বন্ধ নিয়ে নবান্নের বার্তা জানালেন আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায়। গ্রাফিক— শৌভিক দেবনাথ।
বিজেপির ডাকা বাংলা বন্ধ পালন করতে নিষেধ করল নবান্ন। এ ব্যাপারে রাজ্য সরকারের তরফে স্পষ্ট বার্তায় বাংলার জনগণকে বলা হয়েছে, তাঁরা যেন বন্ধ পালন না করেন। তাঁরা যেন জনজীবন স্বাভাবিক রাখেন। এমনকি, সরকারি কর্মচারীদের প্রতি নবান্নের নির্দেশ, ‘‘দফতরে নিয়মমাফিক হাজিরা দেবেন।’’ এ ছাড়া পুজোর বিকিকিনি চলছে যে সমস্ত দোকান-বাজারে, সেই সমস্ত দোকানপাটও খোলা রাখার নির্দেশ দিয়েছে নবান্ন। বেসরকারি পরিবহণ সংগঠনগুলিকে যান চলাচল স্বাভাবিক রাখতে বলা হয়েছে। রাজ্য জানিয়েছে, এর জন্য কোনও রকম ক্ষতি যদি হয়, তবে সেই ক্ষতিপূরণের দায়িত্ব নেবে খোদ সরকার। একই সঙ্গে নবান্ন জানিয়েছে, তারা সমস্ত পরিববহণের স্বাভাবিক চলাচল বজায় রাখার জন্যও আইনানুগ পদক্ষেপ করবে।
মঙ্গলবার নবান্ন অভিযানের পরেই বিজেপির তরফে বুধবার ১২ ঘণ্টার বাংলা বন্ধের ডাক দেওয়া হয়। বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার জানান, ছাত্র সমাজের নবান্ন অভিযানে পুলিশের অত্যাচারের প্রতিবাদেই ওই বন্ধ পালন করা হবে। সেই ঘোষণার আধ ঘণ্টার মধ্যেই নবান্ন থেকে সাংবাদিক বৈঠক করে সরকারি ঘোষণা করেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উপদেষ্টা আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায়।
আরজি করের ঘটনা এবং তৎপরবর্তী আন্দোলনের কথা জানিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর উপদেষ্টা বলেন, ‘‘তদন্ত চাওয়ার এবং সুবিচার চাওয়ার দায়িত্ব ও অধিকার আমাদের সকলেরই আছে। কিন্তু আজ (মঙ্গলবার) মহানগরকে এবং তার পর কাল (বুধবার ) বাংলাকে স্তব্ধ করার যে প্রয়াস হল এবং হচ্ছে, তা সম্পূর্ণ অসমর্থনীয়। ছাত্রছাত্রীদের পড়াশোনা, পরীক্ষা আছে এবং চলছে। শারদোৎসবের বেচাকেনা শুরু হয়ে গিয়েছে। ব্যবসায়ী, কর্মজীবী, পেশাজীবী, বৃত্তিজীবী বৃহৎ সংখ্যক মানুষের ভবিষ্যৎ এতে বিপন্ন হচ্ছে। শিক্ষা ও স্বাস্থ্য-সহ সমস্ত আপৎকালীন পরিষেবা বিপন্ন। এই পরিস্থিতিতে পশ্চিমবঙ্গ সরকার জানাচ্ছে আগামী কালের প্রস্তাবিত বন্ধকে মেনে নেওয়া হবে না। সকলের কাছে অনুরোধ এই বন্ধে অংশ নেবেন না।’’ এ ব্যাপারে সরকারি কর্মচারীদের প্রতি সরকারের বিশেষ নির্দেশও ঘোষণা করে আলাপন বলেন, ‘‘অফিস-কাছারিতে অবশ্যই স্বাভাবিক ভাবে আসবেন।’’
বিজেপির ডাকা বন্ধকে ‘চাপিয়ে দেওয়া বন্ধ’ বলে মন্তব্য করে আলাপন বলেন, ‘‘মহারাষ্ট্র হাই কোর্টের সাম্প্রতিক রায়ের কথা অনেকেই জানেন। সাধারণ ভাবে, এই ধরনের অচলাবস্থা জোর করে সৃষ্টির বিরুদ্ধে বিচার বিভাগের নানা নির্দেশ আছে। বন্ধ তথা আন্দোলনের নামে সাধারণ মানুষের সাধারণ জীবনযাত্রাকে সহসা জোর করে বন্ধ করে দেওয়ার ব্যাপারে বিচার বিভাগের নির্দেশ মান্য। তাই রাজ্য সরকারের সিদ্ধান্ত বুধবার স্বাভাবিক জনজীবন চালু রাখা হবে।’’এর পাশাপাশি রাজ্যের বিভিন্ন পরিবহণ মাধ্যমের সরকারি এবং বেসরকারি সংগঠনগুলিকেও বুধবার যান চলাচল স্বাভাবিক রাখতে বলা হয়েছে নবান্নের তরফে। আলাপন জানিয়েছেন, বুধবার সর্ব ক্ষেত্রে সর্বতোভাবে বাংলাকে সচল রাখাই হবে সরকারের লক্ষ্য।
একই সঙ্গে নবান্ন অভিযান নিয়েও বার্তা দিয়েছে রাজ্য সরকার। নবান্ন জানিয়েছে, বাংলা সৌজন্য এবং সহাবস্থানের সংস্কৃতিতে বিশ্বাসী। সোমবার রাজ্য পুলিশ সেই সৌজন্য বজায় রেখেছে। শান্ত থেকেছে। সেই সৌজন্য এর পরেও বজায় থাকবে। রাজ্যের মানুষের কাছে সরকারের আবেদন, তাঁরা যেন স্বাভাবিক জীবনযাপন শুরু করেন।