহূর্তেই দোকানের আলো নিভে যায়। ঘটনাচক্রে আলোর অপেক্ষা করতে করতেই জেলের অন্ধকারে যাওয়া নিশ্চিত হয়ে যায় সত্যেন্দ্রের।
বিধাননগর পুলিশ গত কয়েকদিন ধরেই সত্যেন্দ্র এবং তাঁর আত্মীয়দের ফোন ‘ট্র্যাক’ করছিল। তা থেকেই পুলিশ জানতে পেরেছিল সত্যেন্দ্রের পালানোর চেষ্টা করছেন। এক আত্মীয়ের থেকে বার বার টাকাও চাইছিলেন খুনের অভিযুক্ত। শুক্রবার সকালেই ওই আত্মীয়ের অ্যাকাউন্ট থেকে অনলাইন টাকা পাঠানো হয় সত্যেন্দ্রকে। সেই লেনদেনের সূত্র ধরেই সত্যেন্দ্রের ‘লোকেশন’ জানতে পারে পুলিশ।
বস্তুত এই ভুলেই পণ্ড হল সত্যেন্দ্রের সব জারিজুরি। বাগুইআটির দুই কিশোরকে খুন করার পর থেকেই অত্যন্ত সাবধানী ছিলেন তিনি। অনেক চেষ্টা করেও তাঁর নাগাল পাওয়া যাচ্ছিল না। পুলিশ জানিয়েছিল, সত্যেন্দ্র এত বার নিজের সিমকার্ড বদলাচ্ছেন যে, তিনি কোথায় আছেন, তা বোঝা যাচ্ছে না। কিন্তু শুক্রবার সকালে সামান্য ‘অসাবধান’ হলেন তিনি। হয়তো পালিয়ে যাওয়ার তাড়া ছিল বলেই গত ১৮ দিন ধরে নিখুঁত ভাবে পালন করে আসা সাবধানী পদক্ষেপে কিছু ভুল হয়ে যায়। আর সেই ‘অসাবধানতার’ মুহূর্তই সত্যেন্দ্রকে এনে ফেলে বিধাননগর পুলিশের জালে।