কলকাতা হাইকোর্টে মামলা তৃণমূলের। —ফাইল চিত্র।
বিধানসভা নির্বাচনের ফল ঘোষণার পর দেড় মাসেরও বেশি কেটে গিয়েছে। নতুন সরকার শপথও নিয়েছে মাসখানেক হয়ে গিয়েছে। এ বার সেই ভোটপ্রক্রিয়ায় কারচুপির অভিযোগ পৌঁছল আদালতে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং শুভেন্দু অধিকারীর লড়াইয়ে নীলবাড়ির লড়াইয়ে ভরকেন্দ্র হয়ে উঠেছিল যে নন্দীগ্রাম, শুধু সেখানেই নয়, আরও ৪টি কেন্দ্রে গণনায় কারচুপি হয়েছে বলে অভিযোগ তুলে কলকাতা হাই কোর্টে মামলা দায়ের করল রাজ্যের শাসকদল তৃণমূল। বৃহস্পতিবার নন্দীগ্রাম নিয়ে মমতা হাই কোর্টে যাওয়ার পর, শুক্রবার সকালে বলরামপুর, বনগাঁ দক্ষিণ, গোঘাট এবং ময়না— এই ৪ কেন্দ্রে গণনায় কারচুপি হয়েছে বলে মামলা দায়ের হয়েছে। ঘটনাচক্রে ওই ৪ আসনেই খুব কম ভোটে তৃণমূলকে পিছনে ফেলে জিতেছে বিজেপি।
পুরুলিয়ার বলরামপুরে এ বারের ভোটে শান্তিরাম মাহাতোকে প্রার্থী করেছিল তৃণমূল। বিজেপি-র বাণেশ্বর মাহাতোর কাছে মাত্র ৪২৩ ভোটে হেরেছেন তিনি। এত কম ব্যবধানে হারের পিছনে ‘কারচুপি’কে দায়ী করে আদালতে অভিযোগ করেছেন শান্তিরাম। নতুন করে গণনার দাবি জানিয়েছেন তিনি। তাঁর মামলাটি গৃহীত হয়েছে। আগামী ১৫ জুলাই ওই মামলার শুনানি হবে বলে জানিয়েছে আদালত। তার মধ্যে এই সংক্রান্ত যাবতীয় নথি সংরক্ষণ করে রাখতে নির্দেশ দিয়েছেন বিচারপতি শুভাশিস দাশগুপ্ত।
বনগাঁ দক্ষিণ, গোঘাট এবং ময়নায় ভোট গণনায় কারচুপি হয়েছে বলে মামলা দায়ের করেছে তৃণমূল। বনগাঁ দক্ষিণে বিজেপি-র স্বপন মজুমদারের কাছে ২ হাজার ৪ ভোটে পরাজিত হন তৃণমূল প্রার্থী আলোরানি সরকার। ময়নায় বিজেপি প্রার্থী প্রাক্তন ক্রিকেটার অশোক ডিন্ডা তৃণমূলের সংগ্রামকুমার দলুইকে ১ হাজার ২৬০ ভোটে পরাজিত করেন তিনি।
গোঘাটে বিজেপি-র বিশ্বনাথ কারকের কাছে ৪ হাজার ১৪৭ ভোটে পরাজিত হন তৃণমূল প্রার্থী মানস মজুমদার। সেখানেও ভোটে কারচুপি হয়েছে বলে অভিযোগ করেছে তৃণমূল। তবে তাঁর বিরুদ্ধে মূল অভিযোগ নির্বাচনী হলফনামায় ভুল তথ্য দেওয়া। মানস জানিয়েছেন, হলফনামা জমা দেওয়ার সময় প্রার্থীর নামে অপরাধ মামলা রয়েছে কি না জানাতে হয়। মইনউদ্দিন খুনের মামলায় ২০১৭ সাল থেকে মামলা চলছে বিশ্বনাথের বিরুদ্ধে। অথচ হলফ নামায় কোনও মামলা নেই বলে জানিয়েছেন তিনি। মানসের দাবি, বিশ্বনাথের প্রার্থিপদ বাতিলের জন্য আগেই নির্বাচন কমিশনে আর্জি জানিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু তাতে লাভ হয়নি বলেই মামলা দায়ের করেছেন।
গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।
নন্দীগ্রামে ভোটে কারচুপির অভিযোগ নিয়ে বৃহস্পতিবার মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আদালতে যাওয়ার পর থেকেই নতুন করে ভোটযুদ্ধে সরগরম রাজ্য রাজনীতি। কেন্দ্রীয় বাহিনী এনে ভোট করানোয় কারচুপি আটকানো গিয়েছে বলে এর আগে দাবি করলেও, বৃহস্পতিবার থেকে তৃণমূলের বিরুদ্ধে ভোট কারচুরপির অভিযোগে সরব হয়েছে বিজেপি-ও। বেছে বেছে কোনও কেন্দ্র নয়, ২৯২টি আসনেই নতুন করে গণনা করতে হবে বলে দাবি তোলেন রাজ্য বিজেপি-র সহ-সভাপতি জয়প্রকাশ মজুমদার। তার মধ্যেই ফের গণনার কারচুপি নিয়ে একগুচ্ছ মামলা দায়ের করল তৃণমূল। এ বারের নির্বাচনে বিজয়ী এবং পরাজিত প্রার্থীর মধ্যে সবচেয়ে কম ব্যবধান ছিল দিনহাটায়। সেখানে বিজেপি-র নিশীথ প্রামাণিকের কাছে মাত্র ৫৭ ভোটে পরাজিত হন তৃণমূল প্রার্থী উদয়ন গুহ। কোচবিহারের বিজেপি সাংসদ নিশীথ যদিও ওই কেন্দ্রের বিধায়ক পদ ছেড়ে দেন। সেখানে উপনির্বাচন হবে।