কোভিডকালে রাজ্যে চিকিৎসা পরিষেবা দিতে, জোর দেওয়া হয়েছিল টেলিমেডিসিন পরিকাঠামোয়। তবে এবার তার সুফল বাকি রোগীরাও পাচ্ছেন।
প্রতীকী চিত্র।
খুব দ্রুত গতিতে ফাঁকা রাস্তায় গেলেও সময় লাগত অন্তত একটি ঘণ্টা। কারণ কলকাতা থেকে বারাসতের দূরত্ব প্রায় ২৬ কিলোমিটার। কিন্তু এক জন ব্রেনস্ট্রোকের রোগীর ক্ষেত্রে সেই এক ঘণ্টাও বিপদসঙ্কুল। যে কোনও মুহূর্তে পরিস্থিতির অবনতি হতে পারে। দ্রুত চিকিৎসা শুরু করতে এবং দামি সময় বাঁচাতে তাই রোগীকে শহরে নিয়ে যাওয়ার বদলে শহরের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদেরই এনে ‘হাজির’ করা হল রোগীর কাছে। স্বাস্থ্য দফতরের টেলি মেডিসিন পরিষেবার সাহায্যে ঘণ্টাখানেকের দূরত্ব ঘুচিয়ে কয়েক মিনিটেই শুরু করা গেল জীবনদায়ী চিকিৎসাও।
বুধবার দুপুরে ব্রেন স্ট্রোকে আক্রান্ত আমডাঙার বাসিন্দা শেখ আবদুর রহমানকে আনা হয়েছিল বারাসত হাসপাতালে। এই রোগে আক্রান্ত হওয়ার প্রথম চার ঘণ্টার মধ্যেই রোগ নির্ণয় করা এবং দ্রুত রক্ত তরল করার ইঞ্জেকশন দেওয়া জরুরি। না দিলে প্রাণনাশেরও আশঙ্কা থাকে। একই সঙ্গে ওষুধ প্রয়োগের জন্য প্রয়োজন পড়ে বিশেষজ্ঞ স্নায়ু চিকিৎসকের মতামত এবং প্রেসক্রিপশনেরও। এই পরিস্থিতিতে রোগীর অবস্থা আন্দাজ করেই দ্রুত সিদ্ধান্ত নেন বারাসত হাসপাতালের সুপার সুব্রত মণ্ডল। তিনি প্রথমে গ্রিন করিডর তৈরি করে হাসপাতাল থেকে সিটি স্ক্যান দ্রুত করানোর ব্যবস্থা করেন। তার পর টেলি মেডিসিন পরিষেবার সাহায্যে সেই স্ক্যান রিপোর্ট পাঠিয়ে দেন কলকাতার বাঙুর ইন্সিটিউট অব নিউরোলজিতে।
এর পর বাঙুরে স্নায়ু চিকিৎসক বিমান রায়-সহ চিকিৎসকদের একটি দল রিপোর্ট দেখে মতামত দেন টেলি মেডিসিন পরিষেবার সাহায্যেই। তারা বলে দেন, রোগীর মস্তিষ্কে রক্ত ক্ষরণ হয়নি রক্ত তঞ্চন হয়েছে। অর্থাৎ রক্ত জমাট বেঁধে গিয়েছে। তাই রহমানকে দ্রুত ইঞ্জেকশন দেওয়া দরকার। বাঙুরের চিকিৎসকদের পরামর্শ মতোই রোগীর চিকিৎসা শুরু করেন বারাসত হাসপাতালের চিকিৎসকরা। রাজ্যের স্বাস্থ্য অধিকর্তা অজয় চক্রবর্তী জানান, রোগী গ্রিন করিডরের মাধ্যমে সিটি স্ক্যান করে হাসপাতালে ফেরার আধ ঘণ্টার মধ্যেই তাঁকে ওই ইঞ্জেকশনটি দেওয়া গিয়েছে।
প্রসঙ্গত, কোভিডকালে রাজ্যে চিকিৎসা পরিষেবা দিতে, জোর দেওয়া হয়েছিল টেলি মেডিসিন পরিকাঠামোয়। তবে এ বার তার সুফল বাকি রোগীরাও পাচ্ছেন। স্বাস্থ্য অধিকর্তা জানিয়েছেন, টেলি মেডিসিনের সাহায্যে আগামী দিনে স্নায়ু রোগীর ভাল ভাবে চিকিৎসা করা যাবে। কলকাতা থেকে দূরে থেকেও শহরের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের পরামর্শ নিতে পারবেন দূর দূরান্তের রোগীরা।