আবর্জনা: ছড়িয়ে ছিটিয়ে। — নিজস্ব চিত্র
অকাল বৃষ্টি শেষ পর্যন্ত পিছু ছেড়েছে। বাতাসে হিমেল ছোঁয়া। কিন্তু এই হেমন্তেও ব্যারাকপুর শিল্পাঞ্চলে পিছু ছাড়ল না ডেঙ্গি। বরং দিন কয়েক আগে বুলবুলের প্রভাবে বৃষ্টির জেরে ডেঙ্গি মশার বাড়বাড়ন্ত হয়েছে। লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে ডেঙ্গি রোগীর সংখ্যা।
তথ্য বলছে, গত এক সপ্তাহে কল্যাণী জেএনএম হাসপাতালে ৮০ জন ডেঙ্গি রোগী ভর্তি হয়েছেন। ৬০ জনই ব্যারাকপুর শিল্পাঞ্চল এলাকার। তিন সপ্তাহ ধরে শিল্পাঞ্চলের নৈহাটি, গারুলিয়া, ভাটপাড়া, হালিশহরে, ব্যারাকপুরে ডেঙ্গির দাপট শুরু হয়েছে। দিন দশেক আগে নৈহাটিতে মৃত্যু হয়েছে এক ডেঙ্গি আক্রান্তের।
আচমকা ডেঙ্গির বাড়বাড়ন্তে আতঙ্কিত এলাকার বাসিন্দারা। তাঁদের বক্তব্য, রাজনৈতিক ডামাডোলের কারণে গত তিন-চার মাস পুরসভাগুলিতে কার্যত কোনও কাজ হয়নি। তাঁরা মনে করছেন, সে কারণেই ডেঙ্গির এ হেন বাড়বাড়ন্ত।
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, গত কয়েক দিনে নৈহাটি পুরসভায় ডেঙ্গিতে আক্রান্ত হয়েছেন প্রায় ২০ জন। তার মধ্যে ১৪ জন সুস্থ হয়ে গিয়েছেন। ৪ নম্বর ওয়ার্ডের একটি বাড়ির চার সদস্যই ডেঙ্গিতে আক্রান্ত হয়েছিলেন। সকলকেই ভর্তি করা হয়েছিল নদিয়ার কল্যাণী জেএনএম হাসপাতালে। সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন।
একই অবস্থা ভাটপাড়া পুর এলাকাতেও। গত বছর উত্তর ২৪ পরগনা জেলায় সব থেকে বেশি সংখ্যক মানুষ ডেঙ্গিতে আক্রান্ত হয়েছিলেন এখানে। পুরোপুরি না হলেও এ বার বর্ষায় ডেঙ্গি নিয়ন্ত্রণেই ছিল। বিশেষজ্ঞেরা বলছেন, তার বড় কারণ, বর্ষার দাপট তেমন ছিল না। কিন্তু পুজোর পরে এবং কালীপুজোয় নিম্নচাপের জেরে টানা বর্ষণের পরে ডেঙ্গি রোগীর সংখ্যা বাড়তে থাকে। ভাটপাড়াতেও গত কয়েক দিনে ডেঙ্গিতে আক্রান্ত হয়েছেন অন্তত ১০ জন। তাঁদের মধ্যে কয়েকজন কলকাতার নার্সিংহোমে চিকিৎসা করাচ্ছেন।
গত কয়েক দিন ধরে ভাটপাড়া পুরসভার সিংহভাগ সাফাই কর্মী কর্মবিরতি চালাচ্ছেন। তার ফলে শহরের একটা বড় অংশের জঞ্জাল সাফ হচ্ছে না। জঞ্জালে জল জমে ডেঙ্গি মশার বংশবৃদ্ধি হচ্ছে বলে অভিযোগ। পুর কর্তৃপক্ষ অবশ্য জানাচ্ছেন, ডেঙ্গি রোধে সব রকম পদক্ষেপই করা হচ্ছে। হালিশহর এবং কাঁচরাপাড়া পুরসভাতেও গত দু’সপ্তাহ ধরে ডেঙ্গির প্রকোপ শুরু হয়েছে। দু’সপ্তাহে কয়েক দিনে এই দুই পুর এলাকার অন্তত ১০ জন ডেঙ্গিতে আক্রান্ত হয়েছেন। তার মধ্যে কয়েকজন সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন। হালিশহরের পুরপ্রধান অংশুমান রায় বলছেন, ‘‘গত কয়েক মাস ধরে শহরে নিকাশি নালা তৈরির কাজ চলছে। তার ফলে বেশ কিছু এলাকায় জল জমে থাকছে। ওই সব এলাকায় আমরা সব রকম পদক্ষেপ নিচ্ছি।’’ তাঁর দাবি, ডেঙ্গি এখন নিয়ন্ত্রণেই রয়েছে।