সুসজ্জিত: পুজোর কার্নিভালে যোগ দিয়েছেন মহিলারা। শুক্রবার হাবড়ায় ছবিটি তুলেছেন সুজিত দুয়ারি
দক্ষিণ ২৪ পরগনার বেশ কিছু পুজো কমিটিকে নিয়ে শুক্রবার কুলপিতে অনুষ্ঠিত হল বিসর্জনের কার্নিভাল। দুর্গাপুজোর বিসর্জনে জেলাভিত্তিক কার্নিভালের আয়োজন এই প্রথম দক্ষিণে। কার্নিভালের জেরে যান চলাচল বন্ধ থাকায় নাকাল হয়েছেন বহু মানুষ।
জেলার বিভিন্ন প্রান্তের ২০টি পুজো কমিটি কার্নিভালে যোগ দিয়েছিল। গোপালনগর মোড় থেকে বিকেল ৪টে নাগাদ শুরু হয় শোভাযাত্রা। প্রায় দেড় কিলোমিটার পথ পেরিয়ে কুলপি বিডিও মোড়ে এসে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হয়। সেখানে মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন মন্ত্রী, জেলাশাসক-সহ প্রশাসনের কর্তারা। শোভাযাত্রা দেখতে রাস্তার দু’ধারে বহু মানুষ ভিড় করেন। মূল অনুষ্ঠান মঞ্চের কাছেও ছিল থিকথিকে ভিড়। কার্নিভাল দেখতে আসা শ্যামসুন্দর হালদার বলেন, “আমরা এলাকার বাইরে সে ভাবে ঠাকুর দেখতে যেতে পারি না। কার্নিভালের সৌজন্যে এক জায়গাতেই জেলার বড় ঠাকুরগুলি দেখে নিলাম। খুবই ভাল লাগল অনুষ্ঠান।”
সোনারপুরের মানিকপুর বালক সঙ্ঘ সর্বজনীন দুর্গোৎসব কমিটির সম্পাদক রাজীব পুরোহিত বলেন, “দু’টি গাড়িতে আমরা প্রায় ৫০ জন সদস্য এসেছি। কার্নিভালে যোগ দিয়ে ভাল লাগল। নতুন অভিজ্ঞতা।”
এ দিকে, কার্নিভালের জন্য দুপুর থেকে যানবাহন চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়। কার্যত অবরুদ্ধ হয়ে পড়ে ১১৭ নম্বর জাতীয় সড়ক। ডায়মন্ড হারবার থেকে কলকাতামুখী প্রায় কোনও গাড়িই এ দিন চলেনি। ফলে নিত্যযাত্রীদের একাংশ সমস্যায় পড়েন।
কুলপির শ্যামবসুর চকে দীর্ঘক্ষণ গাড়ির অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে ছিলেন হরেন সর্দার। তিনি বলেন, “বহু মানুষ বিভিন্ন কাজে যেতে গিয়ে আটকে পড়েছেন। এ ভাবে মানুষকে বিপদে ফেলার কোনও মানেই হয় না।” অনেকেরই দাবি, রাস্তা আটকে কার্নিভাল না করে, ডায়মন্ড হারবার স্টেডিয়াম বা এ রকম ফাঁকা জায়গায় অনুষ্ঠানের আয়োজন হোক।
প্রশাসন সূত্রের খবর, প্রাথমিক ভাবে ৩৫টি পুজো কমিটির যোগ দেওয়ার কথা ছিল কার্নিভালে। পরে তা কমিয়ে ২৫টি করা হয়। এ দিন অবশ্য শেষ পর্যন্ত কুড়িটি পুজো কমিটি যোগ দিয়েছে।
কেন এল না অন্য কমিটিগুলি?
জেলা প্রশাসনের এক আধিকারিক বলেন, “কার্নিভালে যোগ দিতে গাড়ি ভাড়া, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান বাবদ অতিরিক্ত ৪০-৫০ হাজার টাকা খরচ হচ্ছে। এই খরচের জন্যই কিছু কমিটি শেষ মুহূর্তে পিছিয়ে গিয়েছে। এ ছাড়া, অন্য নানা কারণে কয়েকটি কমিটি আসেনি।”
হাবড়া থানা উৎসব সমন্বয় কমিটি ও হাবড়া পুরসভার পক্ষ থেকেও শুক্রবার কার্নিভালের আয়োজন করা হয়। ১৫টি পুজো উদ্যোক্তা যোগ দেয়। দেশবন্ধু পার্ক থেকে প্রতিমা নিয়ে শোভাযাত্রা যশোর রোড ধরে জয়গাছি পর্যন্ত আসে। সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হয়। জয়গাছি এলাকায় তিনটি জলাশয় নির্দিষ্ট করা ছিল। কার্নিভাল শেষে সেখানে প্রতিমা বিসর্জন দেওয়া হয়েছে।
যশোর রোডে যানবাহন চলাচল বন্ধ রাখা হয়েছিল। তবে বাইক, সাইকেল চলাচল করেছে। বড় গাড়ি বেলগড়িয়া বাইপাস দিয়ে যায়। স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, আগে থেকে মাইকে ঘোষণা করে যানবাহন বন্ধের কথা জানানো হয়েছিল। ফলে বিশেষ অসুবিধায় পড়তে হয়নি।
অশোকনগর-কল্যাণগড় পুরসভা ও বিধায়ক নারায়ণ গোস্বামীর উদ্যোগে অশোকনগরেও এ দিন কার্নিভাল হয়েছে। ২৫টি পুজো কমিটি এসেছিল। কার্নিভাল চলে স্থানীয় নিউমার্কেট থেকে চৌরঙ্গী পর্যন্ত।