প্রতীকী ছবি।
বিভিন্ন অসুস্থতায় গ্রামের মানুষ আজও নির্ভর করেন ওঝা-গুনিনের উপর। জন্ডিস হলে যেমন এখনও অনেকের ভরসা গুনিনের দেওয়া বিশেষ এক প্রকার শিকড়ের মালা। বলা হয় সেই মালা ধীরে ধীরে বড় হলেই বুঝতে হবে রোগ সারছে। আসলে এর মধ্যে কোনও সারবত্তা নেই। সবই ওঝা-গুনিনদের বুজরুকি। রোগ হলে চিকিৎসকের কাছে যাওয়া দরকার। শুক্রবার জয়নগর থানা আয়োজিত স্বাস্থ্যমেলায় আসা মানুষজনকে এ কথাই বোঝালেন সমরেন্দু চক্রবর্তী। দক্ষিণ বারাসতের বাসিন্দা পেশায় পুলিশ কর্মী সমরেন্দু যুক্তিবাদী সংগঠনের হয়ে দীর্ঘ দিন ধরেই এই কাজ করে আসছেন।
এ দিন শিকড়ের মালা এনে হাতে কলমে লোকজনকে বোঝান, নির্দিষ্ট নিয়মেই মালার পরিধি বাড়ে। এর সঙ্গে রোগ সারার কোনও সম্পর্ক নেই। জন্ডিসে ওঝা-গুনিনের কাছে গেলে অনেক ক্ষেত্রে শরীর থেকে হলুদ জল বের করে দেওয়া হয়। এই পদ্ধতিও যে আসলে বুজরুকি, তা এ দিন হাতে কলমে প্রমাণ করেন তিনি। প্রচলিত নানা কুসংস্কার নিয়েও মানুষকে বোঝান।
সমরেন্দুর কথায়, ‘‘সমাজে অনেক কুসংস্কার চেপে বসে আছে। মানুষ একটু সচেতন হলেই সেগুলিকে উপড়ে ফেলা সম্ভব। সেই চেষ্টাই করছি।’’ দেহ দান, চক্ষুদানেও মেলায় আসা মানুষকে উৎসাহ দেন সমরেন্দু। তাঁর কথায়, ‘‘মরণোত্তর চোখ বা অঙ্গ দানের গুরুত্ব অপরিসীম। সেটাই মানুষকে বোঝাচ্ছি। অনেকেই উৎসাহ দেখিয়ে ফর্ম নিয়ে গিয়েছেন।’’ পুলিশ সূত্রে খবর, এ দিন প্রায় ২৫ জন দেহ ও চক্ষু দানের ফর্ম সংগ্রহ করেছেন।
থানা প্রাঙ্গণেই এ দিন এই মেলার আয়োজন করে পুলিশ। বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের এনে বিনামূল্যে চিকিৎসার ব্যবস্থা হয়। চিকিৎসার পাশাপাশি সুগার, প্রেসার মাপা, ইসিজির ব্যবস্থা ছিল। চিকিৎসকদের পরামর্শ মতো ওষুধও দেওয়া হয় থানা থেকে। স্থানীয় দু’টি নার্সিংহোম এ দিন পুলিশের এই উদ্যোগে সাহায্যের হাত বাড়ায়। পাশে ছিল সরকারি স্বাস্থ্যকেন্দ্রও।
জয়নগর থানার আইসি অতনু সাঁতরা বলেন, ‘‘এলাকার মানুষ যাতে এক ছাদের নীচে এই পরিষেবাগুলি পেতে পারে, সে কথা মাথায় রেখেই পুলিশের তরফে এই স্বাস্থ্যমেলার আয়োজন করা হয়েছে। এলাকার নার্সিংহোম, সরকারি হাসপাতালের চিকিৎসকেরা আমাদের পাশে দাঁড়িয়েছেন।’’
পুলিশ সূত্রের খবর, এ দিন চক্ষু পরীক্ষায় যাদের চোখে সমস্যা ধরা পড়েছে, তাঁদের বিনামূল্যে চশমা দেওয়া হবে। এ ছাড়াও, যাঁদের প্রয়োজন, তাঁদের অপারেশনেরও ব্যবস্থা করবে পুলিশ। বেশ কিছু দিন ধরেই এলাকায় মাইকে স্বাস্থ্যমেলার প্রচার করে পুলিশ। এর জেরে এ দিন থানা প্রাঙ্গণ উপচে পড়ে ভিড়ে। পুলিশ জানায়, অন্তত দেড় হাজার মানুষ এ দিন বিভিন্ন ক্ষেত্রে পরিষেবা নিয়েছেন।