গুরজ্যোত সিংহ। ছবি: সমাজমাধ্যম।
পড়ার বইয়ে মুখ গুঁজে থাকতে পারতেন না। মোবাইলের পর্দাতে রাখতে পারতেন না চোখ। যন্ত্রণা শুরু হয়ে যেত মাথায়। ১০ বছর পরেও সে কথা ভাবলে গায়ে কাঁটা দেয় গুরজ্যোত সিংহের। ভারতীয় হকির নতুন প্রতিভা কোভিডের সময় কাজ করেছেন জুতোয় কারখানায়। এশিয়ান চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে জাতীয় দলের জার্সি গায়ে অভিষেক হয়েছে।
পঞ্জাবের জালন্ধর জেলার হুসাইনাবাদের গ্রামে কাঁচা রাস্তায় সাইকেল চালিয়ে যাচ্ছিল সাত বছরের খুদে গুরজ্যোত। আচমকাই পিছন থেকে ধাক্কা মারে বাইক। মাটিতে পড়ে পাথরে ঢুকে যায় মাথা। সেই সময়ে বাবা-মা কোনও কাজে বাইরে ছিলেন। দুই বোন ভয় পেয়ে গিয়েছিল। তবে পরিস্থিতি হাতের বাইরে যায়নি। চিকিৎসকেরা অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ নিয়ে চিন্তায় ছিলেন। তবে আশ্বাস দিয়েছিলেন, সময় লাগলেও ঠিক হয়ে যাবে গুরজ্যোত।
সে কথা মনে করে গুরজ্যোত বলেছেন, “ছোটবেলায় খুব দুষ্টু ছিলাম। অনেক দুর্ঘটনা হয়েছে।” তবে সেই আঘাতের ফলে দৃষ্টিতে সমস্যা তৈরি হয়েছিল। তিন-চার বছরের বেশি সময় লেগেছিল তা কাটিয়ে উঠতে।
বাবা-মা এবং দুই ভাইবোনের সংসারে দারিদ্র কম ছিল না। ইটালিতে গিয়ে কিছু দিন কাজ করলেও গুরজ্যোতের বাবা ফিরে আসেন নিঃস্ব হয়ে, ধারকর্জ করে। দুধবিক্রেতা হিসাবে কাজ শুরু করেন। সপ্তম শ্রেণিতে ওঠার পর গুরজ্যোতের মাথাব্যথার সমস্যা কমে। তখনই হকির সঙ্গে পরিচয়।
তবে বাড়ি থেকে স্কুল, মাঠ সেরে বাড়ি ফিরতে রাত ৮-৯টা বেজে যেত। বাবা-মা চাননি ছেলেকে এত পরিশ্রম করতে দিতে। অত রাতে বাড়ি ফেরাতেও সমস্যা ছিল। কিন্তু গুরজ্যোতের জেদের কাছে হার মানেন তাঁরা। ৬-৭ মাস সময় লেগেছিল তাতে।
তবে গ্রামে খুব বেশি সুযোগ-সুবিধা পাননি গুরজ্যোত। কোভিডের সময়ে অভাবের তাড়নায় কাজ করতে হয়েছে জুতোর কারখানায়। তার পরেই জীবনের মোড় ঘোরে। জালন্ধরে খালসা কলেজ ট্রায়ালের জন্য ডেকেছিল। বন্ধুদের পরামর্শে সেখানে গিয়ে নির্বাচিত হন গুরজ্যোত। কলেজের হোস্টেলে সুযোগ পান থাকার। খাওয়া বিনামূল্যে। তখন বাড়িতেও আর বাধা আসেনি।
খালসা কলেজ থেকেই পঞ্জাব ও সিন্ধ ব্যাঙ্কের হয়ে জাতীয় স্তরে খেলার সুযোগ পান। ২০২১ সালে মোগায় স্থানীয় প্রতিযোগিতায় খেলার পর রাউন্ডগ্লাসের অ্যাকাডেমিতে সুযোগ পান। সেখান থেকে চোখে পড়েন হকি ইন্ডিয়ার হাই পারফরম্যান্স ও ডেভেলপমেন্ট কমিটির সদস্য সৈয়দ আলির। বয়সভিত্তিক স্তর থেকে ধীরে ধীরে জাতীয় দলে উত্তরণ হয় গুরজ্যোতের।