2020 Tokyo Olympics

Tokyo Olympics :ভূকম্পে আক্রান্ত সেই পরিবার মন কাড়ল উদ্বোধনে

টোকিয়ো শহরে এ দিন ধরা পড়ল দুই ভিন্ন চিত্র। স্টেডিয়ামের বাইরে ভিড় করে শেষ মুহূর্তেও বিক্ষোভ দেখিয়েছে বিশাল জনতা।

Advertisement

সাতোকো ইতানি

টোকিয়ো শেষ আপডেট: ২৪ জুলাই ২০২১ ০৭:২৮
Share:

অবশেষে: টোকিয়োর উদ্বোধনী অনুষ্ঠান। ছবি পিটিআই।

যাবতীয় জল্পনার অবসান ঘটিয়ে শুক্রবার টোকিয়োয় শুরু হয়ে গেল বহু প্রতীক্ষিত সেই অলিম্পিক্স। কোনও প্রতিবাদ, অতিমারি রোখার সচেতনতামূলক বার্তা কোনও কিছুই মূল্য পেল না অর্থ, বিনিয়োগকারী, স্পনসরদের সামনে।

Advertisement

টোকিয়ো শহরে এ দিন ধরা পড়ল দুই ভিন্ন চিত্র। স্টেডিয়ামের বাইরে ভিড় করে শেষ মুহূর্তেও বিক্ষোভ দেখিয়েছে বিশাল জনতা। ‘‘অলিম্পিক্স বাতিল করো’’ বলে বাইরে যখন সুশৃঙ্খল ভাবে বিক্ষোভ দেখাচ্ছেন তাঁরা, ভিতরে তখন চলছে উদ্বোধনী অনুষ্ঠান। আকাশে আতসবাজির রোশনাই। এ রকম দ্ব্যর্থ পরিস্থিতিতে অতীতে কোনও অলিম্পিক্স হয়েছে বলে মনে পড়ছে না।

স্টেডিয়ামে এ দিন দর্শকদের কোনও প্রবেশাধিকার ছিল না। অতিথি, আয়োজকদের কর্তাব্যক্তি ও জাপানের রাষ্ট্রনায়ক ও প্রশাসনিক কর্তা ও সাংবাদিক মিলিয়ে সংখ্যাটা ছিল ৯৫০। টোকিয়োর স্থানীয় সময় রাত আটটায় শুরু হয়েছিল উদ্বোধনী অনুষ্ঠান। টোকিয়ো, ওসাকা-সহ জাপানের বিভিন্ন প্রান্তে লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা। বাইরে বিক্ষোভরত মানুষ। সে কারণেই বোধহয় অনুষ্ঠান বেশি দীর্ঘ করা হয়নি। অবশ্য, স্টেডিয়ামের বাইরে জড়ো হওয়া মানুষের মধ্যে, ‘‘জাপান তোমার সেরাটা দিয়ে পদক তালিকায় উপরে থেকো’’, বলা মানুষও চোখে পড়েছে। তবে তাঁদের সংখ্যাটা খুব বেশি ছিল না। স্থানীয় সময় রাত পৌনে বারোটা নাগাদ টেনিস তারকা নেয়োমি ওসাকা যখন অলিম্পিক্সের মশাল জ্বালাচ্ছেন, তখন হাততালি পড়ল বটে। তবে শব্দের প্রাবল্য বেশ কম।

Advertisement

বিক্ষোভ প্রদর্শনের মধ্যেই রাস্তার ধারে জায়ান্ট স্ক্রিনে দেখছিলাম উদ্বোধনের অনুষ্ঠান। অলিম্পিক্স মশাল প্রজ্জ্বলনের আগে অগ্নিশিখা নিয়ে যে দল এগিয়ে যাচ্ছিল, সেই দলে রাখা হয়েছিল ২০১১ সালে ফুকুশিমায় ভূমিকম্পে আক্রান্ত পরিবারের ছ’টি বাচ্চাকে। যা দেখে সাময়িক ভাল লেগেছে। কারণ, অলিম্পিক্স না করার এই বিক্ষোভের পিছনে করোনা ছাড়াও রয়েছে সেই দুঃস্বপ্নের ভূমিকম্প ও সুনামি। যার ধাক্কা আজও কাটিয়ে উঠতে পারেনি জাপানের মানুষ। এখন বহু পরিবার সহায় সম্বলহীন অবস্থায় দিন কাটায়। তাঁদের জন্য কিছু করা হয়েছে বলে মনে করতে পারছি না।

