Samir Banerjee

Samir Banerjee: টেনিস, না পড়াশোনা? উইম্বলডন ‌ফাইনালে উঠে বিস্মিত সমীর সিদ্ধান্ত নেয়নি এখনও

রবিবার জুনিয়র উইম্বলডনের সিঙ্গলস ফাইনালে খেলতে নামছে সমীর।

Advertisement

নিজস্ব প্রতিবেদন

কলকাতা শেষ আপডেট: ১১ জুলাই ২০২১ ১২:৪৭
Share:

ফাইনালে উঠে এখন হাসি পাচ্ছে সমীর বন্দ্যোপাধ্যায়ের। ছবি: টুইটার থেকে

জুনিয়র উইম্বলডনের ফাইনাল খেলবে, ভাবেনি। স্রেফ অভিজ্ঞতা অর্জনের জন্য নেমেছিল। আর তাই ফাইনালে উঠে এখন হাসি পাচ্ছে সমীর বন্দ্যোপাধ্যায়ের। সেই সঙ্গে আরও একটা তথ্য জানিয়ে দিচ্ছে সে, টেনিসই কেরিয়ার হবে, এখনও ভাবেনি সে এবং তার পরিবার।

Advertisement

আমেরিকার প্রবাসী বাঙালি সমীরকে ফাইনালে যার বিরুদ্ধে খেলতে হবে, সেই ভিক্টর লিলভ জানিয়েছে, ‘‘যখন উইম্বলডন খেলতে নেমেছিলাম, আমরা দুজনে কেউই ভাবিনি শেষ রবিবার এক নম্বর কোর্টে ফাইনাল খেলতে নামব। তাই সেমিফাইনালের পর ক্যাফেটেরিয়াতে হঠাৎ যখন সমীরের সঙ্গে দেখা হয়েছিল, আমরা ব্যাপারটা নিয়ে বেশ মজা করেছিলাম।’’ সিঙ্গলসের ফাইনালে উঠলেও ডাবলসের সেমিফাইনালে হেরে গিয়েছে সমীর।

কতটা অবিশ্বাস্য, সেটা সমীরের কথাতেই পরিষ্কার। এ বারই প্রথম উইম্বলডন খেলতে নামা সমীর বলছে, ‘‘অবাক লাগছে। সবে শুরু করেছি। অবশ্য শুরু করেছি বলা ভুল, জুনিয়র্সে নিজেকে প্রতিষ্ঠা করছি। এখানে খেলতে এসেছিলাম দু-একটা রাউন্ড জিতব ভেবে। লক্ষ্য ছিল শুধু ভাল খেলা। কারণ এর আগেও আমি ভাল খেলছিলাম।’’ সমীরের খেলা নিয়ে উচ্ছ্বসিত ডেরেক ও’ব্রায়েনও। তিনি টুইট করে রবিবারের ফাইনালের জন্য শুভেচ্ছা জানিয়েছেন সমীরকে।

Advertisement

ভাল খেললেও টেনিসই যে কেরিয়ার হবে, সেটা এখনও ভাবেনি সমীর। অনেকটাই নির্ভর করছে বাবা-মা কী চাইছেন, তার ওপর। বাবা কুণাল পেট্রোলিয়াম শিল্পের সঙ্গে যুক্ত। অসমের তিনসুকিয়ার ডিগবয়তে তেলের খনিতে কাজ করেন। মা ঊষার জন্ম বিশাখাপত্তনমে, বেড়ে উঠেছেন হায়দরাবাদের। সাড়ে তিন দশক আগে আমেরিকায় চলে যান। ছেলে সমীর ছাড়াও রয়েছে তাদের মেয়ে দিব্যা।

