পঞ্চমুণ্ডির আসনে অধিষ্ঠিতা দেবীর পুজো করা হয় তন্ত্রমতে। —নিজস্ব চিত্র।
হাজার বছরের পুরনো জিরাটের ডাকাতকালী মন্দিরেই নাকি সতীর দেহাংশ পড়েছিল। হুগলি জেলার এই প্রাচীন মন্দির পরিচিত দেবীর শক্তিপীঠ হিসাবে। একে দেবীর বলয়পীঠ বলেও দাবি করেন স্থানীয়েরা।
পুরাণ অনুসারে, সতীর দেহাংশ যে সব জায়গায় পড়েছে, সেগুলি শক্তিপীঠ। এবং হাতের বালা বা বলয় যেখানে পড়েছিল, সেগুলি বলয়পীঠ।
এই মন্দিরটি জিরাটের কেলে ডাকাতের নামেই পরিচিতি পেয়েছে বলেও কথিত। কথিত, এককালে জিরাটের কালিয়াগড়ে বসবাস করতেন কেলে ডাকাত। এই ডাকাতকালী তাঁরই হাতে প্রতিষ্ঠা পেয়েছিলেন বলে কথিত। কালীর গড় থেকে এ স্থানের নাম হয়েছিল কালিয়াগড়।
জিরাটের এ মন্দিরটি কেলে ডাকাতের নামে পরিচিতি পেয়েছে বলে কথিত। —নিজস্ব চিত্র।
এ মন্দিরের সঙ্গে জড়িত রয়েছে আরও ইতিহাস। এককালে এ মন্দিরের পাশ দিয়ে গঙ্গা বইত। কালের নিয়মে গঙ্গার দিক পরিবর্তন হওয়ায় সে নদী অস্তিত্ব হারিয়েছে। কিন্তু মন্দির লাগোয়া গঙ্গার ঘাট এখনও প্রমাণ দেয় অতীত ইতিহাসের। শোনা যায়, কেলে ডাকাতের মৃত্যুর পর দেবীর শক্তিপীঠ পরিত্যক্ত জঙ্গলে পরিণত হয়। অনেকের দাবি, প্রায় ৬০০ বছর আগে নদিয়া জেলার এক বাসিন্দা আত্মহত্যা করার জন্য গঙ্গার পূর্ব প্রান্তে ঝাঁপ দেন। অলৌকিক ভাবে ভাসতে ভাসতে তিনি পৌঁছন নদীর পশ্চিম পাড়ে জিরাটের ডাকাতকালী মন্দিরে। আবার কালীর পুজো করার জন্য স্বপ্নাদেশ পান তিনি। তার পর থেকেই এ মন্দিরে আবার কালীর আরাধনা শুরু হয়।
মন্দির কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, কয়েক বছর অন্তর দেবীর অঙ্গরাগ করানো হয়। যদিও প্রাচীনকালের মূল কাঠামোটি আজও অক্ষত। পঞ্চমুণ্ডির আসনে অধিষ্ঠিতা দেবীর পুজো করা হয় তন্ত্রমতে। পারিবারিক হস্তক্ষেপে বলি দেওয়া বন্ধ হলেও বিশেষ অনুষ্ঠান বা মানত উপলক্ষে সীমিত ভাবে তার আয়োজন করা হয় বলে মন্দির সূত্রে খবর। সম্প্রতি কালী মন্দিরটি সংস্কার করা হয়েছে। কালীপুজোর দিন নিয়ম নেমে হোম-যজ্ঞের মধ্যে দিয়ে পুজো করা হয়।