ট্রফি নিয়ে নাদাল। ছবি রয়টার্স
মানুষ, যন্ত্র, নাকি ঈশ্বর? রবিবার ফরাসি ওপেনের ফাইনালে রাফায়েল নাদালকে দেখে এটা মনে হতে বাধ্য। কে বলবে সপ্তাহ তিনেক আগে ফরাসি ওপেনে খেলা নিয়ে তিনি সন্দেহ প্রকাশ করেছিলেন? কে বলবে যে গোড়ালির চোট তাঁকে প্রতি মুহূর্তে যন্ত্রণা দিচ্ছে? কোর্টে নেমে তিনি কঠোর, লৌহকঠিন মানসিকতার এক জলজ্যান্ত উদাহরণ। এমন একজন, যিনি কোনও মতেই হারতে শেখেননি। যিনি হারতে জানেন না। তাই ফরাসি ওপেনের ফাইনালে তিনি এক বার উঠে গেলে কাউকে দাঁড়াতে দেন না।
ম্যাচের আগে জানতেন, ‘ফাইনাল’ গত মঙ্গলবার খেলে ফেলেছিলেন। কিন্তু তিনি তো রাফায়েল নাদাল! প্রতিপক্ষকে ছোট করে দেখা কোনও দিনই তাঁর স্বভাব নয়। যতই উল্টো দিকে অষ্টম বাছাই ক্যাসপার রুদ থাকুন, যতই সুরকির কোর্ট তাঁর হাতের তালুর মতো চেনা হোক, ফাইনাল খেলতে নেমেছিলেন প্রথম রাউন্ডে নামার মানসিকতা নিয়েই। যেখানে লক্ষ্য থাকে একটাই, জয়। সেটা হল। সহজেই হল। কারণ, সুরকির কোর্টে নাদাল নিজেই নিজের সবচেয়ে বড় প্রতিপক্ষ। প্রতিদিনই নিজেকে উন্নত করার চেষ্টা করেন। ৩৬ বছর বয়স হলেও সেই প্রচেষ্টা চালু রয়েছে।
হবে না-ই বা কেন, হতে পারে এটাই ফরাসি ওপেনে তাঁর শেষ ম্যাচ। হতে পারে ফিলিপ শাতিয়ের কোর্টে এটাই শেষ ম্যাচ। কিছু দিন আগেই বলেছিলেন, প্রতিটি ম্যাচ নিজের শেষ ম্যাচ ভেবে খেলতে নামেন। বাঁ পা নিয়ে এতটাই চিন্তিত যে নতুন পায়ের বদলে ফাইনালে হারতেও রাজি ছিলেন। পরের বছর যে তাঁকে দেখা যাবেই, এমন কথা নিশ্চিত ভাবে বলা গেল না। ম্যাচের পর নাদাল বললেন, “জানি না ভবিষ্যতে কী হবে। তবে লড়াই আমার স্বভাবে। সেই লড়াই আমি চালিয়ে যাব।”
হয়তো অনেক দিন আগেই অবসর নিয়ে নিতে পারতেন। নেননি একটাই কারণে, তাঁর পাশে ছিল পরিবার এবং অগুন্তি সমর্থক। তাঁদের ধন্যবাদ জানিয়ে বললেন, “পরিবার আমাকে সব সময় সমর্থন করে গিয়েছে, পাশে দাঁড়িয়েছে। বছরের পর বছর আমার পাশে রয়েছে। ওরা না থাকলে কবেই অবসর নিয়ে নিতাম! এত কীর্তি, এত স্মরণীয় মুহূর্ত তৈরিই হত না। কোনও দিনও ভাবিনি ৩৬ বছর বয়সে এই কোর্টে দাঁড়িয়ে ট্রফি হাতে তুলব। আমার কাছে এই অনুভূতির গুরুত্ব অনেক।”
ধন্যবাদ জানাতে ভুললেন না প্রতিপক্ষকেও, যিনি আবার নাদালের অ্যাকাডেমি থেকে উঠে আসা এবং তাঁকেই আদর্শ বলে মানেন। নাদাল বললেন, “ক্যাসপার, ফাইনালের মতো মঞ্চে তোমার সঙ্গে খেলার অভিজ্ঞতা অন্য রকম। অসাধারণ খেলোয়াড় তুমি। যে ভাবে খেলছ, তাতে আগামীর জন্য অনেক শুভেচ্ছা থাকল।”
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, Twitter এবং Instagram পেজ।