জয়ের পর উচ্ছ্বসিত সমীর টুইটার
উইম্বলডন ফাইনাল। এই দুটো শব্দেই একটা শিহরণ তৈরি হয়। প্রথম খেলতে নেমেই অনেকের মাথা ঘুরে যায়। বাঙালি সমীর বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাজটা আরও কঠিন ছিল। কারণ, শুধু প্রথম উইম্বলডন ফাইনাল নয়, সমীরের কাছে এটা ছিল প্রথম উইম্বলডন। এখানেই শেষ নয়, ঘাসের কোর্টেই এই প্রথম নামল সে।
কিন্তু সমীরের খেলায় তার কোনও ছাপ পড়েনি। উইম্বলডনের এক নম্বর কোর্টে সমীরের খেলা দেখেছেন বাংলার অভিষেক মুখোপাধ্যায়। আন্তর্জাতিক টেনিস আম্পায়ার অভিষেক সমীরের ফাইনাল ম্যাচের রিভিউ অফিসিয়াল ছিলেন। একেবারে কাছ থেকে দেখেছেন সমীরের খেলা। আনন্দবাজার অনলাইনকে যা জানালেন, তাতে কেঁপে যাওয়া তো দূরের কথা, সমীরের খেলায় বিন্দুমাত্র জড়তা চোখে পড়েনি।
শুধু ফাইনাল নয়, কোয়ার্টার ফাইনাল থেকে সমীরের তিনটি ম্যাচই দেখেছেন অভিযেক। চারটি গ্র্যান্ড স্ল্যাম এবং অলিম্পিক্সে আম্পায়ারিং করা অভিষেক বললেন, ‘‘প্রথমেই বলি, খুব ভাল খেলেছে সমীর। কিন্তু এটুকু বললে সবটা বলা হয় না। শুধু ভাল খেলে উইম্বলডন ফাইনাল স্ট্রেট সেটে জেতা যায় না। সমীরের খেলায় যে জিনিসটা সবথেকে বেশি চোখে পড়েছে, সেটা হল ওর আক্রমণাত্মক খেলার ধরন। শুরু থেকে অত্যন্ত আক্রমণাত্মক ছিল। কখনও ওকে রক্ষণাত্মক হতে দেখিনি। যখন পিছিয়ে পড়েছে, তখনও দেখিনি, যখন অনেকটা এগিয়ে গিয়েছে, তখনও দেখিনি। ওর খেলা দেখেই বুঝলাম, আক্রমণাত্মক খেলাটাই ওর সহজাত। এটা শুধু ফাইনালে দেখলাম, তা নয়। আগের দুটো ম্যাচেও একই জিনিস দেখেছি। হয়ত সেই কারণেই একটা ছেলে উইম্বলডনের কোয়ার্টার ফাইনাল, ফাইনাল স্ট্রেট সেটে জিততে পেরেছে।’’
আরও কয়েকটা বিষয় সমীরের পক্ষে গিয়েছে বলে জানালেন অভিষেক। বহু তারকা, মহাতারকার ম্যাচ দেখা অভিষেক বললেন, ‘‘ও অনেকটা লম্বা। এই উচ্চতা স্বাভাবিক ভাবেই কাজে লেগেছে। ওর শরীরী ভাষা খুব ভাল লাগল। সেই জন্যই হয়ত প্রথম সেটে পিছিয়ে পড়েও সমানে ঘণ্টায় ১৮০-১৮৫ কিলোমিটারে সার্ভ করতে দেখলাম। ওর প্রথম সার্ভিসটা সত্যিই ভাল। আর যেটা নজরে পড়ল, সেটা হল জেতার খিদে। এটা ভারতীয় বা বাঙালিদের মধ্যে খুব একটা দেখা যায় না।’’
তবে উত্তেজনা যে সমীরের একেবারে হচ্ছিল না, তা মোটেই নয়। টেনশন কমানোর জন্য সমীর কী করছিল, সেটাও নজরে পড়েছে অভিষেকের। জানালেন, ‘‘বারবার দেখছিলাম, ও র্যাকেট নাচাচ্ছে। বুঝতেই পারছিলাম, এটা টেনশন কাটানোর জন্যই করছে। টেনশন কমানোর জন্য প্রশিক্ষকরা এরকম নানা টোটকা দিয়ে থাকেন। সমীরকেও দেখলাম সেটা।’’
ঘাসের কোর্টে প্রথম খেলতে নামলেও এটাতেই যে সমীর বেশি মানিয়ে নিয়েছে, সেটাও স্পষ্ট। অভিষেক জানালেন, ‘‘মনে হল ঘাসের কোর্টটাই ওকে বেশি মানাবে। এতদিন কেন এটাতে খেলেনি জানি না। ও নিজেও ভাবতে পারেনি। তাই কোনও প্রত্যাশা ছিল না। একেবারে খোলা মনে খেলতে পেরেছে। এটাও হয়ত ওর এত বড় সাফল্যের কারণ।’’