জমায়েত: দুয়ারে সরকার প্রকল্পে আবেদনের ভিড়। দত্তপুকুর টালিখোলায়। ছবি: সুদীপ ঘোষ।
প্রথম দু’দিনের মতো বুধবারও দুয়ারে সরকার কর্মসূচিতে দুই জেলার বিভিন্ন শিবিরে উপচে পড়ল ভিড়। ভিড় সামাল দিতে কোথাও কোথাও হিমসিম খেতে হয় পুলিশকে। দূরত্ববিধি ভুলে একে অন্যের গা ঘেঁষে লাইনে দাঁড়াতে দেখা যায় অনেককে। প্রশাসনের তরফে অবশ্য মাস্ক বিলি হয়েছে কিছু জায়গায়। সচেতন থাকতে প্রচারও চালানো হয়।
প্রশাসন সূত্রের খবর, প্রথম দু’দিনেই উত্তর ২৪ পরগনায় দুয়ারে সরকার শিবিরে এসেছেন প্রায় ২ লক্ষ মানুষ। দক্ষিণ ২৪ পরগনাতেও সংখ্যাটা প্রায় এক। দুই জেলাতেই অধিকাংশ আবেদন হয়েছে লক্ষ্মীর ভান্ডার প্রকল্পে।
ডায়মন্ড হারবার মহকুমা প্রশাসন সূত্রের খবর, তিন দিনে মহকুমার প্রায় ১ লক্ষ ৮৬ হাজার উপভোক্তা দুয়ারে সরকার শিবির থেকে পরিষেবা পেয়েছেন। কাকদ্বীপ মহকুমায় বিভিন্ন ব্লক ও পঞ্চায়েত মিলিয়ে প্রায় ২৫টি শিবির থেকে এখনও পর্যন্ত পরিষেবা পেয়েছেন ৬০ হাজার মানুষ। এর মধ্যে ৭০ শতাংশই লক্ষ্মীর ভান্ডার প্রকল্পে। ক্যানিং মহকুমার ক্যানিং ১, বাসন্তী ও গোসাবা ব্লকে প্রায় ২৮ হাজার আবেদন জমা পড়েছে লক্ষ্মীর ভান্ডার প্রকল্পে। গত সোম ও মঙ্গলবারের হিসেব অনুযায়ী, ক্যানিং ১ ব্লকে ১০২২৩টি আবেদন জমা পড়েছে লক্ষ্মীর ভান্ডার প্রকল্পে। বাসন্তী ব্লকে আবেদন জমা পড়েছে প্রায় ১২ হাজার। গোসাবায় এই প্রকল্পে আবেদন জমা পড়েছে ৬৮৩০টি। মঙ্গলবার ভাঙড় ২ ব্লকে লক্ষ্মীর ভান্ডারে ৫,৪০০টি আবেদনপত্র জমা পড়ে। ভাঙড় ১ ব্লকে প্রায় এক হাজার আবেদনপত্র জমা পড়ে এই প্রকল্পে। ক্যানিং ২ ব্লকে এ দিন মোট আবেদনপত্র জমা পড়ে প্রায় ৮ হাজার। এর মধ্যে শুধু লক্ষ্মীর ভান্ডার প্রকল্পের জন্য ৬,৯০০টি আবেদনপত্র জমা পড়েছে।
সোমবার ভাঙড় ২ ব্লকের শানপুকুর পঞ্চায়েত এলাকায় একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে দুয়ারে সরকার শিবির চলাকালীন আশেপাশের অন্য এলাকা থেকেও ৩-৪ হাজার মানুষ হঠাৎ ভিড় করে বিশৃঙ্খলা তৈরি করেন। অভিযোগ, কবে কোথায় শিবির হবে সে ব্যাপারে জনপ্রতিনিধিরা এলাকায় প্রচার করেননি। এর জেরেই সমস্যা তৈরি হয়। বিভিন্ন শিবিরে বিধি মানাতে প্রশাসনের তৎপরতা অবশ্য বেড়েছে। বাসন্তীর একাধিক শিবিরে পুলিশকে মাস্ক বিলি করতে দেখা যায়। সচেতন থাকতে প্রচারও চালানো হয়। একই ছবি চোখে পড়েছে জেলার অন্যত্রও।
সোম ও মঙ্গলবার উত্তর ২৪ পরগনা জেলায় আবেদন করতে এসেছেন ২ লক্ষের বেশি মানুষ। জেলা প্রশাসন সূত্রে জানানো হয়েছে, আবেদনের বেশিরভাগই লক্ষ্মীর ভান্ডার প্রকল্পে। প্রথম দু’দিনের মতো বুধবারও জেলার শিবিরগুলিতে ভিড় উপচে পড়ে। সামাল দিতে পুলিশ মোতায়েন করা হয়। এদিন বনগাঁ সহ জেলার বিভিন্ন এলাকায় রাস্তায় জনবহুল এলাকায় শিল্পীদের খোল-কত্তাল বাজিয়ে দুয়ারে সরকার কর্মসূচির প্রচার করতে দেখা গিয়েছে। জেলার শিবিরগুলিতে শারীরিক দূরত্ববিধি বজায় না থাকলেও মাস্ক পরার প্রবণতা বেড়েছে। অনেক শিবিরে মাস্ক ছাড়া কাউকে ঢুকতে দেওয়া হয়নি।
বসিরহাট ১ ব্লকের সীমান্তবর্তী গাছা, আখাড়পুর পঞ্চায়েত এলাকায় ভোর থেকে লাইন পড়ে যায়। ভিড় সামলাতে হিমসিম খেতে হয় পুলিশকে। অনেক জায়গাতেই দীর্ঘক্ষণ লাইনে দাঁড়াতে হয় মানুষকে। হিঙ্গলগঞ্জ ব্লকের যোগেশগঞ্জ পঞ্চায়েতের হেমনগরের একটি শিবিরে আবেদন করতে আসা পাপিয়া মজুমদার বলেন, “সকালে এসেও দেখি খুব লম্বা লাইন। আবেদন জমা দিতে দিতে ৩টে বেজে গেল।” এ দিন হিঙ্গলগঞ্জ ব্লকে প্রায় ২ হাজার ও সন্দেশখালি ১ ব্লকে প্রায় আড়াই হাজার আবেদন জমা পড়েছে লক্ষ্মীর ভান্ডার প্রকল্পে।