জয়ের উচ্ছ্বাস মোহনবাগান সুপার জায়ান্টের ফুটবলারদের। —ফাইল চিত্র।
গত ম্যাচে এফসি গোয়ার বিরুদ্ধে হারতে হয়েছিল। বৃহস্পতিবার পঞ্জাব এফসি-র বিরুদ্ধে শুরুতেই গোল হজম করায় চিন্তার ভাঁজ ছিল মোহনবাগান সুপার জায়ান্টের সমর্থকদের কপালে। তবে দ্বিতীয়ার্ধে তিন গোল দিলেন সবুজ-মেরুন মেরুন ফুটবলারেরা। পিছিয়ে গিয়েও ম্যাচ জিতল মোহনবাগান। পঞ্জাবের বিরুদ্ধে ৩-১ গোলে জিতে দিল্লি থেকে ফিরছেন শুভাশিস বসুরা।
চোটের কারণে পঞ্জাবের বিরুদ্ধে খেলতে পারেননি গ্রেগ স্টুয়ার্ট এবং দিমিত্রি পেত্রাতোস। তাঁরা দু’জনেই মোহনবাগান দলের খেলাটাকে নিয়ন্ত্রণ করেন। এমন দু’জন ফুটবলার না থাকায় সমস্যায় পড়তে হচ্ছে মোহনবাগান কোচ হোসে মোলিনাকে। শোনা গিয়েছিল চোট পেয়েছেন মনবীর সিংহও। তবে পঞ্জাবের বিরুদ্ধে প্রথম একাদশে ছিলেন তিনি। কিন্তু পেত্রাতোস এবং স্টুয়ার্টের না থাকা যে সবুজ-মেরুনের জন্য বড় সমস্যার তা বার বার স্পষ্ট হল পঞ্জাবের বিরুদ্ধে।
১২ মিনিটের মাথায় মোহনবাগানকে পিছিয়ে দেন পঞ্জাবের রিকি শাবোং। মোহনবাগানের রক্ষণভাগ দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখল তাঁকে গোল দিতে। কেউ এক বারের জন্যেও এগলেন না রিকিকে আটকাতে। যদিও আরও আগেই এগিয়ে যেতে পারত পঞ্জাব। কিন্তু পঞ্জাব ফুটবলারের দূরপাল্লার শট বারে লাগায় বেঁচে যায় মোহনবাগান।
প্রথমার্ধের শেষ দিকে কিছুটা তেড়েফুঁড়ে ওঠে মোহনবাগান। গোলের সুযোগ তৈরি করার চেষ্টা করলেও সফল হতে পারেনি। কখনও বল ধরতে ভুল করলেন জেসন কামিংস, কখনও বল ছাড়তে ভুল করলেন লিস্টন কোলাসো। কিছুতেই গোলের রাস্তা খুলতে পারলেন না তাঁরা। তবে দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতেই গোল পেয়ে যায় মোহনবাগান। কর্নার থেকে আসা বলে হেড করে বল জালে জড়িয়ে দেন আলবের্তো রদ্রিগেজ। তিনি ম্যাচের আগে গোল করার কথা বলেছিলেন। সেটা করে দেখালেন। লম্বা রদ্রিগেজ হেড করতে উঠলে তাঁর নাগাল পেলেন না পঞ্জাবের ফুটবলারেরা। সহজেই গোল করে যান মোহনবাগানের রক্ষণভাগের ফুটবলার। সমতা ফেরায় সবুজ-মেরুন।
এর পরেই শুরু হয় রেফারির একেকটি ভুল। ৫০ মিনিটের মাথায় একটি ফাউলের কারণে হলুদ কার্ড দেখেন পঞ্জাবের প্রধান স্ট্রাইকার এজেকুয়েল ভিদাল। পর ক্ষণেই তাঁকে দ্বিতীয় হলুদ কার্ড দেখান রেফারি। তিনি কেন দ্বিতীয় হলুদ কার্ড খেলেন তা বোঝা গেল না। কিন্তু দু’টি হলুদ কার্ড দেখায় তা লাল কার্ড হয়ে যায়। মাঠ ছাড়তে হয় ভিদালকে। বাকি ৪০ মিনিট ১০ জনে খেলতে হয় পঞ্জাবকে। ৬৪ মিনিটে পেনাল্টি থেকে গোল করেন জেমি ম্যাকলারেন। কিন্তু আদৌ সেটি পেনাল্টি ছিল কি না তা নিয়ে প্রশ্ন উঠবেই। বরং সবুজ-মেরুন ফুটবলার বক্সের মধ্যে ইচ্ছাকৃত ভাবে পড়ে যাওয়ার জন্য হলুদ কার্ড দেখতে পারতেন বলে মনে করেন ধারাভাষ্যকারেরা। এই দু’ক্ষেত্রে রেফারির ভুল মোহনবাগানের পক্ষে গেলেও আরও দু’টি ক্ষেত্রে তা গেল পঞ্জাবের পক্ষে। পঞ্জাব অধিনায়ক লুকা মাজসেন একটি ফাউল করেন। যে কারণে তাঁকে হলুদ কার্ড দেখান রেফারি। কিন্তু যে ভাবে মাজসেন বিপক্ষ ফুটবলারের সামনে থেকে পা উঁচিয়ে ট্যাকল করলেন তাতে লাল কার্ড দেখালেও কিছু করার ছিল না। আবার বক্সের মধ্যে পঞ্জাবের এক ফুটবলারের হাতে বল লাগলেও পেনাল্টি দেননি রেফারি। কিন্তু তিন গোল দিয়ে দেওয়া মোহনবাগানের তাতে খুব অসুবিধা হয়নি।
বৃহস্পতিবার মোহনবাগানের সব গোলই এসেছে সেট পিস থেকে। ৬৯ মিনিটের মাথায় আলবার্তো দ্বিতীয় গোল করেন। সেটিও হেডে। ফ্রি কিক থেকে বল তুলেছিলেন অনিরুদ্ধ থাপা। সেই বলে হেড করেন আলবার্তো। ৩-১ গোলে এগিয়ে যায় মোহনবাগান। কিন্তু পেত্রাতোসেরা না থাকায় খেলা তৈরি করার লোকের অভাব দেখা যাচ্ছে। যে রিজার্ভ বেঞ্চকে মোহনবাগানের শক্তি বলা হত, তারা যে এখনও তৈরি নন তা দেখা গেল পঞ্জাব ম্যাচে। মোহনবাগান সমর্থকেরা তাই অপেক্ষায় থাকবেন পেত্রাতোসদের। না হলে আগামী দিনে সেট পিস না পেলে গোল করাই মুশকিল হয়ে যাবে সবুজ-মেরুন ব্রিগেডের।