গ্রাফিক— শৌভিক দেবনাথ
একটি ভুলেই পণ্ড হল সত্যেন্দ্র চৌধুরির সব জারিজুরি। বাগুইআটির দুই কিশোরকে খুন করার পর থেকে অত্যন্ত সাবধানী ছিলেন তিনি। নাগাল পেয়েও নাগাল পাওয়া যাচ্ছিল না তাঁর। পুলিশ জানিয়েছিল, সত্যেন্দ্র এত বার নিজের সিমকার্ড বদলাচ্ছেন যে, তাঁর খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না। কিন্তু শুক্রবার সকালের সামান্য ‘অসবাধান’ হলেন তিনি। হয়তো পালিয়ে যাওয়ার তাড়া ছিল বলেই। আর সেই ‘সামান্য অসাবধানতার’ মুহূর্তই সত্যেন্দ্রকে এনে ফেলল বিধাননগর পুলিশের জালে।
শুক্রবার বাংলা থেকে অন্য রাজ্যে পালানোর চেষ্টা করছিলেন সত্যেন্দ্র। ট্রেনে যাবেন বলে এসেছিলেন হাওড়া স্টেশন চত্বরে। স্টেশনেই ট্রেনের টিকিট কাটছিলেন তিনি। হয়তো আগামী কয়েক দিন গা-ঢাকা দিতে হবে অনুমান করেই টিকিট কাটার আগে অনলাইনে টাকার একটি লেনদেন করেন সত্যেন্দ্র। ওই অনলাইন লেনদেনের সূত্র ধরেই সত্যেন্দ্রের খোঁজ পেয়ে যায় বিধাননগর পুলিশ।
পুলিশ সূত্রে খবর, তদন্তকারীরা সত্যেন্দ্রের ফোন ‘ট্র্যাক’ করছিলেন। কিন্তু বার বার সিম বদলানোয় তাঁর লোকেশন পেতে অসুবিধা হচ্ছিল। শুক্রবার এক আত্মীয়ের থেকে অনলাইনে টাকা নিয়েছিলেন সত্যেন্দ্র। ঘটনাচক্রে, সত্যেন্দ্রের এই আত্মীয়েরও ফোন ট্র্যাক করেছিল পুলিশ। সেখান থেকেই তারা এ-ও জানতে পেরেছিল যে, পালানোর চেষ্টা করছেন সত্যেন্দ্র। টাকা ফুরিয়ে যাওয়ায় ওই আত্মীয়ের কাছ থেকে টাকাও চাইছেন।
শুক্রবার সকালে ওই আত্মীয়ই তাঁকে অনলাইনে টাকা পাঠান। কিন্তু সম্ভবত টিকিট কাটার তাড়ায় অনলাইন লেনদেনের সময় আর সিম বদলাতে পারেননি সত্যেন্দ্র। ফোনের টাওয়ারের তথ্য থেকে পুলিশ জানতে পারে, সত্যেন্দ্র হাওড়া স্টেশনে রয়েছেন। খবর পেতেই দ্রুত স্টেশন চত্বরে পৌঁছয় পুলিশের একটি দল। সাদা পোশাকের পুলিশের ওই দলটিই গ্রেফতার করে সত্যেন্দ্রকে।
বাগুইআটির দুই ছাত্র অতনু দে এবং অভিষেক নস্করকে হত্যার ঘটনায় সত্যেন্দ্রকে খুঁজছিল পুলিশ। বৃহস্পতিবার থেকে এই মামলায় তদন্ত শুরু করে সিআইডিও। গত ২২ অগস্ট খুন করা হয় অতনু এবং অভিষেককে। তার ১৮ দিনের মাথায় সত্যেন্দ্রকে গ্রেফতার করল বিধাননগর থানার পুলিশ।
বাগুইআটিতে সত্যেন্দ্রের বাড়ি নিহত ছাত্র অতনুর বাড়ির কাছেই। এলাকাবাসীরা জানিয়েছেন, বাইক কেনাবেচার দালালি করত সে। হিন্দু বিদ্যাপীঠের মাধ্যমিকের ছাত্র অতনুও একটি বাইক কিনতেই ৫০ হাজার টাকা দিয়েছিলেন সত্যেন্দ্রকে। কিন্তু বাইক কেনার টাকা নিয়েও বাইক কেনেননি সত্যেন্দ্র। পুলিশ সূত্রে খবর, দীর্ঘ টালবাহানার পর গত ২২ অগস্ট সেই বাইক দেখাতেই অতনুকে নিজের গাড়িতে চাপিয়ে নিয়ে যান সত্যেন্দ্র। অতনু সঙ্গে নিয়েছিলেন তাঁর তুতো ভাই অভিষেককেও। রাজারহাটের একটি শোরুমে বাইক পছন্দ না হওয়ায় তাদের নিয়ে সেখান থেকে বেরিয়ে যান সত্যেন্দ্র। এর পর ২৩ অগস্ট ন্যাজোটে অতনুর এবং ২৫ অগস্ট হাড়োয়ার কাছে অভিষেকের দেহ উদ্ধার করা হয়।