গ্রুপ পর্যায়ে রাজত্ব করলেও সেমিফাইনালে নিউজিল্যান্ডের কাছে হারতে হয়েছে বিরাট কোহালিদের। তবে পরাজয়ের যন্ত্রণা থাকলেও আর্থিক ভাবে বেশ লাভবান হয়েছেন তাঁরা। গোটা দল পেয়েছে ৮ লক্ষ ডলার বা ভারতীয় মুদ্রায় প্রায় সাড়ে ৫ কোটি টাকা। ৩৬ বছর আগে বিশ্বজয় করে কপিল দেবরা কত টাকা পারিশ্রমিক পেয়েছিলেন জানেন?
ভারতীয় বোর্ডের বিচারে বিরাট কোহালিদের মতো গ্রেড ‘এ প্লাস’ ক্রিকেটার শুধুমাত্র পারিশ্রমিক হিসাবেই বছরে ৭ কোটি টাকা রোজগার করেন। এমনকি, ঘরোয়া টুর্নামেন্টেও ম্যাচ প্রতি ৩৫ হাজার টাকা পান ক্রিকেটাররা। তবে এ সবই এখনকার কথা।
’৮৩-তে কপিলের বিশ্বজয়ী টিমের সদস্যদের এত টাকা রোজগারের সৌভাগ্য হয়নি। ওই দলে একটা ম্যাচ না খেলে সুনীল ভালসনও যা টাকা পেয়েছিলেন, কপিল দেব বা মোহিন্দর অমরনাথের মতো টিমের প্রথম একাদশে থাকা ক্রিকেটাররাও পেয়েছিলেন একই টাকা। পারিশ্রমিকের পরিমাণ শুনলে চমকে যেতে হয়। কত টাকা পেয়েছিলেন তাঁরা?
লর্ডসের ব্যালকনিতে ২৪ বছরের কপিল দেব। হাতে বিশ্বকাপ। ৩৬ বছর আগেকার সে ছবি ভারতীয় ক্রিকেটের অন্যতম স্মরণীয় মুহূর্ত। ১৯৮৩-তে কপিলের নেতৃত্বে ইতিহাস গড়েছিলেন গাওস্কর-অমরনাথ-বিনিরা।
আটের দশকে ইংল্যান্ডে বিশ্বকাপ খেলতে যাওয়ার আগে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার বিষয়ে টিম ইন্ডিয়ার উপর বাজি ধরেছেন, বহু চেষ্টা করলেও বোধহয় এমন ক্রিকেট ফ্যান খুঁজে পাওয়া মুশকিল।
১৯৮৩-র বিশ্বজয়ী ভারতীয় দলের বহু সদস্যই পরে স্বীকার করেছিলেন, সে বার ইংল্যান্ডে গিয়ে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার কথা ভাবা তো দূরের কথা, সেমিফাইনালে পৌঁছতে পারবেন কি না তা নিয়েই সন্দেহ ছিল তাঁদের। বরং ওই সফরকে ছুটি কাটানোর সুযোগ হিসেবেই ধরে নিয়েছিলেন টিমের অনেকে।
ফাইনালে পৌঁছনোর আগে গ্রুপ পর্যায়ে কপিলরা দু’বারের বিশ্বজয়ী ওয়েস্ট ইন্ডিজকে হারানোয় হঠাৎই নড়েচড়ে বসে ক্রিকেট দুনিয়া। তবে সে জয়কে অবশ্য অনেকেই অঘটন বলে উড়িয়ে দিয়েছিলেন বেশির ভাগ ক্রিকেটবোদ্ধা।
এর পর এল সেই দিন। ২৫ জুন। লর্ডসের মাটিতে বিশ্বকাপ ক্রিকেটের ফাইনাল। বিপক্ষে ফের ক্লাইভ লয়েডের ওয়েস্ট ইন্ডিজ। ’৭৫ ও ’৭৯-তে টানা জয়ের পর বিশ্বজয়ের হ্যাটট্রিক করার লক্ষ্য নিয়েই বাইশ গজে নেমেছিলেন লয়েডরা।
ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিরুদ্ধে কপিলরা কতটা লড়াই করতে পারবেন? কতটা সহজে জয় পাবেন লয়েডরা? ফাইনালের আগে এমনতর আলোচনাই চলছিল অধিকাংশ ক্রিকেট পণ্ডিতদের মধ্যে। এর উপর আবার প্রথমে ব্যাট করতে নেমে রবাটর্স-মার্শাল-হোল্ডিং-গোমসদের বোলিং দাপটে মাত্র ১৮৩ রানেই অল আউট হয়ে যায় টিম ইন্ডিয়া।
স্বাভাবিক ভাবেই ফাইনালে ওয়েস্ট ইন্ডিজের দিকেই বাজি ধরেছিলেন সকলে। তবে ভারতীয় দল সে দিন সব বাজিই উল্টে দিয়েছিলেন। লয়েড ছাড়াও গর্ডন গ্রিনিজ, ডেসমন্ড হেইন্স, ভিভ রিচার্ডস মতো ক্রিকেটার হার মেনেছিলেন কপিলদের লড়াকু মনোভাবের কাছে। লড়াই ছিল রজার বিনি, মোহিন্দর অমরনাথ, মদনলাল-সহ টিম ইন্ডিয়ার প্রতিটি সদস্যের।
লর্ডসের মাঠে মাত্র ১৪০ রানেই কুপোকাত হয়ে দু’বারের বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন। ২৬ রান-সহ ৩ উইকেট নিয়ে ম্যাচের সেরা হয়েছিলেন অমরনাথ। বাইশ গজে ইতিহাস গড়া সেই বিনি-মদনলাল-সন্দীপ পাটিলরা প্রুডেনশিয়াল কাপ নিয়ে এসেছিলেন ঘরে। কিন্তু চ্যাম্পিয়নদের পকেটে এসেছিল কত টাকা ঢুকেছিল?
সম্প্রতি মকরন্দ ওয়েইনগাঁকর নামে মুম্বইয়ের এক ক্রিকেট সাংবাদিক কপিলদের বেতনের একটি পরিসংখ্যান প্রকাশ করেছেন সোশ্যাল মি়ডিয়ায়। সে বছরের ২১ সেপ্টেম্বর পাকিস্তানের মাটিতে একটি বেসরকারি ম্যাচে ওই পরিমাণ টাকা রোজগার করেছিলেন কপিলরা।
এই টুইটের সূত্রেই মনে করা হচ্ছে, বিশ্বজয়ের পর ভারতীয় দলের প্রতিটি সদস্যকে প্রতি ম্যাচের জন্য দেড় হাজার টাকা করে দেওয়া হত। সঙ্গে ২০০ টাকা করে দৈনিক ভাতা। শুধুমাত্র ক্রিকেটারাই নন, এই একই পরিমাণ অর্থ পেতেন দলের ম্যানেজার বিষেণ সিংহ বেদীও।
ট্রফি না জিতলেও শুধুমাত্র ম্যাচ ফি হিসাবেই কোটি কোটি টাকা পাচ্ছেন বিরাট কোহালিরা। তবে প্রায় তিন দশক আগে প্রথম বার বিশ্বজয় করে ইতিহাস গড়লেও আর্থিক দিক দিয়ে তেমন লাভবান হননি কপিলরা। ক্রিকেটের অন্ধভক্ত লতা মঙ্গেশকর একটি কনসার্ট করে তার থেকে সংগৃহীত অর্থ দিয়েছিলেন কপিলদের।