নিজস্ব চিত্র
নন্দীগ্রাম বিধানসভা আসনে ভোটের ফলাফলকে চ্যালেঞ্জ করে বৃহস্পতিবারই হাই কোর্টে মামলা করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। শুক্রবার সেই মামলা ওঠে বিচারপতি কৌশিক চন্দের সিঙ্গল বেঞ্চে। সেই বেঞ্চ নিয়ে শুরু হয়েছে বিতর্ক। কলকাতা হাই কোর্টের আইনজীবীদের একাংশের দাবি, বিচারপতি চন্দ বিজেপি-র ‘সক্রিয় সদস্য’ ছিলেন। তাই তাঁর এজলাসে মামলা ওঠা নিয়ে শুক্রবার হাই কোর্ট চত্বরে বিক্ষোভ দেখালেন আইনজীবীদের একাংশ। মুখে কালো মাস্ক এবং হাতে পোস্টার নিয়ে শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ দেখান আইনজীবীরা। পোস্টারে লেখা ছিল, ‘বিচারব্যবস্থার সঙ্গে রাজনীতি করবেন না’। ঘটনাচক্রে, শুক্রবার ওই মামলার শুনানি হয়নি। বিচারপতি চন্দ জানিয়েছেন, মামলাকারীকে (এ ক্ষেত্রে মুখ্যমন্ত্রী মমতা) আদালতে উপস্থিত থাকতে হবে। বিচারপতি নির্দেশ দেন, ওই মামলাটির শুনানি হবে এক সপ্তাহ পর, আগামী বৃহস্পতিবার।
তবে মামলার শুনানি পিছিয়ে গেলেও বিক্ষোভ আটকে থাকেনি। বিক্ষোভকারী আইনজীবীদের পক্ষে অচিন্ত্যকুমার বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘কৌশিক চন্দ একসময় বিজেপি-র সক্রিয় সদস্য ছিলেন। এই ধরনের গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক মামলা তাঁর বেঞ্চে গেলে বিচারব্যবস্থা নিয়ে সাধারণ মানুষের মনে প্রশ্ন উঠবে। আমাদের দাবি, অন্য বেঞ্চে মামলা পাঠানো হোক।’’ বিক্ষোভকারীদের মধ্য থেকে এই প্রশ্নও উঠেছে যে, মামলার ‘রাজনৈতিক গুরুত্ব’ জানার পরেও কেন সেটি বিচারপতি কৌশিক চন্দের বেঞ্চে পাঠানো হল? এই নিয়ে টুইট করেছেন তৃণমূলের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক কুণাল ঘোষ। টুইট করেছেন তৃণমূল সাংসদ ডেরেক ও’ব্রায়েনও। বিজেপি নেতারা এই নিয়ে প্রকাশ্যে মুখ খুলতে চাননি। তবে একান্ত আলোচনায় রাজ্য বিজেপি নেতাদের অনেকে বলছেন, একটা সময় পর্যন্ত রাজ্য বিজেপি-র লিগাল সেলের সঙ্গে যোগাযোগ ছিল কৌশিক চন্দের। তবে তিনি কোনও পদে ছিলেন না। অন্যদিকে, আদালত সূত্রে খবর, একসময়ে তিনি হাই কোর্টে কেন্দ্রে তরফে অতিরিক্ত সলিসিটার জেনারেল ছিলেন। সিবিআই এবং কেন্দ্রের হয়ে একাধিক মামলায় আইনজীবী হিসেবে লড়াই করেছেন তিনি।
তথ্যাভিজ্ঞরা জানাচ্ছেন, মমতা সরকারের ইমামভাতা ঘোষণার সময় যে মামলা হয়েছিল, তাতে বিজেপি-র তরফে প্রধান আইনজীবী ছিলেন এস কে কপূর। তাঁর জুনিয়র ছিলেন কৌশিক চন্দ। অমিত শাহের একটি সভা হওয়ার কথা ছিল ধর্মতলায় ভিক্টোরিয়া হাউসের সামনে। সেই সভার অনুমতি দেয়নি পুলিশ-প্রশাসন। তখনও একটি মামলা হয় হাই কোর্টে। সেই মামলাটিও আইনজীবী হিসেবে লড়েছিলেন কৌশিক চন্দ। দু’টি মামলাতেই জয় পেয়েছিল বিজেপি। রাজ্য বিজেপি সূত্রের খবর, ওই মামলায় আইনজীবী হিসেবে কাজ করার সময় তত্কালীন বিজেপি রাজ্য সভাপতি রাহুল সিনহার সঙ্গে তাঁর নৈকট্য তৈরি হয়। অনেকে মনে করেন, ২০১৪ সালে কেন্দ্রে মোদী সরকার ক্ষমতায় আসার পররাহুলের সুপারিশেই কেন্দ্রীয় সরকারের আইনজীবীদের প্যানেলে তাঁর নাম উঠেছিল এবং তিনি এই রাজ্যে কেন্দ্রের অতিরিক্ত সলিসিটার জেনারেল নিযুক্ত হয়েছিলেন। এর পর রাজ্যের বিরুদ্ধে বেশ কিছু মামলায় তিনি আদালতে সওয়াল করেছিলেন।
তবে পাশাপাশিই অন্য একাংশের বক্তব্য, বিচারপতি কৌশিক চন্দের নামে এই অভিযোগ করা অনুচিত। পেশাদার আইনজীবী হিসেবে তিনি যে কোনও মক্কেলের হয়ে কাজ করতেই পারেন। সেটা তাঁর পেশাগত সিদ্ধান্ত। সেই পর্বে যে কোনও মক্কেলের সঙ্গে তাঁর নৈকট্য হওয়াও অস্বাভাবিক নয়। কিন্তু বিচারপতির আসনে বসার পর তার কোনও রকম ‘প্রভাব’ তাঁর উপর পড়েনি। তিনি কেন, অন্য কোনও বিচারপতির উপরেই পড়েনি বা পড়ে না। প্রবীণ রাজনীতিক তথা আইনজীবী অরুণাভ ঘোষ বিচারপতি কৌশিক চন্দ প্রসঙ্গে বলেন, ‘‘আমি যতদূর জানি, উনি কোনও দিনই বিজেপি-র সদস্য ছিলেন না। তবে বিজেপি-র হয়ে কিছু মামলা লড়ে তিনি প্রথম শিরোনামে এসেছিলেন। কিন্তু তাতেই কি তিনি বিজেপি হয়ে গেলেন! সিপিএমের সাংসদ তথা পেশায় আইনজীবী বিকাশ ভট্টাচার্য তো কমজোরি মক্কেলদের হয়ে বিনাপয়সায় মামলা লড়েন। সেই মক্কেলরা অন্য রাজনৈতিক দলেরও হন অনেক সময়। তাতে কি উনি সেই রাজনৈতিক দলের সদস্য হয়ে গেলেন!’’