BJP

পদ্মের হার কেন? ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে নেটমাধ্যমে অপ্রিয় প্রশ্নের মুখোমুখি সুপ্রিয় বাবুল

কেন বিজেপি হেরে গিয়েছে তার ব্যাখ্যা দিয়েছেন বাবুল। তার প্রেক্ষিতে অনেক প্রশ্নও পেয়েছেন ফেসবুকে। বেশ কয়েকটির জবাবও দিয়েছেন মন্ত্রীমশাই।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ২৭ জুন ২০২১ ২০:৩৩
Share:

ফাইল চিত্র

হারের থেকে শিক্ষা নিয়েই ঘুরে দাঁড়াতে চান বিজেপি সাংসদ বাবুল সুপ্রিয়। বিজেপি যেমনটা আশা করেছিল তার চেয়ে অনেকটাই খারাপ ফল করেছে বিধানসভা নির্বাচনে। বাবুলের লোকসভা এলাকা আসানসোলের অন্তর্গত সাতটি বিধানসভা আসনের মাত্র দু’টিতে জয় পেয়েছে পদ্মশিবির। যদিও লোকসভা নির্বাচনের ফলের নিরিখে সাতটিতেই এগিয়ে ছিল বিজেপি। এমন ফলের কারণ খুঁজতে রবিবার নিজের ফেসবুক পেজে একটি পোস্ট করেন বাবুল। সেখানেই তিনি লিখেছেন, ‘এই হার থেকে শিক্ষা নিয়েই আগামী দিনে জিতব আমরা। উই শ্যাল উইন বিকজ অব দিস লস। রিয়াল মাদ্রিদের কাছে হারার পর, বার্সেলোনার তৎকালীন কোচ প্রবাদপ্রতিম জোহান ক্রুয়েফ বলেছিলেন এই লাইনটি। ব্যর্থতা থেকে অর্জন করা অভিজ্ঞতা অমূল্য।’

Advertisement

রবিবারের ওই পোস্টে যাঁরা তৃণমূল থেকে বিজেপি-তে এসে ফিরে যাচ্ছেন তাঁদের তীব্র নিন্দা করে বলেছেন, ‘তাঁরা আসাতে বিজেপি-র 'উপকারের' থেকে 'অপকার'ই বেশি হয়েছিল|’ আর সেই সব ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে ফেসবুকে বিজেপি কর্মীদের প্রশ্নের মুখে পড়েছেন বাবুল। নেতাদের ভূমিকা নিয়ে অনেক অভিযোগও জমা হয়েছে মন্তব্যে। অনেক ক্ষেত্রেই সে সব মেনে নিয়েছেন বাবুল।

কেন আশানুরূপ ফল হল না বিজেপি-র? এমন প্রশ্ন গেরুয়া শিবিরে চলছেই। তারই মধ্যে বিজেপি ছেড়ে নেতা, কর্মীদের তৃণমূলে যাওয়ার ধারাও অব্যাহত। রবিবারই বাবুলের ‘গড়’ আসানসোলে বিজেপি-তে বড় ভাঙন ধরিয়েছে তৃণমূল। গেরুয়াশিবির ছেড়ে তৃণমূলে যোগ দিলেন এক সময় বিজেপি-র আসানসোলের জেলা সম্পাদক পদে থাকা মদনমোহন চৌবে। রবিবার আসানসোলের রবীন্দ্র ভবনে রাজ্যের মন্ত্রী মলয় ঘটকের হাত থেকে ঘাসফুলের পতাকা নিয়েছেন আরও অনেকেই। যদিও তার আগেই ফেসবুকে দলবদলুদের নিয়ে সরব হন বাবুল।

Advertisement

ওই পোস্টে বাবুল দাবি করেছেন, গণনার দিনে দলের কর্মীদের অনভিজ্ঞতাই হারের বড় কারণ। তিনি লিখেছেন, ‘মূলত ভোটগণনা কেন্দ্রগুলিতেই বিজেপি পরাস্ত হয়েছে। আমাদের নতুন এবং অনভিজ্ঞ ছেলেরা ‘অভিজ্ঞতা’-র কাছে হেরেছে|’একই সঙ্গে তিনি দাবি করেছেন, গণনা কেন্দ্রে বিজেপি এজেন্টরা নানা হুমকির সম্মুখীন হন। তিনি লিখেছেন, ‘হুমকিতে সন্ত্রস্ত আমাদের তুলনামূলক ভাবে অনেক নবীন অনভিজ্ঞ কাউন্টিং এজেন্ট দলে দলে বাইরে চলে এসেছেন। বহু বহু জায়গায় ৫/৬ রাউন্ড গণনার পরেই| নিজের চোখে দাঁড়িয়ে দেখেছি| কিন্তু ছেলেগুলোর পাশে দাঁড়ানো ছাড়া আর অন্য কোনও উপায়ের কথা চিন্তাই করা যায়নি সে সময়ে|’

