তন্ময় ভট্টাচার্যের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক পদক্ষেপের পথে সিপিএম। —ফাইল চিত্র।
তন্ময় ভট্টাচার্যকে ছয় মাসের জন্য দলের প্রাথমিক সদস্যপদ থেকে সাসপেন্ড করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সিপিএম। বুধবার সিপিএমের রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর বৈঠক হয়। ওই বৈঠকেই এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। আগামী ৩০ এবং ৩১ ডিসেম্বর দলের রাজ্য কমিটির বৈঠকে এ বিষয়ে প্রস্তাব পেশ করা হবে। রাজ্য কমিটিতে সংখ্যার যে সমীকরণ, তাতে এই প্রস্তাব পাশ হওয়া শুধু সময়ের অপেক্ষা। তবে তন্ময় সিপিএমের উত্তর ২৪ পরগনার জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য। তাই তাঁর সাসপেনশনে অনুমোদন প্রয়োজন কেন্দ্রীয় কমিটির। তবে সেটিও একেবারেই ঔপচারিকতা বলে মনে করা হচ্ছে। রাজ্য কমিটি সিলমোহর দেওয়ার পর সেই প্রস্তাবে কেন্দ্রীয় কমিটি অনুমোদন না দেওয়ার নজির সিপিএমে সচরাচর নেই।
এক মহিলা সাংবাদিককে হেনস্থার অভিযোগ উঠেছে তন্ময়ের বিরুদ্ধে। অভিযোগটি প্রকাশ্যে আসে গত ২৭ অক্টোবর। ফেসবুক লাইভে এক মহিলা সাংবাদিক অভিযোগ করেন, সাক্ষাৎকার নেওয়ার সময়ে তন্ময় তাঁর ‘কোলে বসে পড়েন’। ওই ঘটনার পর সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম জানিয়েছিলেন, অভিযোগ খতিয়ে দেখে তদন্ত করবে দলের অভ্যন্তরীণ তদন্ত কমিটি। সেই কমিটি সদ্য তদন্ত শেষ করে রিপোর্ট জমা দিয়েছে। তদন্ত শেষের পর সিপিএম তন্ময়ের উপর থেকে সাসপেশন প্রত্যাহারও করে নেয়। তখন অনেকেই ভেবেছিলেন তন্ময়ের আর শাস্তি হবে না।
কিন্তু ‘দোষ’ পাওয়া গেলে তন্ময়কে যে দল শাস্তি দেবেই, তা স্পষ্ট হয়ে গিয়েছিল সেলিমের কথাতেই। যখন দলের মধ্যে তন্ময় প্রসঙ্গে বিভিন্ন প্রশ্ন উঠছিল, তখন সেলিম জানিয়েছিলেন, তদন্তের জন্য সাসপেন্ড করা হয়েছে তন্ময়কে। যত দিন সেই তদন্ত চলবে, তত দিন তন্ময় সাসপেন্ড থাকবেন। সেই মতো তদন্ত শেষের পর সম্প্রতি সাসপেনশন তুলে নেওয়া হয় তাঁর উপর থেকে।
দলের অভ্যন্তরীণ তদন্ত কমিটি ইতিমধ্যে একটি রিপোর্ট জমা দিয়েছে। দলীয় সূত্রে খবর, তাতে কমিটি জানিয়েছে, তন্ময়ের বিরুদ্ধে মহিলা সাংবাদিকের অভিযোগের অকাট্য প্রমাণ হিসেবে ছবি বা ভিডিয়ো পাওয়া যায়নি। কিন্তু অন্য সাক্ষ্যপ্রমাণ নিয়ে দেখা গিয়েছে, তন্ময়ের এ ধরনের ‘ধারাবাহিক প্রবণতা’ রয়েছে। শুধু সাংবাদিক মহলে নয়, দলের মধ্যেও এ ধরনের কথা রয়েছে বলে জানতে পেরেছে কমিটি। সিপিএমের অভ্যন্তরীণ তদন্ত কমিটি রিপোর্টে স্পষ্ট বলেছে, অশালীন এবং অভব্য আচরণের জন্য তন্ময়ের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক পদক্ষেপ করা হোক। সেই মতোই ৬ মাসের জন্য দলের প্রাথমিক সদস্যপদ থেকে তাঁকে সাসপেন্ড করার পথে এগোচ্ছে সিপিএম।
দলের এই শাস্তিমূলক পদক্ষেপের ফলে তন্ময় উত্তর ২৪ পরগনার জেলা সম্মেলনে যেতে পারবেন না। তন্ময়-ঘনিষ্ঠদের বক্তব্য, জেলা সম্মেলনে তাঁকে আটকানোর জন্যই দলের একাংশ থেকে অন্তর্ঘাত হয়েছে। তন্ময়ের শাস্তি পাওয়ার গুঞ্জন সিপিএমের মধ্যে রটতেই তাঁর ঘনিষ্ঠেরা এই তত্ত্ব তুলে ধরতে শুরু করেছেন।