এখনও অতৃপ্ত নাদাল। ছবি রয়টার্স
এক বছর আগে ফিলিপে শঁতিয়ে কোর্টের সেই রাতের কথা কি মনে পড়ছিল রাফায়েল নাদালের? সে বার সেমিফাইনালে হারের পর ক্লান্ত, যন্ত্রণাক্লিষ্ট অভিজ্ঞতার কথা কি ভুলতে পেরেছিলেন তিনি? নিজের প্রিয় কোর্টে দাপট দেখাচ্ছেন চরম শত্রু, এটা কি মেনে নিতে পেরেছিলেন? না, পারেননি। আর পারেননি বলেই গোড়ালির চোট, অসহ্য যন্ত্রণা, ভবিষ্যৎ নিয়ে শঙ্কা— সব উপেক্ষা করে মঙ্গলবার রাতে কোয়ার্টার ফাইনালে নোভাক জোকোভিচকে হারিয়ে দিলেন। সেই নোভাক জোকোভিচ, যিনি এক বছর আগে নাদালের ১৪তম ফরাসি ওপেন জয়ের পথে কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়েছিলেন।
প্যারিসের সময় তখন রাত ১.১৫। জোকোভিচের বিরুদ্ধে ম্যাচটা শেষ হওয়ার পর নাদালের চোখের কোনা দিয়ে বেরিয়ে এল জল। আসাটাই স্বাভাবিক। কোর্টের মধ্যে দাঁতে দাঁত চেপে লড়তে থাকা ইস্পাতকঠিন মানসিকতার আদর্শ উদাহরণ হলেও আদতে তো তিনি একজন মানুষ। আর পাঁচ জনের মতোই আবেগ নিয়ন্ত্রণ করতে তিনিও পারেন না। চোখের জলের পিছনে যতটা না ছিল গোড়ালির যন্ত্রণা, তার থেকেও বেশি ছিল আবেগ। তবে সেটাও মাত্র কয়েক মুহূর্তের জন্য। নিজের পথের কাঁটাকে উপড়ে ফেলার পর দর্শকদের অভিবাদন প্রাণ ভরে গ্রহণ করছিলেন। প্যারিসে ঠান্ডা রাতে একটা সময় গুটিসুটি মেরে বসেছিলেন সমর্থকরা। প্রিয় খেলোয়াড় জেতার পর খোলস ছেড়ে বেরোলেন তাঁরাও।
নাদাল খুব তাড়াতাড়ি ভুলে যেতে চাইবেন মঙ্গলবারের রাতটা। কারণটা নিজেই বলেছেন, “আমার কাছে নিঃসন্দেহে এটা একটা আবেগের রাত। কিন্তু এটা তো কোয়ার্টার ফাইনাল ছিল, তাই না? আমি কি কিছু জিতেছি? আমার হাতে কি কোনও ট্রফি উঠেছে? দু’দিন পর আবার এই কোর্টেই ফিরতে হবে। এখানেই সেমিফাইনালে নামতে হবে। কাজ এখনও শেষ হয়ে যায়নি।”
শুক্রবার আলেকজান্ডার জেরেভের বিরুদ্ধে সেমিফাইনালে খেলতে নামবেন নাদাল। ঘটনাচক্রে, সে দিনই তাঁর ৩৬তম জন্মদিন। স্পেনের তরুণ প্রতিভা কার্লোস আলকারাজকে হারিয়ে নাদালের মুখোমুখি হবেন জেরেভ। তবে পর পর দু’টি প্রায় সাড়ে চার ঘণ্টার ম্যাচ খেলার পর সেমিফাইনালেও নাদাল নিজের সেরাটা দিতে পারবেন কি না, সে প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে। বিশেষত, উল্টো দিকে থাকা জেরেভ এক ইঞ্চি জমি ছাড়বেন না। ছ’ফুট পাঁচ ইঞ্চি লম্বা জার্মান খেলোয়াড়ের কোর্ট কভারিং অসম্ভব ভাল। জোরালো সার্ভিস রয়েছে। ফলে নাদালের পক্ষে চিন্তায় থাকার অনেক কারণ রয়েছে। বিশ্বের এক নম্বরকে হারিয়ে কি তা হলে তিন নম্বরের কাছে ছিটকে যাবেন তিনি? প্রশ্নটা উঠছেই।
রবিবার ফরাসি ওপেনে ১৪তম খেতাব জয়ের সুযোগ রয়েছে নাদালের। জোকোভিচ এবং রজার ফেডেরারের থেকে দু’টি গ্র্যান্ড স্ল্যাম এগিয়ে যেতে পারেন তিনি। কিন্তু জীবনের এই পর্যায়ে এসে নাদাল এখন টেনিস উপভোগ করতেই বেশি আগ্রহী। এখনও প্রতিটি ম্যাচ জেতার জন্য খিদে, অদম্য জেদ রয়েছে ঠিকই। কিন্তু পরিসংখ্যানের দৌড়ে নিজেকে আর শামিল করতে চান না। তাই ম্যাচের পর বলেছেন, “কে বেশি গ্র্যান্ড স্ল্যাম জিতল, কে ইতিহাসের সর্বকালের সেরা খেলোয়াড়, এটা নিয়ে প্রতিনিয়ত চর্চা চলে। কিন্তু আমি এ সবে পাত্তা দিই না।”
জোকোভিচের ২১তম গ্র্যান্ড স্ল্যাম জেতার স্বপ্নে আপাতত জল ঢেলে দিয়েছেন নাদাল। কিন্তু সার্বিয়াক খেলোয়াড়কে সম্মান জানাতে ভোলেননি। তাঁর কথায়, “নোভাক নিঃসন্দেহে টেনিসের ইতিহাসে অন্যতম সেরা খেলোয়াড়। ওর বিরুদ্ধে খেলা সব সময়েই কঠিন। অতীতে আমাদের দ্বৈরথের যে ইতিহাস রয়েছে, সেটা দেখলেই বোঝা যাবে। নোভাককে হারাতে গেলে একটাই উপায়, প্রথম পয়েন্ট থেকে শেষ পয়েন্ট পর্যন্ত নিজের সেরা টেনিসটা খেলতে হবে। আজকের রাতটা ছিল ঠিক সে রকমই।”
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, নাদাল রাতে খেলতে চাননি। প্যারিসে এই সময়ে ঠান্ডার কথা ভেবে রাতে তিনি খেলতে চান না। অনুযোগ করেছিলেন, অভিযোগ করেননি। মেনে নিয়েছিলেন আয়োজকদের ব্যবসায়িক স্বার্থ। তাই ম্যাচের পর যখন তাঁকে আবার এ বিষয়ে প্রশ্ন করা হল, স্পেনের খেলোয়াড় অক্লেশে বলে দিলেন, “খুব রাত হয়ে গিয়েছে, তাই না? কিন্তু এখন অভিযোগ জানিয়ে কী লাভ? আপাতত আমার দু’দিন ছুটি।”
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, Twitter এবং Instagram পেজ।