ছবি: সংগৃহীত।
লক্ষ্মীপুজোর পর সপ্তাহান্তে কোথাও ঘুরে নিতে চাইছেন? এমন কোনও জায়গা, যেখানে হোটেল পেতে খুব একটা অসুবিধা হবে না এবং চট করে ঘুরেও আাসা যাবে এবং যেখানে পাহাড়, সবুজের সান্নিধ্য থাকবে। তা হলে ঘুরে নিতে পারেন এই ৩ ঠিকানায়।
দারিংবাড়ি
ওড়িশা বললেই বেশির ভাগ বাঙালি পুরীর কথাই ভাবেন। তবে সৈকত শহরের পাশাপাশি এ রাজ্যের শৈলশহরটিও কিন্তু কম সুন্দর নয়। দারিংবাড়িকে অনেকে বলেন ‘ওড়িশার কাশ্মীর’। পূর্বঘাটের ঢেউখেলানো পাহাড়, পাইন বন, ঘন শালজঙ্গল ঘিরে রেখেছে দারিংবা়ড়িকে। স্থানীয় ভাষায় ‘দারিং’- শব্দের অর্থ উপত্যকা, আর ‘বাড়ি’-হল ঘর। ‘দারিংবাড়ি’ - শব্দের অর্থ হল- উপত্যকার মধ্যে থাকা ঘর। জঙ্গলের ভিতর দিয়ে সশব্দে বয়ে চলেছে স্রোতস্বিনী দুলুরি। অরণ্যে ঢাকা পুতুদি জলপ্রপাত বেশ জনপ্রিয়। এ ছাড়াও ঘুরে নেওয়া যায় লুদু জলপ্রপাত, মড়ুবান্দা জলপ্রপাত। দারিংবাড়ির সৌন্দর্য উপভোগে ঘুরে নিতে পারেন লাভার্স পয়েন্ট, সানসেট পয়েন্ট। এখানেই দেখতে পাবেন পাইনের ঘন বন, কফির বাগিচা।
কী ভাবে যাবেন?
ভুবনেশ্বর বিমানবন্দর থেকে দারিংবাড়ির দূরত্ব প্রায় ২৯০ কিলোমিটার। হাওড়া অথবা শিয়ালদহ থেকে রেলপথে গেলে নামতে হবে ব্রহ্মপুর রেল স্টেশনে। এখান থেকে সড়কপথে যেতে হবে আরও ১৩০ কিলোমিটার। সড়কপথে যেতে চাইলে নিকটতম বাস স্ট্যান্ড ফুলবনি। চাইলে কলকাতা থেকে গাড়ি নিয়ে দারিংবাড়ি যেতে পারেন। দূরত্ব ৭০০ কিলোমিটারের কাছাকাছি। খড়্গপুর, বালেশ্বর, কটক, ভুবনেশ্বর, খুরদা পার করে ব্রহ্মপুর হয়ে দারিংবাড়ি।
কোথায় থাকবেন?
দারিংবাড়িতে থাকার বেশ কয়েকটি ছোট-বড় হোটেল রয়েছে। যদি দারিংবাড়িতে থাকার জায়গা না পান, তা হলে থেকে যেতে পারেন ব্রহ্মপুরে। এখানে অসংখ্য হোটেল রয়েছে। চাইলে বরকুল কিংবা রম্ভাতেও থাকতে পারেন। এই দু’টি জায়গাতেই ওড়িশা পর্যটন দফতরের পান্থনিবাস রয়েছে।
মৈনপাট
মৈনপাট। পশ্চিমবঙ্গের পড়শি রাজ্য ছত্তীসগঢ়ের সুরগুজা জেলার শান্ত একটি শৈলশহর। রূপের জন্য অনেকে একে ‘ছত্তীসগঢ়ের শিমলা’ও বলেন। ছোট্ট জনপদটির আরও পরিচয় আছে অবশ্য। এই জায়গাকে বলা হয় ‘মিনি তিব্বত’। চিন কর্তৃক তিব্বত অধিকারের পর ভারতের বিভিন্ন স্থানে তিব্বতিরা বসতি স্থাপন করেছিলেন। তার মধ্যে এই জায়গাটিও পড়ে। পাহাড় ঘেরা শহরটির বুকেই রয়েছে একাধিক বৌদ্ধ মঠ। মৈনপাটে দেখার জায়গা কম নয়। ‘উল্টাপানি’, জলজলি পয়েন্ট, কুটুমসার গুহা থেকে শুরু করে ঝর্না, মন্দির, বৌদ্ধ মঠ, কী নেই এখানে! রয়েছে বক্সাইটের খনিও। এখানে ভ্রমণের সবচেয়ে বড় সুবিধা হল, এক জায়গার থেকে অন্যটির দূরত্বও খুব বেশি নয়। ফলে, দিন দুই হাতে রাখলেই ভাল ভাবে জায়গাগুলি ঘুরে নেওয়া যায়।
কী ভাবে যাবেন?
