বিচারপতি চিত্তরঞ্জন দাশ। — ফাইল চিত্র।
বিদায়বেলায় সঙ্ঘ-সংস্রবের কথা কবুল করলেন কলকাতা হাই কোর্টের বিচারপতি চিত্তরঞ্জন দাশ। সোমবার বিচারপতি পদ থেকে অবসরের বিদায়ী বক্তৃতায় জানালেন, নিজেকে আরএসএসের সদস্য হিসাবে পরিচয় দেওয়ার সাহস তাঁর রয়েছে। সেই সঙ্গে তাঁর মন্তব্য, ‘‘ওই সংগঠনেই আবার ফিরতে চাই।’’
আরএসএসের সঙ্গে যোগ থাকলেও পদে বসে তিনি কোনও পক্ষপাতদুষ্ট আচরণ করেননি বলে জানিয়েছেন বিচারপতি দাশ। তাঁর কথায়, ‘‘বিচারপতির আসনে বসে সকলকে সমান চোখে দেখেছি। সিপিএম, বিজেপি, কংগ্রেস এবং তৃণমূল কারও প্রতি কোনও পক্ষপাতিত্ব করিনি।’’ সরাসরি পক্ষপাতদুষ্টতার অভিযোগ না থাকলেও গত বছর একটি বিতর্কিত মন্তব্যের জেরে সুপ্রিম কোর্টের ভর্ৎসনার শিকার হয়েছিলেন তিনি।
এক নাবালিকাকে ধর্ষণের ওই মামলার রায়ে বিচারপতি দাশ এবং বিচারপতি পার্থসারথি সেনের বেঞ্চ কিশোরীদের পোশাক, ব্যবহার এবং যৌন সংযম শিক্ষা দেওয়ার কথা বলেছিল। বলেছিল, ‘‘দু’মিনিটে ফুর্তির বদলে কিশোরীদের নিজের শরীরে অধিকার, সম্মান এবং নিজের মূল্য রক্ষা করতে হবে।’’ সুপ্রিম ওই পর্যবেক্ষণের তীব্র সমালোচনা করেছিল। শীর্ষ আদালত জানিয়েছিল, এই ধরনের পর্যবেক্ষণ বিচারপতির কাজ হতে পারে না।
সোমবার কলকাতায় হাই কোর্টের প্রধান বিচারপতি টিএস শিবজ্ঞানম-সহ সব বিচারপতি এবং উপস্থিত আইনজীবীদের সামনে বিচারপতি দাশ বলেন, ‘‘আজ আমার নিজের সত্যটা প্রকাশ করা উচিত। আমি একটি প্রতিষ্ঠানের কাছে অনেক ঋণী। আমি আমার শৈশব থেকে যৌবন পর্যন্ত সেখানে থেকেছি। আমি সেখানে সাহস, ন্যায়পরায়ণতা, সকলকে সমান ভাবার দৃষ্টিভঙ্গি এবং সর্বোপরি যেখানেই কাজ করি না কেন দেশপ্রেম এবং কাজের প্রতি অঙ্গীকার শিখেছি। এখানে আমাকে স্বীকার করতেই হবে যে, আমি রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সঙ্ঘের (আরএসএস) সদস্য।’’
এর পরে ওড়িশার বাসিন্দা বিদায়ী বিচারপতির মন্তব্য, ‘‘এই কাজের (বিচারপতি) জন্য গত ৩৭ বছর ধরে নিজেকে ওই সংগঠন থেকে দূরে সরিয়ে রেখেছি। আমার কর্মজীবনে কোনও সুবিধার জন্য ওই সংগঠনের সদস্যপদ ব্যবহার করিনি। কারণ এটি ওই সংগঠনের নীতির বিরুদ্ধে। আমি প্রত্যেকের সঙ্গে সমান আচরণ করেছি সে সিপিএম, বিজেপি, কংগ্রেস বা তৃণমূল হোক। কারও প্রতি আমার কোনও পক্ষপাতিত্ব নেই। কোনও রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বের প্রতি আমার কোনও পক্ষপাতিত্ব নেই। আমার সামনে সকলেই সমান ছিল। আমি দু’টি নীতির ভিত্তিতে ন্যায়বিচার দেওয়ার চেষ্টা করেছি, একটি হল সহানুভূতি এবং দ্বিতীয়টি, ‘বিচার করার জন্য আইন বাঁকানো যায় কিন্তু আইনের জন্য ন্যায়বিচার বাঁকানো যায় না’।’’
অবসরের পরে যে তিনি সঙ্ঘ পরিবারেই ফিরে যাবেন, সে কথাও স্পষ্ট ভাষায় জানান বিচারপতি দাশ। তিনি বলেন, ‘‘আমি এখন আমার সংগঠনে ফিরে যেতে প্রস্তুত। যদি তারা আমাকে ডাকে এবং তারা মনে করে আমি এর জন্য কিছু করতে সক্ষম। কারণ, আমি আমার জীবনে কোনও অন্যায় করিনি। আমার সাহস আছে যে, আমি আরএসএসের। যদি আমি একজন ভাল মানুষ হই তবে কোনও ভুল সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত হতে পারি না।’’