গোলের পর দিয়ামানতাকোসের উল্লাস। ছবি: সমাজমাধ্যম।
ইস্টবেঙ্গল ১ (দিয়ামানতাকোস)
জামশেদপুর ০
অন্তত ছ’গোলে জেতা ম্যাচ। শেষ পর্যন্ত জিততে হল এক গোলে। তার উপর শেষ বেলায় বিপক্ষ বেশ কয়েক বার আক্রমণে ওঠায় চাপের মুহূর্তও তৈরি হল। শেষ পর্যন্ত অবশ্য কার্যসিদ্ধি। আইএসএলে ঘরের মাঠে টানা দ্বিতীয় ম্যাচে জিতল ইস্টবেঙ্গল। শনিবার জামশেদপুরকে হারিয়ে দিল ১-০ গোলে। ম্যাচের একমাত্র গোল দিমিত্রিয়স দিয়ামানতাকোসের। পয়েন্ট তালিকায় এক ধাপ উঠে এখন ইস্টবেঙ্গল ১০ নম্বরে। ১২ ম্যাচে ১৩ পয়েন্ট হল তাদের।
প্রচুর সুযোগ নষ্ট ইস্টবেঙ্গলের
গোটা ম্যাচ লক্ষ করলে দেখা যাবে, ইস্টবেঙ্গল অন্তত ছ’গোলে জামশেদপুরকে হারাতে পারত। মাত্র এক গোলে জিতেছে তারা। গোটা ম্যাচে অসংখ্য সুযোগ পেয়েছে লাল-হলুদ। আক্রমণ ভাগের প্রায় প্রতিটি ফুটবলার সুযোগ নষ্ট করেছেন। গোলের সামনে থেকে বল ফিরে এসেছে। প্রথমার্ধের শেষ ১০ মিনিটে পর পর অন্তত পাঁচটি সুযোগ তৈরি করেছে ইস্টবেঙ্গল। তবে কোনওটিই কাজে লাগাতে পারেনি। নন্দকুমার নিজেই গোটা তিনেক সহজ সুযোগ নষ্ট করেছেন। তাৎক্ষণিক ভুলে দিয়ামানতাকোস, পিভি বিষ্ণুরা গোল করতে পারেননি। এ দিন ভাগ্যও সহায় ছিল না ইস্টবেঙ্গলের। দু’বার নিশ্চিত গোল হয়নি। সাত মিনিটে আনোয়ার আলির শট লাগে পোস্টে। দ্বিতীয়ার্ধে বিষ্ণুর শট বারে লেগে ফিরে আসে। গোটা ম্যাচে দাপট দেখিয়েও মাত্র এক গোলে জেতা কিছুটা হলেও চিন্তায় রাখতে পারে কোচ অস্কার ব্রুজ়োকে।
ব্রুজ়োর আগ্রাসী ছক
ম্যাচের আগে সাংবাদিক বৈঠকে ব্রুজ়ো একটা কথা বার বার বলেন, তিনি রক্ষণাত্মক খেলায় বিশ্বাসী নন। আগ্রাসী খেলা পছন্দ করেন। দলে যাঁরা রয়েছেন তাঁদের নিয়েই বাজি লড়তে রাজি। জামশেদপুর ম্যাচের প্রথম একাদশ দেখে সেটা আবার বোঝা গেল। হাতে এমনিতেই বিদেশি কম। মাঝমাঠের কেউ নেই। তাই এ দিন ক্লেটন সিলভার পাশে শুরু থেকেই জুড়ে দিলেন দিয়ামানতাকোসকে। দীর্ঘ দিন পরে আক্রমণ ভাগে দুই বিদেশি নিয়ে খেলতে নেমেছিল ইস্টবেঙ্গল। ফলে ম্যাচের রাশ শুরু থেকেই তাদের হাতে চলে এসেছিল। জামশেদপুরের রক্ষণে দীর্ঘদেহী স্টিফেন এজে একাই প্রচুর আক্রমণ প্রতিহত করেছেন।
আবার নতুন ভূমিকায় আনোয়ার
মরসুমের শুরু থেকে তিনি খেলছিলেন সেন্টার ব্যাক হিসাবে। আগের ম্যাচে কার্ড সমস্যায় জিকসন সিংহ খেলতে না পারায় সেই আনোয়ারকেই মাঝমাঠে খেলানো হয়েছে। এ দিন তিনি খেললেন রাইট ব্যাকে। ১২ মিনিটের মাথায় মহম্মদ রাকিপ চোট পেয়ে উঠে যাওয়ার পরে যখন আনোয়ারকে রাইট ব্যাকে নিয়ে এসেছিলেন অস্কার, তখন অনেক সমর্থকই সিঁদুরে মেঘ দেখেছিলেন। এত ঘন ঘন পজিশন বদলানো যে কোনও ফুটবলারের কাছেই কঠিন। তবে নতুন পজিশনে মানিয়ে নিতে আনোয়ারের মতো অভিজ্ঞ ফুটবলার সময় নেননি। উল্টে প্রচুর আক্রমণ এল তাঁর পা থেকেই। ভাগ্য সহায় থাকলে সাত মিনিটেই গোল করে ফেলতে পারতেন আনোয়ার। প্রায় ৩৫ গজ দূর থেকে তাঁর শট পোস্টে লাগে। ভেতরের পোস্টে লেগেও বল গোলে ঢোকেনি। এ ছাড়া গোটা ম্যাচে পাস বাড়ানো থেকে আক্রমণ আটকানো, সব বিষয়েই টেক্কা দিয়েছেন আনোয়ার।
মন্থর নন্দকুমার
অনেকেই প্রশ্ন তুলতে পারেন, গোলের পাস এসেছে তাঁরই পা থেকে। তিনি মন্থর হন কী ভাবে! তবে গোটা ম্যাচের দিকে চোখ রাখলে বোঝা যাবে, নন্দকুমার মোটেও আগের ফর্মে নেই। রাইট উইংয়ের মতো গুরুত্বপূর্ণ পজিশনে খেলেন, যেখানে গতিই শেষ কথা। সেখানে নন্দকুমার বেশ মন্থর। দু’বার বল নিয়ে ভেতরে ঢুকে বিপক্ষের বক্সের কাছাকাছি পৌঁছে গেলেন। কিন্তু শট নিলেন না। নষ্ট হল আক্রমণ। এ রকম আরও অনেক আক্রমণ নষ্ট হয়েছে তাঁর ভুলে। এমনকি যে পাস থেকে গোল হয়েছে সেটিতেও নন্দের গতি যথেষ্ট ছিল না। ভুলের ক্ষেত্রে দায়ী বিপক্ষই। মহেশ পুরো ফিট ছিলেন না বলে তাঁকে নামানোর ঝুঁকি নেননি ব্রুজ়ো। হয়তো পরের ম্যাচে নন্দকে রিজ়ার্ভে দেখা যেতে পারে।
অনবদ্য বিষ্ণু
পঞ্জাব এফসি-র বিরুদ্ধে তাঁর ভাল পারফরম্যান্সের পর জামশেদপুরের বিরুদ্ধে বিষ্ণুকে প্রথম একাদশে সুযোগ দিয়েছিলেন অস্কার। আস্থার দাম রাখলেন কেরলের তরুণ ফুটবলার। যত সময় যাচ্ছে ততই তিনি ধারালো হয়ে উঠছেন। এ দিন গোটা ম্যাচে জামশেদপুরের শুভম সারাঙ্গিকে বোতলবন্দি করে রাখলেন। কত বার যে বিপক্ষকে ধোঁকা দিয়ে বক্সে ঢুকে পড়েছেন। পাঁচটি সফল ড্রিবল করেছেন তিনি। অসংখ্য সুযোগ তৈরিতে ভূমিকা নিয়েছেন। তবে ফাইনাল থার্ডে গিয়ে বা ফাইনাল পাস বাড়াতে গিয়ে এখনও সমস্যা রয়েছে তাঁর। বক্সের মধ্যে ঢুকে অনেক সময়ই খেই হারিয়ে ফেলছেন। এ ব্যাপারে আরও একটু যত্নবান হতে হবে কেরলের ফুটবলারকে।
পুরনো চাল ভাতে বাড়ে
সবচেয়ে যাঁর কথা না বললেই নয়, তিনি ক্লেটন সিলভা। দিয়ামানতাকোস দলে আসার পরেই এমনিতেই প্রথম একাদশে জায়গা হারিয়েছিলেন। যে ক’টি ম্যাচে নেমেছিলেন নজর কাড়তে পারেননি। তবে গত কয়েকটি ম্যাচের পারফরম্যান্সের সুবাদে এ কথা বলাই যায়, ক্লেটন আবার ফর্মে ফিরেছেন। ৩৭ বছর বয়সেও অক্লান্ত পরিশ্রম করতে পারেন। গোটা মাঠ জুড়ে দৌড়লেন। সুযোগ নষ্ট হলেও সতীর্থদের চাঙ্গা করে তুললেন। আদর্শ নেতার মতো ভূমিকা পালন করেছেন ক্লেটন। দ্বিতীয়ার্ধে একটি ফ্রিকিকের সময় বুদ্ধি কাজে লাগিয়ে গোলও করে ফেলতে পারতেন। বিপক্ষের গোলকিপার ভাল সেভ করায় স্কোরশিটে নাম লেখা হল না তাঁর। তবে এ দিনের ম্যাচে প্রভাব ফেলার ক্ষেত্রে এগিয়ে থাকবেন অনেকের থেকেই।