(বাঁ দিকে) সিপিএম নেতা তন্ময় ভট্টাচার্য। আইএসএফ বিধায়ক তথা ফুরফুরা শরিফের পিরজাদা নওশাদ সিদ্দিকি (ডান দিকে)। —ফাইল ছবি।
মহিলা সাংবাদিককে হেনস্থার ঘটনায় তিনি এখন দলের প্রাথমিক সদস্যপদ থেকে নিলম্বিত (সাসপেন্ডেড)। তার মধ্যেই নতুন বিতর্কে জড়িয়ে পড়লেন সিপিএম নেতা তন্ময় ভট্টাচার্য। ইসলাম সম্পর্কে তাঁর একটি মন্তব্য ঘিরে কড়া প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন ভাঙড়ের আইএসএফ বিধায়ক তথা ফুরফুরা শরিফের পিরজাদা নওশাদ সিদ্দিকি। যার পরে তন্ময়কে ঘিরে নতুন করে ‘জলঘোলা’ শুরু হয়েছে দলের মধ্যে। প্রসঙ্গত, শুধু তন্ময়ের সমালোচনা করেই থেমে থাকেননি নওশাদ। তিনি দাবি করেছেন, রাজ্য সিপিএমকে এ বিষয়ে অবস্থান স্পষ্ট করতে হবে। যাকে আলিমুদ্দিনের উপর ফুরফুরা শরিফের ‘চাপ’ তৈরির কৌশল বলেই মনে করা হচ্ছে।
সমাজমাধ্যমে নওশাদ লিখেছেন, ‘‘অধুনা নিলম্বিত সিপিএম নেতা, প্রাক্তন বিধায়ক তন্ময় ভট্টাচার্য ইসলাম ধর্ম সম্পর্কে কিছু অবাঞ্ছিত মন্তব্য করেছেন। একটি সাক্ষাৎকারে শুনলাম মানবতার কাণ্ডারী, যুগশ্রেষ্ঠ মহাপুরুষ, বিশ্ব নবী হজরত মুহাম্মাদ (সাঃ)-কে অপমান করার ধৃষ্টতা দেখিয়েছেন। এমনকি, কোরান এবং হাদিস নিয়েও তিনি বক্তব্য দিচ্ছেন। এই সব কুমন্তব্য ও অসার বক্তব্য উপস্থাপন করা অনুচিত। অবিলম্বে এই মন্তব্য প্রত্যাহার করার দাবি করছি।’’ পাশাপাশি নওশাদ লিখেছেন, ‘‘এই বিষয়ে তাঁর দল সিপিএমেরই বা অবস্থান কী?’’
তন্ময়ের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘‘নওশাদের প্রতিক্রিয়া জানতে পেরে আমি তাঁকে লিখিত বার্তা পাঠিয়েছি। আমি বলেছি, আমি কী ভুল বলেছি, তা উনি আমায় ধরিয়ে দিলে আমি ভুল সংশোধন করে নেব।’’ নওশাদ আবার বুধবার সন্ধ্যায় দাবি করেছেন, তিনি তন্ময়ের কোনও বার্তা পাননি।
তন্ময় কী বলেছিলেন? উত্তর দমদমের প্রাক্তন সিপিএম বিধায়কের বক্তব্য, ‘‘আমি বলেছিলাম হজরত মহম্মদ প্রথম জীবনে ধর্মপ্রাণ ছিলেন না। মক্কা থেকে মদিনা, মদিনা থেকে মক্কা সফরের সময়ে তিনি দেখেছিলেন অপশাসন চলছে। তার পরে তিনি তাঁর দর্শন নিয়ে শাসন করা শুরু করেন। আমি তো কাউকে অসম্মান করিনি। আমি বলেছি, সেই সময়ে তিনি যা বলেছিলেন, তা-ই হাদিসে লেখা রয়েছে। ইসলাম যে ধর্ম হিসাবে পৃথিবীতে নবীন, সেটাই বলেছিলাম।’’
গোটা ঘটনা নিয়ে ‘অস্বস্তিতে’ সিপিএম। রাজ্য এবং জেলা সিপিএমের শীর্ষ সারির একাধিক নেতা তন্ময় প্রসঙ্গে মন্তব্য এড়িয়ে গিয়েছেন। রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম সরাসরি না বলেও ঠারেঠোরে বুঝিয়ে দিয়েছেন, সাসপেন্ড হওয়া তন্ময়ের নতুন এই কাণ্ডে তাঁরা বিরক্ত। সেলিম বলেন, ‘‘উনি যা বলেছেন, ব্যক্তিগত ভাবে বলেছেন। সিপিএমের এখন এটা কাজ নয়।’’ অর্থাৎ, দল তন্ময়ের মন্তব্যের কোনও ‘দায়’ নিতে চায়নি।
সিপিএমের নেতাদের ধর্মাচরণ এবং ধর্ম নিয়ে নানা মন্তব্য ঘিরে বিভিন্ন সময়ে বিতর্ক তৈরি হয়েছে। বামফ্রন্ট সরকারে থাকার সময়ে তৎকালীন মন্ত্রী সুভাষ চক্রবর্তী তারাপীঠে গিয়ে পুজো দিয়েছিলেন। সেই প্রসঙ্গে তিনি বলেছিলেন, ‘‘আগে আমি হিন্দু ব্রাহ্মণের সন্তান। তার পরে আমি কমিউনিস্ট।’’ যা নিয়ে তোলপাড় হয়েছিল সিপিএমের মধ্যে। তার কিছু দিন আগেই সুভাষের ক্যানসার ধরা পড়ে। ওই বিতর্কের সময় জ্যোতি বসু মন্তব্য করেছিলেন, ‘‘সুভাষের মৃত্যুভয় ধরেছে।’’ রেজ্জাক মোল্লা দলের রাজ্য কমিটির সদস্য থাকাকালীন হজ করে ফিরে এসে বলেছিলেন ‘‘মার্ক্সের চেয়ে মহম্মদ বড়।’’ সুভাষ এবং রেজ্জাকের মন্তব্য ছিল ধর্মের স্তুতি। তন্ময় বিতর্কে জড়িয়ে পড়েছেন ধর্মীয় ভাবাবেগে আঘাত করার অভিযোগে। যার ‘দায়’ নিচ্ছে না সিপিএম।