একই দিনে কোপা আমেরিকা ফাইনাল, উইম্বলডন ফাইনাল এবং ইউরো কাপের ফাইনাল প্রত্যেক বছর আসে নাকি? গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ
আপনি যদি খেলাধুলো ভালবাসেন, বিশেষত ফুটবল এবং টেনিসপ্রেমী হন, তাহলে আক্ষরিক অর্থেই রবিবারটা আপনার কাছে ‘সুপার সানডে’ হতে চলেছে।
হবে না-ই বা কেন! একই দিনে কোপা আমেরিকা ফাইনাল, উইম্বলডন ফাইনাল এবং ইউরো কাপের ফাইনাল প্রত্যেক বছর আসে নাকি? প্রত্যেক বছর কেন, চার বছর অন্তরও এই জিনিস হওয়ার সম্ভাবনা কম।
তারিখের দিক থেকে অবশ্য কোপা এবং ইউরো এক দিনে নয়। ব্রাজিলের মারাকানায় স্থানীয় সময় শনিবার রাত ন’টায় খেলা শুরু হবে। তবে ভারতীয়রা দেখতে পাবেন রবিবার ভোররাতে। সে অর্থে তাঁদের কাছে রবিবারই ফাইনাল।
গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ
শুধু ফাইনাল নয়, এই লড়াই কার্যত মহারণ। বাঙালির দু’ভাগে ভাগ হয়ে যাওয়ার ম্যাচ। শেষ বার ১৪ বছর আগে কোপা ফাইনালে ব্রাজিল এবং আর্জেন্টিনা একে অপরের মুখোমুখি হয়েছিল। মেসি তখন সবে জাতীয় দলের প্রথম একাদশে নিয়মিত জায়গা পাওয়া শুরু করেছেন। নেমার সেটা তখনও পাননি। জুলিয়ো ব্যাপতিস্তার ব্রাজিল ৩-০ গোলে ধ্বংস করেছিল রবার্তো আয়ালার আর্জেন্টিনাকে। তারপরে আরও তিন বার ফাইনালে উঠেছে আর্জেন্টিনা। ২০১১-য় উরুগুয়ে এবং ২০১৫ ও ২০১৬-এ চিলির কাছে হারতে হয়েছে। সেদিনের তরুণ মেসি আজ ফুটবলজীবনের অন্তিম পর্বে। আপামর ফুটবল সমর্থকই তাঁর হাতে কাপ দেখতে চান। অন্যদিকে, নেইমার গত বারই কোপা আমেরিকা জিতেছেন। এই ট্রফি তাঁকে ফুটবলবিশ্বে আরও প্রতিষ্ঠা দেওয়ার ম্যাচ। ব্রাজিল-আর্জেন্টিনার মহারণ দেখতে গেলে আপনাকে উঠতে হবে ভোরে। সাড়ে পাঁচটায় শুরু খেলা।
মাঝের সময়টায় আপনি বিশ্রাম নিতে পারেন। কিন্তু বিকেলের আগেই উঠে পড়তে হবে। সাড়ে ছ’টা থেকে শুরু উইম্বলডন ফাইনাল। কলকাতায় ডেভিস কাপ খেলে যাওয়া মাত্তেয়ো বেরেত্তিনির মুখোমুখি হবেন নোভাক জোকোভিচ। আর একটি ম্যাচ জিতলেই রাফায়েল নাদাল এবং রজার ফেডেরারকে ছুঁয়ে ফেলবেন তিনি। আপনি নিশ্চয়ই এই মুহূর্ত হাতছাড়া করতে চাইবেন না।
রাত সাড়ে বারোটায় শুরু আসল লড়াই। খেলতে নামবে ইংল্যান্ড এবং ইটালি। ঘরের মাঠে নিঃসন্দেহে এগিয়ে থেকে নামবে ইংরেজরা। কিন্তু এত সহজে হাল ছেড়ে দেওয়ার পাত্র নয় ইটালিও। তারা খেলতে নামছে ৩২ ম্যাচ অপরাজিত থেকে। হারিয়েছে স্পেন, বেলজিয়ামের মতো বাঘা বাঘা প্রতিপক্ষকে। চার বার বিশ্বকাপ জিতলেও তাদের ট্রফি ক্যাবিনেটে ইউরো কাপ মাত্র একটিই রয়েছে। রবের্তো মানচিনির ছেলেরা সংখ্যাটা বাড়াতে মরিয়া। অন্যদিকে, ইংল্যান্ড এক বারও ইউরো জেতেনি। গ্যারেথ সাউথগেটের ছেলেরা পারবেন ইতিহাস গড়তে?
এমনিতেই করোনা অতিমারিতে ক্রীড়াপ্রেমীদের কাছে গত বছরটা অসহনীয় কেটেছে। একে তো গৃহবন্দী, তার উপর গোটা বিশ্বজুড়েই বন্ধ হয়ে গিয়েছিল খেলাধুলো। কয়েক মাস পরে ফিরল ঠিকই, তবে ফাঁকা স্টেডিয়ামে। রাতারাতি খেলা দেখার ইচ্ছেটাই চলে গিয়েছিল অনেকের। এ বছর মোটের উপর সবকিছু অনেকটাই স্বাভাবিক হওয়ায় পুরনো সেই আমেজ আবার খুঁজে পাচ্ছেন ক্রীড়াপ্রেমীরা।
সুপার সানডে এসেছিল বছর দুয়েক আগেও। ১৪ জুলাই একইদিনে পড়েছিল ক্রিকেট বিশ্বকাপ ফাইনাল এবং উইম্বলডন ফাইনাল। রজার ফেডেরার যখন একদিকে নোভাক জোকোভিচের বিরুদ্ধে নিজের ২১তম গ্র্যান্ড স্ল্যাম জেতার লড়াই করছিলেন, তখন কয়েক কিলোমিটার দূরে অইন মর্গ্যানরা প্রথম বার বিশ্বকাপ জয়ের লক্ষ্যে মগ্ন ছিলেন। দুটি খেলাই প্রায় একই সময়ে শেষ হয়েছিল। কিন্তু এ বার সেই সম্ভাবনা খুবই কম।
এ বারের সুপার সানডের জন্য অপেক্ষা আর মাত্র কিছু ঘণ্টার।