প্রতীকী ছবি
ঘূর্ণিঝড়ে উড়ে গিয়েছে মাথা গোঁজার দরমার বেড়া দেওয়া ঘর। বাঁধ ভেঙে নোনা জলে তলিয়ে গিয়েছে ভেড়ি। ঘর-জীবিকা দু’ই-ই শেষ। এ বার কী ভাবে ঋণ শোধ হবে, কী ভাবেই বা চলবে সংসার তাই নিয়ে চিন্তার শেষ নেই দম্পতির।
সুন্দরবন ঘেঁষা হাসনাবাদ ব্লকের টিয়ামারি গ্রাম। দুই ছেলে মেয়ে এবং স্ত্রী অষ্টমীকে নিয়ে ওই গ্রামে থাকেন দিলীপ মজুমদার। ঋণ নিয়ে কাঁকড়া চাষ করছিলেন তিনি। এ বার সুদের টাকা কী ভাবে শোধ করবেন তা বুঝতে পারছেন না। এখন অবস্থা এখন ওই গ্রামের অনেকেরই। এর মধ্যেও বাঁচার লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন তাঁরা।
আমপানের ঝড়ে সব শেষ হয়ে গিয়েছে দিলীপের। চোখের জল মুছতে মুছতে দিলীপ বলেন, ‘‘মে-নভেম্বর মাসে কাঁকড়া চাষ করি। কিছু দিন আগে একটি বেসরকারি সংস্থার থেকে তিন লক্ষ ও ব্যাঙ্ক থেকে দু’লক্ষ টাকা ঋণ নিই। জলের তোড়ে ঘর, কাঁকড়া সব ভেসে গিয়েছে। এখন কী ভাবে কি কবর বুঝতে পারছি না।’’ সাপের ভয়ে ভাঙাচোরা ঘরে থাকতে সাহস পাচ্ছি না। আমপানের ধাক্কায় লন্ডভন্ড হয়ে গিয়েছে হাসনাবাদের ঘুনি, চকপাটলি, বেলিয়াডাঙা-সহ একাধিক এলাকা। টিয়ামারি গ্রামের ক্ষতি বেশি। বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন। চার ধারে শুধু জল আর জল।
অষ্টমী বলেন, ‘‘ঝড়ের পর থেকে সাপের উপদ্রব বাড়ায় ভাঙা ঘরে থাকতে ভয় হয়।’’ শুধু দিলীপরা নন, এলাকায় বহু মানুষ আজ ঘর ছাড়া। প্রায় তিন হাজার মানুষের প্রায় ১৫ হাজার বিঘা জমিতে গড়া চিংড়ি-সহ বিভিন্ন মাছ ও কাঁকড়ার ভেড়ি নদীর জলে তলিয়ে গিয়েছে। কাঠাখালি নদীর পাশে পলিথিনের নীচে থাকা কবিতা মজুমদার বলেন, ‘‘এমনিতেই করোনার ফলে লকডাউনের কারণে মানুষ কর্মহীন হয়েছে। তার উপরে আমপান আমাদের একেবারে শেষ করে দিয়ে গেল।’’
এখন গ্রামের পর গ্রাম নোনা জলের নীচে। যে দিকে তাকাই সর্বত্র শুধু ধ্বংসের চিত্র। চকপাটলি এলাকার বাসিন্দা প্রশান্ত মজুমদার সুন্দরবনে ঘুরে ঘুরে কাঁকড়া ও মাছ ধরে কোনও রকমে সংসার চালাচ্ছিলেন। ছোট্ট একটি মাছের ভেড়িও তাঁর ছিল। প্রশান্তর কথায়, ‘‘বাঁধ ভাঙা জলে সর্বত্র সমান হয়ে গিয়েছে। ঝড়ে উড়ে গিয়েছে থাকার ঘর। সংসারের সাতজনকে নিয়ে এখন উচুঁ জায়গায় থাকেন। প্রশান্ত বলেন, ‘‘সরকারি সাহায্য বলতে এক খানা পলিথিন। তার নীচেই বাস। কেউ খেতে দিলে খাই নয় তো এক বেলা আধ পেটা খেয়ে বাকি সময়ে উপোস করে থাকি।’’