বাবুল সুপ্রিয় এবং অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়।
মানহানির অভিযোগে শনিবার কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রী বাবুল সুপ্রিয়কে আইনি নোটিস পাঠালেন তৃণমূল যুব নেতা তথা সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। ওই নোটিসে তাঁর অভিযোগ, তাঁর বক্তব্যের কিছু শব্দ বেছে নিয়ে টুইটারে তুলে ধরে ‘ভিত্তিহীন ও মিথ্যা’ দোষারোপ করেছেন বাবুল।
অভিষেকের আইনজীবী সঞ্জয় বসুর তরফে পাঠানো নোটিসে বলা হয়েছে, ৭২ ঘণ্টার মধ্যে ওই টুইট প্রত্যাহার করে বাবুলকে নিঃশর্ত ক্ষমা চাইতে হবে। নইলে দেওয়ানি ও ফৌজদারি মামলায় অভিযুক্ত করা হবে আসানসোলের বিজেপি সাংসদকে। পাশাপাশি, বিকৃত ও মিথ্যা তথ্য পরিবেশনের জন্য টুইটার কর্তৃপক্ষকেও এদিন নোটিস পাঠিয়েছেন অভিষেকের আইনজীবী। যদিও বাবুল ওই আইনি নোটিসকে প্রকাশ্যে কোনও গুরুত্বই দিতে চাননি।
প্রসঙ্গত, মহালয়ার সকালে ফেসবুক লাইভে বক্তৃতায় অভিষেক বলেছিলেন, ‘‘মুখ্যমন্ত্রীর অমানবিক, অক্লান্ত পরিশ্রমে বাংলার একাধিক প্রকল্প বিশ্ব দরবারে সম্মানিত হচ্ছে।’’ বাবুল ‘অমানবিক’ শব্দটি হাতিয়ার করে তৃণমূলকে খোঁচা দেন। অভিষেকের ভিডিয়োর নির্দিষ্ট অংশ তুলে ধরে বাবুল টুইটারে লেখেন, ‘‘মুখ ফসকে সত্যি কথাটা বেরিয়ে গেছে— ‘অমানবিক মুখ্যমন্ত্রী’ আমি একটুও আশ্চর্য নই যে এটা পোস্ট করা ভিডিয়োতে রয়ে গিয়েছে। কারণ, যারা এটা শুট করেছে তারাও ‘অমানবিক মুখ্যমন্ত্রী’ দিদির অমানবিক তৃণমূলী দুষ্কর্মে এতটাই লিপ্ত যে, ভুল করে ‘বেরিয়ে’ যাওয়া এই সত্যটি ধরতেই পারেনি।”
এরই প্রেক্ষিতে পাঠানো আইনি নোটিসে অভিযোগ করা হয়েছে, কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রী তাঁর সরকারি টুইটার হ্যান্ডল থেকে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সম্পর্কে ডায়মন্ড হারবারের তৃণমূল সাংসদ তথা তৃণমূলের যুব সভাপতির বক্তৃতার নির্দিষ্ট কিছু শব্দ বেছে নিয়ে ‘উদ্দেশ্যপ্রণোদিত এবং বিদ্বেষপরায়ণ’ ভাবে ব্যবহার করেছেন। পাশাপাশি, তৃণমূলের যুবনেতার বক্তৃতার ভিডিয়ো বিকৃত ভাবে কাটছাঁট করারও অভিযোগ করা হয়েছে নোটিসে। সঞ্জয় লিখেছেন, ‘আমার মক্কেল সম্পর্কে আপনার (বাবুল সুপ্রিয়) মিথ্যা মন্তব্যে জনগণের কাছে ভুল বার্তা পৌঁছেছে। যা মানহানির প্রচেষ্টা। কারণ, এর ফলে আমার মক্কেলের সামাজিক মর্যাদা, খ্যাতি ও সম্মানের ক্ষতির সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে’।
সঞ্জয়ের দাবি, অভিষেক তাঁর বক্তৃতায় ‘অমানবিক মুখ্যমন্ত্রী’ শব্দবন্ধটি ব্যবহারই করেননি। তিনি বলেছিলেন, ‘‘আমাদের রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর অমানবিক এবং অক্লান্ত পরিশ্রমে।’’ কিন্তু বাবুল পৃথক দু’টি শব্দ বেছে নিয়ে পর পর জুড়ে দিয়ে ‘অভিষেকের মন্তব্য’ হিসেবে টুইটারে তুলে ধরেছেন। যা স্পষ্টতই জালিয়াতি।
আরও পড়ুন: সেনা তথ্য পাচার, গুপ্তচরবৃত্তির অভিযোগে দিল্লিতে ধৃত চিনা মহিলা-সহ তিন
বাবুল সুপ্রিয় অবশ্য এই আইনি নোটিসকে গুরুত্বই দিতে চাননি। তিনি বলেছেন, ‘‘অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে আমি সিরিয়াসলি নিই না। তবে ওঁর মুখ ফসকে যখন সত্যি কথাটা বেরিয়েই গিয়েছে, তখন বলি, বাংলার মুখ্যমন্ত্রী বাস্তবেই যে কতটা অমানবিক কাজ করছেন, সেটা সবাই জানেন। ওঁরা বদলাবেন না, তাই জনতাই ২০২১-এ একটা বড় বদল আনবে।’’ কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর কথায়, ‘‘দেওয়ালে পিঠ ঠেকে যাওয়ার হতাশায় কৌতুক করার মতো একটি উক্তি নিয়ে করা ফেসবুক পোস্টের জন্য আইনি নোটিস পাঠানো হচ্ছে। তবে এ রকম নোটিস মাঝে মাঝে সবাইকেই পাঠানো হয়। আমার কাছেও আসে। আমার একটা ছোট বাক্স রয়েছে। তার মধ্যে ওই নোটিসগুলোকে রেখে দিই। আমার আইনজীবী যা করার করেন।’’
আরও পড়ুন: করোনার কোপে মেয়াদ কমতে পারে বাদল অধিবেশনের
বাবুল আরও বলেন, ‘‘অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের ভাবমূর্তিটাই এমন যে, তাঁকে রাজনৈতিক ভাবে কিছু বললেও সেটা ব্যক্তিগতই হয়ে দাঁড়ায়।’’ তৃণমূলের শান্তিনিকেতনে কত ‘শান্তি’ জমা হয়ে রয়েছে, সারা বাংলা এখন তা জেনে গিয়েছে। সেটা নিয়ে ‘ভাইপোর কীর্তি’ নামে একটা আস্ত ছবি বানানো যাবে। বাবুলের ইঙ্গিত যে হরিশ মুখার্জি রোডে অভিষেকের বাসভবন, তা বুঝতে অবশ্য অসুবিধে হয় না।