তার আগে বিশ্বজুড়ে শান্তির বার্তা দিতে কাগজের তৈরি পায়রাও উড়িয়েছে টোকিয়ো ও ফুকুশিমার বাচ্চারা। ১৯৬৪ সালে টোকিয়ো অলিম্পিক্সের সময় জীবন্ত পায়রা ওড়ানো হয়েছিল। কিন্তু ১৯৮৮ সালে সোল অলিম্পিক্সের পর থেকে জীবন্ত পায়রা ওড়ানো বন্ধ। কারণ সে বার মশালের আগুনে পুড়ে পায়রাগুলো পুড়ে যাওয়ায় তা নিয়ে বিতর্ক তৈরি হয়েছিল। তার পরেই সেই প্রথা বন্ধ। টোকিয়ো শহরে অলিম্পিক্সের সূচনার দিনে যে প্রাণবন্ত শহর বিদেশি অতিথিরা আশা করেছিলেন, তাঁদের সেই আশা নিরাশাতেই পরিণত হয়েছে। আলোর রোশনাই থাকলেও অলিম্পিক্স নিয়ে মাতার আগে টোকিয়োর স্থানীয় মানুষের বেশির ভাগের মনেই প্রশ্ন, অলিম্পিক্সের পরে অতিমারি ছড়ালে কী হবে? জাপানের জাতীয় পতাকা হাতে এ দিন মার্চপাস্টে হাঁটলেন বাস্কেটবল দলের হাচিমুরা রুই। তার আগে দেখলাম টিভি সাক্ষাৎকারে গেমস ভিলেজে সে বলেছে, ‘‘করোনার ধাক্কা সামলে শেষ পর্যন্ত আমরা অলিম্পিক্সে নামছি। কিন্তু দর্শকেরা নেই। সেটাই দুঃখের। টিভিতে ওঁরা আমাদের দেখবেন। ব্রহ্মাণ্ডের এই সর্ববৃহৎ ক্রীড়া প্রতিযোগিতায় গোটা জাপান আমাদের সঙ্গেই একজোট হয়েই রয়েছে।’’ শুনে হাসি আসছিল। দেশের সাফল্যের জন্য, জাপানিরা সব সময়েই একতাবদ্ধ। কিন্তু অতিমারির এই আবহে অলিম্পিক্সই জাপানের মানুষকে দু’টো ভাগে ভাগ করে দিয়েছে। মানুষ একজোট হতে পারেনি।

ইতিমধ্যেই অলিম্পিক্সের সঙ্গে জড়িত ১০০ জন করোনা আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি। দেশে করোনা সংক্রমণের পঞ্চম ঢেউ বইছে। এই অবস্থায় অলিম্পিক্সে জাপানের সাফল্য বা দুরন্ত কিছু রেকর্ড গড়ার মুহূর্ত দেখার বদলে মানুষ প্রার্থনায় ব্যস্ত। কারণ, টোকিয়োয় আগত ক্রীড়াবিদেরা যেন সুস্থ ভাবে দেশে ফেরেন। তাঁদের দেশ ও জাপানে যেন এই অতিমারির ঢেউ প্রবল ভাবে সংক্রমিত না হয়ে পড়ে। এটাই জাপানের সাধারণ মানুষের প্রার্থনা।

(লেখক কানসাই বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক। বর্তমানে টোকিয়োতে রয়েছেন।)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement