অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। —ফাইল ছবি।
ধর্ষণ রুখতে কঠোরতম আইনের পক্ষে সরব হয়েছেন তৃণমূলের সেনাপতি অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। গত ২২ অগস্ট প্রথম লিখেছিলেন। তার পরে পর মঙ্গলবারেও সমাজমাধ্যমে সেই কথা লিখেছেন তিনি। অভিষেক-ঘনিষ্ঠেরা পরিসংখ্যান দিয়ে দাবি করছেন, তাঁর ২২ অগস্টের বক্তব্যকে মঙ্গলবার পর্যন্ত ১১ কোটিরও বেশি মানুষ সমর্থন করেছেন। তাঁরা অভিষেকের দাবি এবং বক্তব্য সমাজমাধ্যমে ‘শেয়ার’ করেছেন। আরও কয়েক লক্ষ মানুষ সরাসরি অভিষেকের বক্তব্যকে সমর্থন জানিয়েছেন সমাজমাধ্যমে। যা থেকে অভিষেকের ঘনিষ্ঠেরা বলছেন, এর মাধ্যমে এটাই প্রমাণিত হচ্ছে যে, ১১ কোটিরও বেশি মানুষ ধর্ষণ রুখতে কঠোরতম আইন এবং দ্রুত বিচার করে কঠিনতম শাস্তির দাবিতে গলা মিলিয়েছেন।
২২ তারিখ অভিষেক লিখেছিলেন, ‘‘এমন কঠোর ধর্ষণ বিরোধী আইন আনতে হবে, যা ঘটনার ৫০ দিনের মধ্যে অপরাধীকে চিহ্নিত করে দোষী সাব্যস্ত করা নিশ্চিত করবে এবং তাতে দোষীকে কঠোরতম সাজা দেওয়ার নিদান থাকবে।’’ অভিষেক এ-ও লিখেছিলেন, ‘‘গত ১০ দিনে যখন আরজি করে মহিলা চিকিৎসককে ধর্ষণ করে খুনের ঘটনায় দেশ জুড়ে প্রতিবাদ হচ্ছে, মানুষ সুবিচারের দাবি জানাচ্ছেন, সেই সময়েও দেশের বিভিন্ন প্রান্তে একের পর এক ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে। গত ১০ দিনে দেশে ৯০০টি ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে। প্রতি দিন ৯০টি ধর্ষণের ঘটনার রিপোর্ট লেখানো হয়েছে। অর্থাৎ প্রতি ঘণ্টায় চারটি এবং প্রতি ১৫ মিনিটে একটি ধর্ষণের ঘটনার অভিযোগ দায়ের হয়েছে। অথচ এত কিছু সত্ত্বেও এই অপরাধের কোনও দীর্ঘমেয়াদি সমাধান বার করা গেল না।’’ এ বিষয়ে রাজ্য সরকারকে কেন্দ্রের উপর ‘চাপ সৃষ্টি করে’ ধর্ষণ বিরোধী কঠোর আইন তৈরি করার পরামর্শও দিয়েছিলেন অভিষেক। তার পরেই রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় প্রধানমমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে চিঠি লিখেছিলেন।
বলিউডের অভিনেত্রী থেকে অসংখ্য নেটপ্রভাবী অভিষেকের ওই বক্তব্য শেয়ার করেন তাঁদের সমাজমাধ্যমে। অভিষেক-ঘনিষ্ঠদের বক্তব্য, যাঁরা সরাসরি শেয়ার করেছেন, তাঁদের প্রত্যেকের প্রোফাইল বা হ্যান্ডলে যদি ৫০০ জন করে অনুগামী থাকেন, তা হলে ওই বক্তব্য প্রায় ১২ কোটি লোকের কাছে পৌঁছে গিয়েছে। যা ‘ইঙ্গিতপূর্ণ’ বলে মনে করছেন অভিষেকের ঘনিষ্ঠেরা। তাঁদের