প্রতিবাদ: অতিমারির মধ্যে অলিম্পিক্স হওয়ায় বিক্ষোভ টোকিয়োয়। ছবি রয়টার্স।
অলিম্পিক্স উদ্বোধনের ঠিক ছ’দিন আগে গেমস ভিলেজে ঢুকে পড়ল করোনা। অংশগ্রহণকারীদের কোনও একজন যে মারণ ভাইরাসে সংক্রমিত হয়েছেন, তা জানিয়েছেন আয়োজকরাই। অবশ্য আক্রান্তের পরিচয় গোপন রাখা হয়েছে।
সংগঠন কমিটির মুখপাত্র মাশা তাকায়া বলেছেন, ‘‘এই প্রথম ভিলেজে করোনা আক্রান্ত একজনকে পাওয়া গিয়েছে। এই মুহূর্তে তাঁকে হোটেলে নিভৃতবাসে রাখা হয়েছে।’’ জাপানের প্রচারমাধ্যমের খবর, আক্রান্ত ব্যক্তি একজন বিদেশি। এমনিতে জাপানের নাগরিকদের একটি বড় অংশ এখনও অলিম্পিক্স আয়োজনের বিরোধী। তাঁদের আশঙ্কা, গেমসের আয়োজন করতে গিয়ে আবার বড়সড় সংক্রমণের সম্ভাবনা সৃষ্টি হবে।
আয়োজক কমিটির প্রধান সেইকো হাসিমোতো অবশ্য মন্তব্য করেছেন, ‘‘অলিম্পিক্সের জন্য সংক্রমণ বাড়লে কী করতে হবে, আমরা জানি। পরিস্থিতি অনুযায়ী সমস্ত পরিকল্পনা আগে থেকেই নেওয়া আছে।’’ তাঁর আরও মন্তব্য, ‘‘আমরা জানি, টোকিয়োয় যাঁরা আসছেন তাঁরা করোনা নিয়ে যথেষ্ট উদ্বিগ্ন। তাই বাস্তব ছবিটা কখনও গোপন করা হবে না। কোনও সংক্রমণের ঘটনা ঘটলেই সঙ্গে সঙ্গে তা জানিয়ে দেওয়া হবে।’’
টোকিয়ো ২০২০-র সিইও তোশিরো মুতো জানিয়েছেন, সংক্রমিত ব্যক্তি কোভিডের টিকা নিয়েছেন কি না, তা এখনও জানা যায়নি। ‘‘আক্রান্ত ব্যক্তি সম্পর্কে এখনও আমাদের কাছে কোনও তথ্য নেই। তবে গেমসে প্রত্যেক দিনই সকলের করোনা পরীক্ষা হবে। কেউ সংক্রমিত হলেই তাকে সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হবে,’’
বলেছেন তোশিরো।
আন্তর্জাতিক অলিম্পিক্স কমিটির প্রধান থোমাস বাখ এখন টোকিয়োতেই আছেন। শুক্রবার তিনি ছিলেন হিরোশিমায়। হোটেলে এক অনুষ্ঠানে যোগ দেওয়ার সময় বাখ বিক্ষোভের মুখে পড়েন। সেখানে জনা চল্লিশেক মানুষ হাতে প্ল্যাকার্ড নিয়ে গেমস আয়োজনের বিরোধিতা করছিলেন। পুলিশ কোনওরকমে পরিস্থিতি সামলায়। এই ঘটনার একদিন পরেই গেমস ভিলেজে একজন আক্রান্তকে পাওয়া গেল। যার পরে মুখ খুলেছেন বাখও। বলেছেন, ‘‘খুব ভাল করেই জানি যে, জাপানে গেমসের সুষ্ঠু আয়োজন নিয়ে অনেকেই সংশয়ে আছেন। তবু আমি এখানকার মানুষদের বলব, সে সব ভুলে বিদেশ থেকে আসা অ্যাথলিটদের স্বাগত জানাতে। মনে রাখবেন, ওঁরা জীবনের সব চেয়ে বড় প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে এসেছেন। তা ছাড়া আমার মনে হয়, এত কঠোর ভাবে করোনা বিধি পালন করে অন্য কোথাও কখনও কোনও খেলাধুলোর আয়োজন
করা হয়নি।’’
বাখ যোগ করেছেন, ‘‘এতদিনে এখানে অলিম্পিক্সের সঙ্গে জড়িত মাত্র ১৫ জন সংক্রমিত হয়েছে। অথচ জুলাইয়েই টোকিয়োয় এসেছেন ১৫ হাজার খেলোয়াড়। বোঝাই যাচ্ছে, এখানে কতটা কঠোর ভাবে করোনা বিধি পালন করা হচ্ছে। এমনকি নিয়মিত প্রত্যেকের করোনা পরীক্ষা হচ্ছে। আমার মনে হয়, এ ভাবে সবকিছু ঠিকঠাক এগোলে এবং পরিস্থিতির উন্নতি হলে আগামী দিনে সাধারণ দর্শকদেরও গেমস দেখতে
দেওয়া হবে।’’
রবিবার আবার এক অনুষ্ঠানে বাখকে স্বাগত জানানো হবে। সেখানে উপস্থিত থাকবেন জাপানের প্রধানমন্ত্রী ইয়োশিহিদে সুগা। এক টিভি চ্যানেলে প্রধানমন্ত্রী আশা প্রকাশ করেছেন, বিনা দর্শকেই এ বারের অলিম্পিক্স যথেষ্ট আকর্ষণীয় হয়ে উঠবে।
করোনা নিয়ে হঠাৎ তৈরি হওয়া আতঙ্কের পরিবেশেই টোকিয়োয় পা রাখল ভারতের শুটিং দল। পুরো দলেরই কোভিড পরীক্ষার জন্য নমুনা নেওয়া হয়েছে। এই মুহূর্তে শুটাররা রিপোর্টের অপেক্ষায় রয়েছেন। এমনিতে তাঁরা ১৯ জুলাই থেকে অনুশীলন শুরু করবেন এবং ক্রোয়েশিয়া থেকে পৌঁছেছেন বলে কাউকেই নিভৃতবাসে থাকতে হবে না। শুটারদের এই দলটা জ়াগ্রেবে প্রস্তুতি নিয়েছে। তারা জাপান পৌঁছয় আমস্টারডাম হয়ে।
এর আগে ভারতীয় দল নয়াদিল্লি ও জ়াগ্রেবে আইএসএসএফ বিশ্বকাপে অংশ নেয়। দু’জায়গাতেই খুব ভাল ফল করে। ভারতীয় দলে আছেন মোট ৫২ জন শুটার। যাঁদের অনেকেরই পদক জয়ের উজ্জ্বল সম্ভাবনা আছে বলে মনে করা হচ্ছে।
শনিবার রাতে নয়াদিল্লি থেকে টোকিয়ো রওনা দেন পি ভি সিন্ধু, প্রণতি নায়েকরা। এই দলে আছেন তিরন্দাজ অতনু দাস, দীপিকা কুমারীরাও। অতনু টুইট করেছেন, ‘‘টোকিয়োর উদ্দেশে রওনা হলাম। এই প্রথম এতটা আরামে আমরা বিদেশে যেতে পারছি।।’’ এ বারের অলিম্পিক্সের ভারতীয় দলে আছেন মোট ১২৬ জন ক্রীড়াবিদ। ১৮টি খেলায় ভারতীয়রা অংশ নেবেন। প্রসঙ্গত অলিম্পিক্সে অতীতে কখনও ভারত এত বড় দল পাঠায়নি।