হাওড়া থেকে রাতের সমলেশ্বরী এক্সপ্রেস ধরে ঝাড়সুগুদা স্টেশনে নেমে গাড়ি নিয়ে চলে আসতে পারেন মৈনপাট। গাড়িতে ৬-৭ ঘণ্টা লাগবে। আসার পথেই দুয়েকটি দর্শনীয় স্থান ঘুরে নিতে পারেন। সরাসরি গাড়ি নিয়েও ছত্তীসগঢ়ের মৈনপাট আসতে পারেন।
কোথায় থাকবেন?
মৈনপাটে থাকার জন্য একাধিক রিসর্ট রয়েছে। ছত্তীসগঢ় সরকারের থাকার জায়গাও রয়েছে এখানে।
কাঁকড়াঝোড়-আমলাশোল
এক সময় আমলাশোল বললে, অনাহারের ছবি ভেসে উঠত। এখন পাহাড় ঘেরা সেই গ্রাম জনপ্রিয় পর্যটনকেন্দ্র। জঙ্গলমহল ভ্রমণে অন্যতম জায়গা করে নিয়েছে কাঁকড়াঝোড় এবং আমলাশোল গ্রাম। ঝাড়গ্রামের অন্তর্গত জায়গা দু’টি। দুই পাশে জঙ্গল, মাঝে পিচঢালা রাস্তা। কাঁকড়াঝোড়ের এই রাস্তা ধরে একটু এগিয়ে গেলেই আমঝর্না। সেই ঝর্না অবধি গাড়ির রাস্তা নেই, জঙ্গুলে রাস্তার এক পাশে গাড়ি দাঁড় করিয়ে এক কিলোমিটার হাঁটতে হবে। জঙ্গলে লুকিয়ে আছে আমঝর্না, ময়ূরঝর্না ইত্যাদি হরেক ঝোরা। ঘুরে নিতে পারেন ভৈরব বাবার মন্দির, কেতকী ঝর্না।
এখান থেকেই ঘুরে নেওয়া যায় বেলপাহাড়ির আনাচকানাচ। সুতানের জঙ্গল, তালবেরিয়া জলাধার, মুকুটমণিপুর। প্রকৃতি এখানে উপুড়হস্ত। চার দিক ঘন সবুজ। আমলাশোল এবং কাঁকড়োঝারের পথেই পাবেন শালের জঙ্গল।
কী ভাবে যাবেন?
কলকাতা থেকে খড়গপুর, লোধাশুলি, ঝাড়গ্রাম, বেলপাহাড়ি হয়ে কাঁকড়াঝোড় আসতে পারেন। চাকাডোবা মোড় থেকে ডান দিকে চলে গিয়েছে কাঁকড়াঝোড়ের পথ। ট্রেনে ঝাড়গ্রাম অথবা ঘাটশিলা এসে সেখান থেকে গাড়ি ভাড়া করে জায়গাগুলি ঘুরে নিতে পারেন।
কোথায় থাকবেন?
চারমূর্তি হোম স্টে, ধিতাং হোমস্টে-সহ কয়েকটি হোমস্টে এবং হাতেগোনা হোটেল পাবেন। তবে বেলপাহাড়িতে বা রানিবাঁধে থাকার সুযোগ বেশি। চাইলে মুকুটমণিপুরে অথবা ঘাটশিলায় থেকেও এই জায়গাগুলি ঘুরে নেওয়া যায়।