বাবুলের এই পোস্ট যেমন কয়েক হাজার শেয়ার হয়েছে তেমনই শয়ে শয়ে মানুষ মন্তব্য করেছেন। বাবুল লিখেছেন, ‘তৃণমূল যেন ভুলে না যায় যে, আমরা সওয়া দু’কোটি মানুষের সমর্থন বা ভোট পেয়েছি। মানুষ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কেই পরাজিত করেছেন|’ এরই প্রেক্ষিতে মনোরঞ্জন জোতদার নাম একজন লিখেছেন, ‘কোনও দল নিরাপত্তা দিতে পারে না। কিন্তু সহানুভূতি নিয়ে পাশে দাঁড়ানো যায়। নির্যাতিত, নিহত, আহতদের পাশে না দাঁড়ানোয় যে ক্ষোভ তৈরি হয়েছে তাতে দু’কোটির অ্যাকাউন্টে ভাঁটা পড়তে সময় লাগবে না। যেখানে ৫০ জন জড়ো হত সেখানে পাঁচজন বলিদান দিবস পালন করলাম। থানায় ডেপুটেশন দিলাম ছয় জন। নেতৃত্ব অত্যাচারিতদের পাশে দাঁড়ায়নি। কিছু নেতার ফোন বন্ধ ছিল।’ এর জবাবে বাবুল আত্মপক্ষ সমর্থন করে লিখেছেন, তিনি করোনাজনিত কারণে ঘরবন্দি থাকলেও ভোটের ফল ঘোষণার পরে দিল্লি চলে যাননি। দীর্ঘ অসুস্থতার কথা জানালেও বাবুল লিখেছেন তিনি কোনও অজুহাত দিতে চান না।

আর একটি মন্তব্যে কৌস্তভ ঘোষ লিখেছেন, ‘বাংলায় টিকে থাকতে হলে মাটি কামড়ে রাজনীতি করতে হয়। আপনিই দেখুন বোলপুরে যে বুথে বিজেপি অনেক ভোটে এগিয়ে ছিল সেখানকার বিজেপি কর্মীদের তৃণমূলে স্যানিটাইজ করে যোগদান করানো হল, বোলপুরের প্রার্থী অনির্বাণবাবু দিল্লী থেকে শ্রীনগর ঘুরছেন। বোলপুরে আসার সময় নেই, ও দিকে তারকেশ্বরের প্রার্থী স্বপন দাশগুপ্তকে দেখুন ভোটের পর থেকে দিল্লিতে। কর্মীদের পাশে নেই। আর তৃণমূলের সায়ন্তিকা বা সায়নী বা অন্যান্য পরাজিত প্রার্থীরা মাটি কামড়ে পড়ে আছেন ২০২৪-এর দিকে তাকিয়ে। ২০২৪-এ সুফল কারা পাবে বলে আপনার মনে হয়?’ এমন অস্বস্তিকর প্রশ্নের জবাবে বাবুলও রক্ষণাত্মক ভঙ্গিতে লিখেছেন, ‘সব জানি। আমার পোস্টগুলো দেখুন। শরীর খুব খারাপ ছিল তবু নিরলস কাজ করে যাচ্ছি।’ এর পরে কৌস্তভের থেকে ‘আপনি ব্যতিক্রম’ সার্টিফিকেটও পেয়েছেন বাবুল।

বিরোধী শিবিরের বক্তব্যও এসেছে ফেসবুকে। ওই পোস্টে বাবুল এমন অভিযোগও করেছেন যে, এখন অনেককেই ভয় দেখিয়ে তৃণমূল দলে টানছে। এর প্রতিক্রিয়ায় একজন বাবুলের উদ্দেশে লিখেছেন, ‘শ্রদ্ধেয় বাবুলবাবু, আপনি লিখেছেন যে, পুলিশ প্রশাসন ভয় দেখিয়ে তৃণমূলে জয়েন করাচ্ছে। তা দাদা ভোটের আগে নিশ্চয় সিবিআই, ইডি-র ভয় দেখিয়ে আপনারা জয়েন করিয়েছিলেন! আর আপনাদের বিরোধী দলের নেতা শুভেন্দুবাবুর ভোটের আগের কথাটা একটু মনে করিয়ে দিই যে। ‘‘শুধু দু’তারিখটা আসতে দিন। দেখবেন দুপুর ২টোর পর সব পঞ্চায়েত পদত‍্যাগ করে আমাদের হয়ে গিয়েছে।’’ দাদা এই কথাটার মানে একটু বুঝিয়ে বলে দেবেন আর ভোটের আগে কেন্দ্রীয় বাহিনীর নামে যে অত‍্যাচার করিয়ে ভোটটা আপনাদের মনের মতো করিয়ে হেরে গিয়ে এখন বলছেন এজেন্টরা দুর্বল ছিল। মানে যে এজেন্টরা, কর্মীরা রাতদিন আপনাদের জন‍্য লড়াই করলে তাঁদের লড়াইটা দুর্বল করে দিলেন! বাহ্। আচ্ছা দাদা, ভোটের আগে মেরে দেব, কেটে দেব, দেখে নেবে এই কথাগুলো তো আপনাদের দিলীপদা, রাজুদা সায়ন্তনদা, রাহুলদা বলেছিলেন সব মিটিং-এ আর শুভেন্দুদা তো দাঙ্গাটা লাগাতে বাকি রেখেছিলেন। তাই বলি, এই সব না করে সংগঠন করুন আন্দোলন করুন তবেই দেখবেন যদি কিছু হয়। জনগণ থেকে কর্মী কেউ ভরসা রাখছে না আপনাদের উপরে। কারণ, ভিতরটা ফাঁপা আপনাদের। কিছু সমর্থক ফেসবুকে লাফালাফি করা মানেই সব ঠিক সেটা নয়। যাই হোক এমন কিছু লিখবেন না যাতে বাঙালি হিসেবে লজ্জিত হতে হয়।’’ এই বক্তব্যেরও জবাব দিয়েছেন বাবুল। তবে বিরোধিতার সুরে না গিয়ে কিছুটা যেন জবাব এড়ানোর ভঙ্গিতে মন্তব্যে ভাল ভাষা ব্যবহারের জন্য ধন্যবাদ জানিয়েছেন।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement