মলয় দাসের দেওয়া জমিতে দমকল কেন্দ্রের শিলান্যাস মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের। নিজস্ব চিত্র
কাছেপিঠে দমকল নেই। আগুন লাগলে সব শেষ। এত কাল এটাই ভবিতব্য বলে ধরে নিয়েছিলেন পশ্চিম মেদিনীপুরের সবংয়ের বাসিন্দারা। সেই ভাবনার মোড় ঘুরিয়ে দিলেন এক ব্যবসায়ী। এলাকায় দমকল কেন্দ্র গড়ে তোলার জন্য ১ বিঘারও বেশি জায়গা দান করলেন তিনি। বুধবার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের হাতে হল ওই প্রকল্পের শিলান্যাস।
আর পাঁচটা সরকারি প্রকল্পের শিলান্যাস যেমন ভাবে হয়, বুধবার সবংয়ের বোনাই গ্রামে ছিল তেমন অনুষ্ঠান। কিন্তু তার ইতিবৃত্ত লেখা হল ভিন্ন কাহিনি দিয়ে। সবংয়ের খুব কাছে যে দমকল কেন্দ্র রয়েছে তা খড়্গপুরে। সবং থেকে সেখানকার দূরত্ব ৫৩ কিলোমিটার। অগ্নিকাণ্ডের খবর পেয়ে ঘটলাস্থলে দমকল পৌঁছতে খুব কম করে হলেও সময় লাগে ঘণ্টাখানেক। কিন্তু তত ক্ষণে আগুনের গ্রাসে চলে যায় সব কিছু। এমন অভিজ্ঞতা ইতিপূর্বে ঘটেওছে সবংবাসীর। তাই দীর্ঘ দিন ধরেই এলাকায় দমকল কেন্দ্র স্থাপনের দাবি উঠছিল। স্থানীয় বাসিন্দাদের সেই দাবিকে প্রতিষ্ঠিত করতে এগিয়ে এলেন সবংয়েরই ব্যবসায়ী মলয় দাস।
গ্রিল তৈরির কারখানা রয়েছে সবংয়ের ৩ নম্বর দাদরা গ্রাম পঞ্চায়েতের দাতুরদা গ্রামের বাসিন্দা মলয়ের। এলাকায় দমকল কেন্দ্র তৈরির জন্য জায়গা দান করেছেন তিনি। ১ বিঘারও বেশি ওই জায়গার বাজার মূল্য প্রায় ১ কোটি টাকা। বুধবার ভার্চুয়াল মাধ্যমে পুরুলিয়া থেকে যে কেন্দ্রের শিলান্যাস করেছেন মুখ্যমন্ত্রী স্বয়ং।
সাধারণ মধ্যবিত্ত পরিবার মলয়ের। নানা সামাজিক উন্নয়নমূলক কাজকর্মে জমি দানের ইতিহাস তাঁর পরিবারের সঙ্গে জড়িয়ে। ষাটোর্ধ্ব মলয় বললেন, ‘‘আমার দাদু এলাকায় স্কুল এবং ডাকঘরের তৈরির জন্য জমি দান করেছিলেন। আমি এর আগে একটি প্রাথমিক স্কুলের জন্য জমি দান করেছি। যখন জানতে পারি, এলাকায় দমকল কেন্দ্র হবে, তখনই মনস্থির করি জমি দান করব।’’ এ হেন মলয়কে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রীও।
গত বছর ২ সেপ্টেম্বর জমি হস্তান্তর করেন মলয়। তাঁর কথায়, ‘‘দীর্ঘদিন ধরে পড়েছিল জমিটি। এলাকার মানুষের উপকার হবে জেনেই সরকারকে দান করেছি।’’ এলাকায় দমকল কেন্দ্র হলে শুধু সবং নয়, পিংলা, ডেবরা, নারায়ণগড়, বেলদা, পূর্ব মেদিনীপুরের পটাশপুর, ভগবানপুরের মতো এলাকায় দ্রুত পৌঁছে যেতে পারবে দমকলের ইঞ্জিন। তাই মলয়ের এই উদ্যোগকে স্বাগত জানাচ্ছেন সকলেই।
সাংসদ, বিধায়ক, জেলাশাসক, পুলিশ সুপার-সহ সরকারি আধিকারিক এবং জনপ্রতিনিধিদের সমাগম। উৎসাহ-উদ্দীপনায় বুধবার বোনাই গ্রামে সাধারণ মানুষের ভিড়ও ভেঙে পড়েছিল। কিন্তু আলোকবৃত্তে সেই মলয়। সাধারণ জীবনে এমন ‘অসাধারণ’ একটি দিন পেয়ে উচ্ছ্বসিত মলয়ের স্ত্রী মিতালিও।