—প্রতিনিধিত্বমূলক ছবি।
আর জি কর-কাণ্ডের প্রভাব পড়েছে দুর্গোৎসবে। ইতিমধ্যেই রাজ্য জুড়ে বহু পুজো কমিটি পুজোয় আড়ম্বর কম রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। ভাঙড়েও একাধিক পুজো কমিটি বাজেটে কাটছাঁট করে পুজো করছেন। পুজোর বাজেট কমিয়ে বন্যা-বিধ্বস্ত মানুষজনের পাশে দাঁড়ানোরও বার্তা দিচ্ছেন অনেকে। এর মধ্যেই টানা বৃষ্টিতে ব্যাহত হচ্ছে আয়োজন। চিন্তা বাড়ছে উদ্যোক্তাদের।
এ বছর জানুয়ারি মাস থেকে ভাঙড় কলকাতা পুলিশের অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। আলাদা ভাঙড় ডিভিশন তৈরি করা হয়েছে। ভাঙড় ১ ও ২ ব্লকের ৮টি থানা এলাকার মধ্যে ভাঙড় ও চন্দনেশ্বর থানা এলাকায় ৭৪টি দুর্গাপুজো হচ্ছে। অন্য দিকে, উত্তর কাশীপুর থানা এলাকায় ৩৩টি পুজো হচ্ছে। পোলেরহাট ও হাতিশালা থানা এলাকায় ৪০টি পুজো হচ্ছে। এর মধ্যে বড় বাজেটের বেশ কয়েকটি পুজো রয়েছে।
ভাঙড়ের কালিকাপুর মায়ের আশ্রম পুজো কমিটির মণ্ডপ, প্রতিমা, আলোকসজ্জা, থিম দেখতে প্রতি বছর বহু মানুষ ভিড় করেন। এ বছর তাদের পুজো ৭২ বছরে পড়েছে। উদ্যোক্তারা জানান, টানা বৃষ্টির কারণে প্রায় সমস্ত কাজ থমকে গিয়েছে। কাগজ, রং, প্লাই দিয়ে মণ্ডপ সজ্জা— বৃষ্টিতে সব নষ্ট হয়ে গিয়েছে। পুজো কমিটির সম্পাদক পূর্ণেন্দু অধিকারী বলেন, “এ বছর চার দিকে যা পরিস্থিতি, তার জন্য আমরা পুজোর বাজেটে কাটছাঁট করছি। আর জি কর-কাণ্ডের জেরে এলাকার মা-বোনেদের মনে আনন্দ নেই। তাঁদের কথা চিন্তা করেই এ বার পুজো হচ্ছে অনাড়ম্বর। তা ছাড়া বন্যা, প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে অসহায় দুঃস্থদের পাশে থাকার চেষ্টা করছি। পুজোর বাজেট কমিয়ে সেই টাকা দিয়ে তাদের নতুন বস্ত্র দেওয়ার ব্যবস্থা করা হচ্ছে।”
উত্তর কাশীপুর থানার শতধারা প্রমিলা সঙ্ঘের পুজোর থিম ‘মঙ্গলময়ী’। মণ্ডপ তৈরি হচ্ছে বাঁশের তৈরি কুলো, ঝুড়ি, মাটির প্রদীপ, বিভিন্ন ধরনের মুখোশ দিয়ে। উদ্যোক্তারা জানান, টানা বৃষ্টিতে মণ্ডপ সজ্জার কাজ করা যাচ্ছে না। মণ্ডপ তৈরিতে ব্যবহৃত সমস্ত জিনিস বৃষ্টিতে ভিজে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। বৃষ্টিতে মণ্ডপ সজ্জার কাজ করতে চাইছেন না ডেকরেটরের লোকজন। বৃষ্টির জন্য অতিরিক্ত মজুরি চাইছেন। মহিলা পরিচালিত এই পুজো কমিটির সভাপতি পাপিয়া চক্রবর্তী বলেন, “তিলোত্তমার জন্য আমরা মায়ের কাছে ন্যায়বিচার প্রার্থনা করব। আর কোনও মায়ের কোল যেন খালি না হয়। সমাজে যেন এই ধরনের ঘটনা আর না হয়, সে জন্যই আমাদের পুজোর থিম, মঙ্গলময়ী।”
গত বারের তুলনায় এ বার ভাঙড়ের অনেক জায়গাতেই প্রতিমার বায়না কমেছে বলে দাবি। মৃৎশিল্পীরা জানান, অনেক ছোট পুজো কমিটিই এ বার পুজো বন্ধ রেখেছে। ভাঙড়ের পাঁচগাছিয়া গ্রামের মৃৎশিল্পী সুজয় পাল বলেন, “গত বছর চল্লিশটি দুর্গা প্রতিমার অর্ডার পেয়েছিলাম। এ বছর অর্ডার অর্ধেকেরও কম। এখনও মাত্র ১৫টি অর্ডার পেয়েছি। আর জি করের ঘটনার প্রতিবাদ, প্রাকৃতিক দুর্যোগ, বন্যা সব মিলিয়ে এ বার অনেক ছোট ছোট কমিটি পুজো বন্ধ রেখেছে। যে কারণে সমস্যা হয়েছে।”