অরবিন্দ কেজরীওয়াল। ছবি: পিটিআই।
বিদেশি মুদ্রা নিয়ন্ত্রণ আইন (এফসিআরএ) ভেঙে বিপুল অঙ্কের অর্থসাহায্য নিয়ে আম আদামি পার্টি (আপ)। কেন্দ্রীয় সংস্থা এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি)-এর তরফে সোমবার এই অভিযোগ তোলা হল। তাদের দাবি, দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরীওয়ালের দল আমেরিকা এবং কানাডা থেকে যে বিপুল অর্থসাহায্য পেয়েছে তার নথিতে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই দাতাদের নাম নেই। যা এফসিআরএ সংক্রান্ত নিয়মের পরিপন্থী।
২০১৪ থেকে ২০২২ সালের মধ্যে এফসিআরএ সংক্রান্ত নিয়ম লঙ্ঘন করে আপ অন্তত সাত কোটি আট লক্ষ টাকা অর্থসাহায্য নিয়েছে বলে ইডির তরফে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রককে জানানো হয়েছে। এই ঘটনায় ১৯৫১ সালের জনপ্রতিনিধিত্ব আইন এবং ভারতীয় দণ্ডবিধিও লঙ্ঘিত হয়েছে বলে দাবি ইডির। আমেরিকা ও কানাডা ছাড়াও অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড, সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাশাহি, কুয়েত এবং ওমান থেকেও আপ বিপুল অনুদান পেয়েছে বলে জানিয়েছে ইডি। যদিও এই খবর প্রকাশ্যে আসার পরেই আপের তরফে অভিযোগ খারিজ করে ইডির বিরুদ্ধে রাজনৈতিক ষড়যন্ত্রের অভিযোগ তোলা হয়েছে।
গত শুক্রবার ইডির তরফে দিল্লির রাউস অ্যাভিনিউ আদালতে পেশ করা আবগারি দুর্নীতি সংক্রান্ত বেআইনি আর্থিক লেনদেনের মামলায় ‘অভিযুক্ত’ হিসাবে আপ-এর নাম চার্জশিটে রাখা হয়েছে। শুক্রবার (১৭ মে) তদন্তকারী সংস্থা ইডি-র তরফে সুপ্রিম কোর্টকে এ কথা জানানো হয়েছে। এ ক্ষেত্রে আপই দেশের প্রথম স্বীকৃত রাজনৈতিক দল, দুর্নীতির মামলায় যাকে ‘অভিযুক্ত’ হিসেবে দেখানো হল।
এখানেই শেষ নয়। কেজরীর দলের অস্বস্তি বাড়িয়েছে খলিস্তানপন্থী নিষিদ্ধ সংগঠন ‘শিখস ফর জাস্টিস’ (এসএফজে)-এর থেকে অর্থসাহায্য নেওয়ার অভিযোগ! দিল্লির লেফটেন্যান্ট গভর্নর ভিকে সাক্সেনা গত ৬ মে কেজরী এবং তাঁর দলের বিরুদ্ধে ‘জাতীয় তদন্তকারী সংস্থা’ (এনআইএ) তদন্তের সুপারিশ করেছেন। তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে এসএফজে সবচেয়ে বেশি ‘সক্রিয়’ আমেরিকা এবং কানাডাতেই!
‘বৃহত্তর পঞ্জাব’ নিয়ে স্বাধীন ও সার্বভৌম রাষ্ট্র খলিস্তান রাষ্ট্র গড়ার দাবিতে সক্রিয় এসএফজে গত কয়েক বছর ধরেই ভারতের বিরুদ্ধে নানা নাশকতামূলক তৎপরতায় জড়িত। সংগঠনের প্রধান গুরপতবন্ত সিংহ পন্নুন সম্প্রতি দাবি করেছিলেন, নব্বইয়ের দশকে ধৃত এক খলিস্তানি জঙ্গি নেতাকে দিল্লির জেল থেকে ছাড়ার শর্তে ২০১৪ থেকে ২০২২ পর্যন্ত প্রায় এক কোটি ৬০ লক্ষ ডলার (প্রায় ১৩৩ কোটি টাকা) অর্থ সাহায্য করা হয়েছে আপ নেতৃত্বকে। তার পরেই বিজেপির তরফে এনআইএ তদন্তের দাবি তোলা হয়েছিল।
পন্নুন একটি ভিডিয়ো বার্তায় দবি করেন, কেজরীওয়ালকে তাঁরা আট বছরে ১০০ কোটি টাকার বেশি অর্থ সাহায্য করেছেন। পন্নুনের দাবি, বিনিময়ে ১৯৯৩ সালে দিল্লি বিস্ফোরণ কাণ্ডের অন্যতম অভিযুক্ত দেবেন্দ্র পাল সিংহ ভুল্লারকে ছেড়ে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল দিল্লি সরকার। ২০২২ সালে পঞ্জাবের বিধানসভা ভোটের আগেও এসএফজের তরফে আপকে বিপুল অর্থ দেওয়া হয়েছিল বলে এসএফজে নেতৃত্বের দাবি। যদিও আপ নেতৃত্বের বক্তব্য, পন্নুন মিথ্যা বলছেন। আগামী ২৫ মে ষষ্ঠ দফায় দিল্লির সাতটি লোকসভা আসনে ভোট। তার আগে এই ঘটনার আপ রাজনৈতিক ভাবে চাপে পড়ল বলেই মনে করা হচ্ছে।