বক্তব্য, ধর্ষণবিরোধী আইনকে অপরাধীদের ভয় পেতে হবে। যাতে অপরাধীরা বুঝতে পারে, ধর্ষণের মতো ন্যক্কারজনক অপরাধ করলে ৫০-৬০ দিনের বিচার করে কঠোরতম এবং দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি পেতে হবে। নচেৎ এই অপরাধ থামবে না। এক অভিষেক-ঘনিষ্ঠের কথায়, ‘‘ধর্ষণের বিরুদ্ধে ৪০ বছর আগেও মিছিল হয়েছিল। এখনও হচ্ছে। ৪০ বছর পরেও হবে। কিন্তু তাতে ধর্ষণ কমেনি। কমবেও না। কঠোরতম আইন আনতে হবে। কঠোরতম শাস্তি দিতে হবে। যাতে অপরাধ করার আগেই কেউ ভয়ে কাঁপতে থাকে!’’ তাঁর আরও বক্তব্য, ‘‘সেই আইন এবং শাস্তির জন্য কেন্দ্রীয় সরকারের উপর চাপ দিতে হবে। সেই চাপ রাজনৈতিক দলগুলো না-দিলে আমজনতা দেবে। জনতাকে ক্রমশ ধাক্কা দিয়ে যেতে হবে। চাপ তৈরি করে যেতে হবে। এখন যদি পাঁচ জন বললে সেটাই একদিন ৫০ জন হবে।’’
গত ৯ অগস্ট সকালে আরজি করে চিকিৎসককে ধর্ষণ এবং খুনের ঘটনা প্রকাশ্যে এসেছিল। ঘটনাচক্রে, তার পরের দিনই ডায়মন্ড হারবারের আমতলার কর্মসূচি শেষে অভিষেক সওয়াল করেছিলেন, ‘‘ধর্ষণের মতো কাজ যারা করে, তাদের সরকারের পয়সা খরচ করে লালনপালন করার কোনও প্রয়োজনীয়তা নেই। সাত দিনের মধ্যে এনকাউন্টার করে দেওয়া উচিত।’’ পরে যদিও অভিষেক কঠোর আইন কী ভাবে বাস্তবায়িত করা সম্ভব, সে ব্যাপারেও রূপরেখা দিতে চেয়েছেন। তাঁর বক্তব্য, প্রতিটি রাজ্য সরকারের উচিত কেন্দ্রের উপর চাপ তৈরি করা। তিনি এ-ও বলেছিলেন, ‘‘কেন্দ্রীয় সরকার যদি এমন বিল আনে, তৃণমূল সকলের আগে তাতে সমর্থন দেবে।’’
অভিষেক-ঘনিষ্ঠদের বক্তব্য, তিনি মনে করেন না আরজি কর কোনও বিচ্ছিন্ন ঘটনা। সারা দেশেই রোজ এই ধরনের ঘটনা ঘটছে এবং ঘটেই চলেছে। যদি একে নির্মূল করতে হয়, তা হলে প্রয়োজন কঠিনতম আইন বলবৎ করা। যে আইন বিচারপ্রক্রিয়াকে বিলম্বিত করবে না। দ্রুত বিচারপ্রক্রিয়া শেষ করে কঠিনতম সাজা সুনিশ্চিত করবে। অনেক জায়গায় ধর্ষণের অভিযোগও সঠিক ভাবে দায়ের হয় না বলে মনে করেন অভিষেক। মঙ্গলবারের পোস্টে অভিষেক পরিসংখ্যান দিয়ে দাবি করেছেন, লিখিত অভিযোগ দায়ের হওয়ার পরেও ১০০টি ধর্ষণের ঘটনার মধ্যে ৭৪টিতে অভিযুক্তেরা শাস্তি পায় না। অর্থাৎ, ধর্ষণের ঘটনায় ‘কনভিকশন রেট’ মাত্রই ২৬ শতাংশ। তৃণমূলের সেনাপতি মনে করেন, আইন কঠোর না হওয়ার ফলেই ধর্ষণ বন্ধ করা যাচ্ছে না। ফলে অবিলম্বে কঠোর আইন তৈরি করতে হবে। প্রয়োজনে দ্রুত অধ্যাদেশ (অর্ডিন্যান্স) এনে করতে হবে। তাঁর সেই স্বর মঙ্গলবার পর্যন্ত পৌঁছেছে প্রায় ১২ কোটি মানুষের কাছে।