লোকসভা ভোটের প্রচারেই যে তিনি এসেছেন, সেটা বুঝিয়ে মোদী সরকারের বিভিন্ন প্রকল্পের কথা বলেন শাহ। — ফাইল চিত্র।
রাজ্য নির্বাচন কমিশন ঘোষণা না করলেও বাংলায় পঞ্চায়েত ভোটের প্রস্তুতি শুরু করে দিয়েছে সব রাজনৈতিক দল। সেই দলে রয়েছে বিজেপিও। ইতিমধ্যেই বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী তাঁর বিধানসভা এলাকা নন্দীগ্রামে পঞ্চায়েত ভোটের প্রার্থী ঘোষণা করে দিয়েছেন। এমন আবহেই বাংলায় এসে একটি বারের জন্যও পঞ্চায়েত নির্বাচনের কথা মুখে আনলেন না কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। বুঝিয়ে দিলেন তাঁর এই সফর আগামী লোকসভা নির্বাচনের দিকে তাকিয়ে।
শাহের বক্তৃতায় যে পঞ্চায়েত নির্বাচন প্রসঙ্গ আসবে না, সে কথা আগেই লিখেছিল আনন্দবাজার অনলাইন। সেই সঙ্গে এটাও জানিয়েছিল যে, গত লোকসভা নির্বাচনে হেরে যাওয়া আসনের মধ্যে যেগুলিকে দল তুলনামূলক ভাবে ‘সহজ’ বলে মনে করছে সেগুলিতেই সভা করতে চান শাহ। এর আগে এমনই তিন আসন কৃষ্ণনগর, বর্ধমান পূর্ব এবং কাঁথিতে সভা করে গিয়েছেন দলের সর্বভারতীয় সভাপতি জেপি নড্ডা। এ বার সেই সফর বীরভূম থেকে চৈত্র সংক্রান্তিতে শুরু করলেন শাহ। সেই সভায় শাহ কী কী নিয়ে বলবেন জানানোর সময় উল্লেখ করা হয়েছিল যে, বাংলার পঞ্চায়েত ভোটের বিষয়ে আদৌ চিন্তিত নয় পদ্মের গেরুয়া নেতৃত্ব। এই ব্যাপারটি রাজ্য নেতা এবং বাংলায় পাঠানো পর্যবেক্ষকরাই দেখবেন।
সেই নীতি মেনেই দোরগোড়ায় পঞ্চায়েত নির্বাচন থাকলেও শাহ শুধুই লোকসভা নির্বাচনের কথা বললেন। আর সেই সূত্রে রাজ্য বিজেপিকে নতুন লক্ষ্য দিয়ে গেলেন। এর আগে দিল্লিতে দলের বৈঠকে রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার জানিয়েছিলেন, বাংলা থেকে কমপক্ষে ২৫টি আসনে জয় নিশ্চিত করার লক্ষ্য নেওয়া হয়েছে। কিন্তু শুক্রবার শাহ বুঝিয়ে দিলেন ২৫টিতে খুশি হবেন না কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব। বার বার তাঁর বক্তব্যে উঠে এসেছে ৩৫ বা তাঁর বেশি আসন জয়ের কথা। তিনি এমনটাও বলেছেন যে, ‘‘বাংলা থেকে যদি নরেন্দ্র মোদীকে প্রধানমন্ত্রী হিসাবে আবার ক্ষমতায় আনতে ৩৫টির বেশি আসনে জয় পায় বিজেপি, তবে ২০২৫ সালের আগেই বাংলায় তৃণমূল সরকার আর থাকবে না।’’ শুভেন্দু যদিও বাংলায় ৩৬ আসনে জয়ের শপথ আগেই শুনিয়েছিলেন।
লোকসভা ভোটের প্রচারেই যে তিনি এসেছেন, সেটা বুঝিয়ে মোদী সরকারের বিভিন্ন প্রকল্পের কথা বলেন শাহ। আয়ুষ্মান ভারত প্রকল্পের সুবিধা বাংলার মানুষ কেন পাচ্ছেন না সেই প্রশ্নও তোলেন। বাংলায় বিভিন্ন ক্ষেত্রে ওঠা দুর্নীতি থেকে অনুপ্রবেশ, গরু পাচার ইস্যুতে তৃণমূলকে আক্রমণের থেকেও শাহ জোর দেন লোকসভায় ৩৫ আসনে জয় নিশ্চিত করার দিকে। অমিত বলেন, ‘‘বাংলা থেকে ৩৫ আসন নিশ্চিত করতে পারলে বাংলার সব সমস্যার সমাধান হবে।’’ বার বার বলেন, সব দুর্নীতির সমাধান বিজেপি। সব কাঙ্ক্ষিত উন্নয়নের সমাধান কেন্দ্রে বিজেপি সরকার। এমনকি, পাকিস্তানকে জবাব দেওয়ার জন্যও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের থেকে বেশি নির্ভরশীল মোদী বলে দাবি করেন। বিজেপি দেশে পরিবারবাদের বিরুদ্ধে লড়ছে বলেও উল্লেখ করেন। সেই প্রসঙ্গেই তৃণমূলকে আক্রমণ করে তিনি বলেন, ‘‘মমতাদিদি যদি ভেবে থাকেন তাঁর পরে ভাইপোকে মুখ্যমন্ত্রী করবেন, তা হবে না। পরের মুখ্যমন্ত্রী হবে বিজেপির।’’ এই বক্তব্যের সঙ্গে জুড়ে দেন শর্ত— বাংলা থেকে ২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে জিততে হবে ৩৫ আসন।