কতটা অবিশ্বাস্য, সেটা সমীরের কথাতেই পরিষ্কার। —ফাইল চিত্র

সমীর জানাচ্ছে, ‘‘আমি কলাম্বিয়া ইউনিভার্সিটির ছাত্র। টেনিসের মাধ্যমেই কলেজে যাওয়া। আমি সবসময়ই চেয়েছি, সর্বোচ্চ পর্যায়ে টেনিস খেলব। কলেজের পাঠ শেষ করে হয়ত পেশাদার টেনিসে আসব। কিন্তু বাবা-মা ভারতীয় তো। তাই সবসময় চায়, আগে কলেজকে গুরুত্ব দিই। এত তাড়াতাড়ি পেশাদার টেনিসে চলে আসি, চায় না। আমি নিজেও নিশ্চিত নই, এখনই পুরোপুরি পেশাদার টেনিসে আসব কিনা। এখনও পর্যন্ত যা ঠিক আছে, কলেজকেই আগে গুরুত্ব দেব।’’

ছেলের কেরিয়ার নিয়ে কুণাল বলছেন, ‘‘আমরা পড়াশোনাটাকেই অগ্রাধিকার দিতে চাই। তারপর যদি দেখি ও সত্যিই ভাল খেলছে, তখন ভাবব। কিন্তু এখনই জুনিয়র স্তরে সাফল্যের ভিত্তিতে বলা যাবে না যে, সিনিয়র পর্যায়তেও ভাল খেলবে। সিনিয়র পর্যায়ে সাফল্য পাওয়া খুব কঠিন। বিশেষ করে আর্থিক দিকটাও ভাবতে হবে। উইম্বলডনে খেললে ঠিক আছে। কিন্তু সেটা অনিশ্চিত। তাই আমরা চাই, ওর সঙ্গে আগে কলেজ ডিগ্রি থাকুক।’’

টেনিসের এই সাফল্যের জন্য কলাম্বিয়া ইউনিভার্সিটিকেই কৃতিত্ব দিচ্ছে সমীর, ‘‘ওখানকার কোচেরা অসাধারণ। অনেক কিছ শিখেছি। তাই কলাম্বিয়ার প্রতিও আমার কিছু দায়বদ্ধতা আছে।’’

ঘাসের কোর্টে খেলায় একেবারেই অভ্যস্ত নয় সমীর। তাই সেই অভিজ্ঞতা অর্জন করা উদ্দেশ্য ছিল জানিয়ে সে বলছে, ‘‘জানতামই না ঘাসের কোর্টে আমি কতটা কী করতে পারব। তাই শুধু চেয়েছিলাম নিজের সেরাটা দিতে। এতটা ভাল খেলেছি, ভেবে অবাক লাগছে।’’

তবে একবার যখন ফাইনালে উঠে পড়েছে, ১৭ বছরের সমীর বুঝতে পারছে চ্যাম্পিয়ন হতে পারলে তার তাৎপর্য কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে। সমীরের উপলব্ধি, ‘‘এই পর্যায়ে জুনিয়র গ্র্যান্ড স্ল্যাম জেতা মানেই সবকিছু। এরপর আর কিছু হয় না। সব জুনিয়র প্লেয়াররাই স্ল্যামের পেছনে দৌড়চ্ছে।’’

লিলভের বিরুদ্ধে সমীরের রেকর্ড নিখুঁত। তিন বার খেলে তিনটিই জিতেছে বঙ্গ সন্তান। যদিও ফাইনালের আগে ইতিহাস, পরিসংখ্যান নিয়ে ভাবতে চায় না সে। তার বক্তব্য, ‘‘এই তথ্যটা আমাদের খেলায় প্রভাব ফেলবে না।’’

ছয় বছর থেকে টেনিস খেলা শুরু করেছে। ১১ বছরের টেনিস জীবনে সমীর মনে করছে আসল হল জুনিয়র থেকে পেশাদার (টেনিসের পরিভাষায় প্রো) হওয়া। তার কথায়, ‘‘জুনিয়র থেকে পেশাদার (টেনিসের পরিভাষায় প্রো) হওয়াটাই কেরিয়ারের জন্য আসল। এটা একটা বড় পদক্ষেপ। বুঝতে পারছি ঠিক দিকে এগোচ্ছি। তবে এখনও অনেক পরিশ্রম করতে হবে।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement