ছবি: সংগৃহীত।
‘শহর থেকে আরও অনেক দূরে…’ কোথাও চলে যেতে চান? তা হলে আর দেরি না করে বেরিয়ে পড়ুন বাঁকুড়ার পথে। এখানেই রয়েছে বিসিন্দা পাহাড়। না, কলেবরে সে বিশাল নয় ঠিকই, তবে তার রূপে মুগ্ধ হবেন না, এমন মানুষ আছেন কি না সন্দেহ।
বাঁকুড়া শহর থেকে ৩০ কিলোমিটার দূরে বিসিন্দা পাহাড়। তার মাথা থেকে তাকালে যত দূর চোখ যায়, শুধু চাষজমি, টিলা, গাছপালা। দেখলে মনে হবে, প্রকৃতি যেন সযত্নে তার শ্যামল আঁচল বিছিয়ে দিয়েছে। পাহাড়েই রয়েছে দেবী নাচনচণ্ডীর থান।
বাদল মেঘের ছায়া ঘনিয়ে এলে বিসিন্দার রূপ এক রকম। হাওয়ায় দুলতে থাকা সবুজ ধানের খেত, উন্মুক্ত প্রান্তর যেন শিল্পীর ক্যানভাসে ফুটে ওঠা কোনও ছবি। আবার শরতের মেঘ খেলা করলে সেই বিসিন্দা পাহাড়ই অন্য রকম। পড়ন্ত বিকেলে আকাশে যখন যখন রক্তিম ছোঁয়া লাগে, তখন সেই রূপ একেবারে আলাদা।
পুজোর সময় দিন তিনেকের ছুটিতে ঘুরে নিতে পারেন বিসিন্দা পাহাড়, দুর্গাডিহি, কোরো পাহাড়-সহ বাঁকুড়ার বিভিন্ন জায়গা। শরতের আকাশের সঙ্গে সে পথে সঙ্গী হবে সাদা কাশফুলও। কলকাতা থেকে যাত্রাপথে খানিক বিরতি নেওয়ার জন্য বেছে নিতে পারেন দুর্গাপুর। দুর্গাপুর ব্যারেজে লকগেটে থেকে জল ছাড়া দেখে ফের গাড়ি ছুটিয়ে দিলেই দেখা মিলবে কাশের। তার পর গঙ্গাজলঘাটি পার করে বিসিন্দা পাহাড়।
এখানে থাকার জন্য কোনও হোম স্টে বা বড়সড় হোটেল নেই। পাহাড়ের নীচে রয়েছে একটি অতিথি নিবাস। নাচনচণ্ডীর নামেই তার নামকরণ। দু’টি মাত্র ঘর। আড়ম্বর নেই। তবে, খুব বেশি দাবিদাওয়া না থাকলে সেখানে থাকতে অসুবিধা হওয়ার কথা নয়। ঘরের জানলা দিয়েই দেখা যায় বিসিন্দা পাহাড় ।
পাহাড় বেয়ে সিঁড়ি উঠেছে ধাপে ধাপে। পাহাড়ের মাথায় রয়েছে দেবী নাচনচণ্ডীর থান। সিঁড়ি বেয়ে উঠলে প্রথমে পড়বে হনুমানের মূর্তি, তার পর দেখা মিলবে শিবলিঙ্গের। আরও খানিক উপরে উঠলে দর্শন পাওয়া যাবে নাচনচণ্ডীর। তেঁতুলগাছের নীচে দেবীর ছোট্ট পাথুরে মূর্তি। তার চারপাশে রয়েছে সিঁদুর লেপা অসংখ্য মাটির ঘোড়া। স্থানীয় বাসিন্দারাই দেবীর থানে ঘোড়া মানত করেন। দোল পূর্ণিমায় মেলা বসে সেখানে। ধূমধাম করে নাচনচণ্ডীর পুজো হয়। তবে বছরভর এখানে নিত্যপুজো করেন একজন সেবাইত।
দেবস্থান পর্যন্তই সিঁড়ি। তার পর জঙ্গলের মধ্যে পায়ে চলা পথ। সেই পথ ধরেই পৌঁছনো যায় পাহাড়চূড়ায়। অবশ্য, বিসিন্দাকে পাহাড় না বলে টিলা বলাই ভাল। উপর থেকে চারপাশের দৃশ্য মনোমুগ্ধকর। সেখানে বসেই কাটিয়ে দেওয়া যায় ঘণ্টার পর ঘণ্টা। পড়ন্ত বিকেলে সাক্ষী হওয়া যায় অপূর্ব সূর্যাস্তের। এখান থেকেই দেখা যায় বাঁকুড়ায় দুই বিখ্যাত পাহাড়, বিহারীনাথ ও শুশুনিয়া।
যেতে কতক্ষণ সময় লাগবে?
কলকাতা থেকে বিসিন্দা পাহাড়ের দূরত্ব ২০৪ কিলোমিটার। সময় লাগবে ৫ থেকে ৬ ঘণ্টা।
কী ভাবে যাবেন?
কলকাতা থেকে ডানকুনি-বর্ধমান হয়ে দুর্গাপুর। হাতে সময় থাকলে দুর্গাপুর ব্যারেজ ঘুরে নিতে পারেন। সেখান থেকে বড়জোড়া, গঙ্গাজলঘাটি হয়ে বিসিন্দা পাহাড়। তবে বিসিন্দা আসার পথে বাঁকুড়ার গঙ্গাজলঘাটির জঙ্গলে দাঁড়ানো আবশ্যক। প্রকৃতি এখানে উদারহস্ত। জঙ্গলের বুক চিরে চলে গিয়েছে কালো পিচের মসৃণ রাস্তা। এখান থেকে বিসিন্দা পাহাড়ের দূরত্ব ১০ কিলোমিটারের মতো।
কোথায় থাকবেন?
বিসিন্দা পাহাড়ে থাকার একটি জায়গা। পাহাড়ের নীচের অতি সাধারণ অতিথি নিবাস। পুজোর সময় আগাম বুকিং করে না এলে ঘর পাওয়া কঠিন।
আর কী দেখবেন?
বিসিন্দা পাহাড় ঘুরে নেওয়ার জন্য এক রাত, দুই দিন যথেষ্ট। তবে এখান থেকে আরও বেশ কয়েকটি জায়গায় যেতে পারেন। কাছেই ২০ কিলোমিটারের মধ্যে রয়েছে কোরো পাহাড় ও শুশুনিয়া পাহাড়। বাঁকুড়ার আর একটি স্বল্পচেনা আরও একটি গন্তব্য গাংদুয়া ড্যাম। ঘুরে নিতে পারেন বিহারীনাথও।
তবে পর্যটনের প্রসারে পাহাড়ি পথ খানিক বাঁধাই করা হয়েছে। একটি মন্দির নির্মাণও হচ্ছে সেখানে। সেটুকু বাদ দিলে এখনও বিসিন্দা পাহাড় ভারি নির্জন, সুন্দর। মন হারানোর প্রকৃত ঠিকানাই বটে!