বাংলায় পঞ্চায়েত ভোটে প্রার্থী না দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল অরবিন্দ কেজরীওয়ালের দল। — ফাইল চিত্র।
লোকসভা নির্বাচনের আগে গোটা দেশে বিজেপি বিরোধী জোট গঠনের আবহ তৈরি হয়েছে। তাতে মুখ্য ভূমিকা নিচ্ছেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরীওয়ালরা। সেই কারণে বাংলায় তৃণমূলের পথে কাঁটা বিছোতে না চেয়ে পঞ্চায়েত নির্বাচনে প্রার্থী না দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল আপ। তবে রাজ্য নির্বাচন কমিশন শুক্রবার মনোনয়নের যে তালিকা প্রকাশ করেছে, তাতে ১৩ জন আপ প্রার্থীর নাম রয়েছে। ইতিমধ্যেই সেই প্রার্থীরা কারা, তার খোঁজ শুরু করেছে দল। একই সঙ্গে নির্বাচন কমিশনকে চিঠি দিয়ে আপ জানাতে চলেছে কারা আপের নামে মনোনয়ন জমা দিয়েছে তা চিহ্নিত করে প্রতারণার অভিযোগে পুলিশে অভিযোগ জানানো হোক।
আপের নামে মনোনয়ন জমা পড়েছে খুবই কম। গ্রাম পঞ্চায়েতে ৯টি এবং পঞ্চায়েত সমিতিতে ৪টি। জেলা পরিষদে কোনও মনোনয়ন জমা পড়েনি। সংখ্যা কম হলেও বিষয়টি শৃঙ্খলাভঙ্গ হিসাবে দেখছে আপের কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব। বাংলার দায়িত্বপ্রাপ্ত আপের কেন্দ্রীয় নেতা সঞ্জয় বসু শনিবার আনন্দবাজার অনলাইনকে বলেন, ‘‘কারা কোথায় প্রার্থী দিয়েছে, আমরা দলের পক্ষ থেকে খোঁজ নেওয়ার চেষ্টা করেছি। আগেই আমরা সর্বদল বৈঠকে জানিয়ে দিয়েছিলাম যে আপ প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছে না। তার পরেও কী ভাবে আপের নামে কেউ মনোনয়ন জমা দিতে এলে তা গ্রহণ করা হয়েছে তা বুঝতে পারছি না।’’ একই সঙ্গে সঞ্জয়ের সংযোজন, ‘‘আমরা শনিবারই রাজ্য নির্বাচন কমিশনকে চিঠি দিয়ে বিষয়টা জানাব। আমরা চাই স্ক্রুটিনি পর্বেই মনোনয়নগুলি বাতিল করা হোক। একই সঙ্গে কারা একটি জাতীয় দলের অনুমোদন ছাড়াই মনোনয়ন জমা দিলেন, তাঁদের চিহ্নিত করে পুলিশে এফআইআর করা হোক। তাঁরা যদি আপের সদস্যও হন, তাতেও দল রেওয়াত করবে না। দলীয় শৃঙ্খলা সবার উপরে।’’
প্রসঙ্গত, পঞ্চায়েত নির্বাচন ঘোষণা হওয়ার প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই আপ সিদ্ধান্ত নিয়েছিল পঞ্চায়েত নির্বাচনে তারা যোগ দিতে চায় না। এই মর্মে গত ১৩ জুন সর্বদল বৈঠকে একটি চিঠিও কমিশনকে দেয় আপ। এর পরে ১৫ জুন রাজ্য নির্বাচন কমিশন সব জেলার পঞ্চায়েত নির্বাচনের আধিকারিকদের চিঠি দিয়ে বিষয়টা জানিয়ে দেয়। এর পরেও আপের নামে কী ভাবে মনোনয়ন জমা নেওয়া হল, তা নিয়েই প্রশ্ন তুলেছেন সঞ্জয়। আপের প্রার্থী হওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় দলের শংসাপত্র কী ভাবে জোগাড় করা হয়েছে তা নিয়েও চিন্তিত আপ। ইতিমধ্যেই দলের পক্ষে খোঁজ নেওয়া শুরু হয়েছে। আপ সূত্রে জানা গিয়েছে, মুর্শিদাবাদ জেলার দুই প্রার্থীর খোঁজও দল পেয়ে গিয়েছে। সকলের নাম জানা হয়ে গেলে দলের পক্ষেও প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন আপের রাজ্য ও কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব।
—নিজস্ব চিত্র।
প্রসঙ্গত, গত মে মাসেই তৃণমূলের সর্বময় নেত্রী তথা মমতার সঙ্গে বৈঠক করে গিয়েছেন আপ প্রধান কেজরীওয়াল। আলোচনা হয়েছে লোকসভা নির্বাচনে জোটবদ্ধ লড়াইয়ের। এর পরে পঞ্চায়েত ভোট ঘোষণার পরে কৌতূহল তৈরি হয়েছিল, বাংলায় খাতা খুলতে আগ্রহী আম আদমি পার্টি পঞ্চায়েত ভোটে লড়বে কি না, তা নিয়ে।
গত বছর পঞ্জাব বিধানসভা দখলের পরে আপ বাংলার দিকে বিশেষ ভাবে নজর দেয়। তাদের লক্ষ্যই ছিল পঞ্চায়েত নির্বাচনে লড়াই করা। সেই সময়ে আপের তরফে জানানো হয়েছিল, বাংলার যেখানে যেখানে ভাল প্রার্থী পাওয়া যাবে, সেখানেই পঞ্চায়েতে লড়াই হবে। এই রাজ্যে মূল লড়াই যে তৃণমূলের বিরুদ্ধে হবে, তা-ও ইঙ্গিতে বুঝিয়েছিলেন আপ নেতারা। কর্মসংস্থান থেকে শিক্ষা ক্ষেত্রে বাংলায় তৃণমূল সরকারের বিভিন্ন ত্রুটি ধরে আন্দোলনের সিদ্ধান্তও নেওয়া হয়। সেই মতো কিছু আন্দোলনে নামতেও দেখা যায় আপ নেতৃত্বকে। কিন্তু বর্তমান পরিস্থিতিতে কেজরীওয়ালের দল জানিয়ে দেয়, পশ্চিমবঙ্গে পঞ্চায়েত নির্বাচনে প্রার্থী দেবে না তারা। জানা যায়, ২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনের দিকে তাকিয়ে জাতীয় স্তরে যে জোট গঠনের আবহ তৈরি হয়েছে, সেই পরিস্থিতিতে বাংলায় তৃণমূলের জয়ের পথে কোনও রকম ‘বাধা’ হয়ে না দাঁড়াতেই এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছে আপ। সেই সময়ে সঞ্জয় আনন্দবাজার অনলাইনকে বলেছিলেন, ‘‘আমাদের আসল লড়াই বিজেপির বিরুদ্ধে। তাই আমরা চাই, যে রাজ্যে যে দল শক্তিশালী, তারাই লড়াই করবে। এই নীতির কারণেই পশ্চিমবঙ্গের পঞ্চায়েত নির্বাচনে আমরা প্রতিদ্বন্দ্বিতা করব না। এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন দলের শীর্ষ নেতৃত্ব।’’ সেই কথা মনে করিয়ে সঞ্জয় শনিবার জানান, দলের নীতিতে কোনও পরিবর্তন হয়নি। ফলে ১৩টি মনোনয়নকে সহজ চোখে দেখা হবে না।