David Williams

David Williams: বাবার পরামর্শেই রাগবি ভুলে ফুটবলে উইলিয়ামস

ডেভিডরা অস্ট্রেলিয়ার আদি বাসিন্দা। ১৯৮৮ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি ব্রিসবেনের কুইন্সল্যান্ডে জন্ম তাঁর। বাবা রাগবি লিগে নিয়মিত খেলতেন।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ২১ এপ্রিল ২০২২ ০৮:২৭
Share:

উল্লাস: ঢাকা আবাহনীর বিরুদ্ধে হ্যাটট্রিকের পর ডেভিড। নিজস্ব চিত্র

এএফসি কাপের প্লে-অফে মঙ্গলবার রাতে যুবভারতীতে ঢাকার আবাহনী লিমিটেডের বিরুদ্ধে হ্যাটট্রিক করে এটিকে-মোহনবাগানকে জিতিয়েছেন ডেভিড উইলিয়ামস। পুরো ম্যাচে কখনওই বুঝতে দেননি প্রিয় বন্ধু ও সতীর্থ রয় কৃষ্ণের অভাব। দুরন্ত হ্যাটট্রিকের মতোই আকর্ষণীয় তাঁর উত্থানের কাহিনি।

Advertisement

ডেভিডরা অস্ট্রেলিয়ার আদি বাসিন্দা। ১৯৮৮ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি ব্রিসবেনের কুইন্সল্যান্ডে জন্ম তাঁর। বাবা রাগবি লিগে নিয়মিত খেলতেন। কিন্তু বড় ছেলেকে ভর্তি করে দিয়েছিলেন স্থানীয় ফুটবল অ্যাকাডেমিতে। ছোট ছেলে, বছর পাঁচেকের ডেভিডকে নিয়ে যেতেন দাদার খেলা দেখাতে। ফুটবলের বিশেষ কিছুই বুঝত না সে। মাঠের বাইরে বল গেলে দৌড়ে গিয়ে শট করে ভিতরে পাঠিয়ে দিত। আর জানত, গোল হলে উৎসব করতে হয়।

বহু বার এ রকমও হয়েছে, দাদার দল গোল খেয়েছে, মাঠের বাইরে বছর পাঁচেকের ডেভিড আনন্দে চিৎকার করছে আর লাফাচ্ছে! এই দৃশ্য দেখে খুব রেগে যেত দাদা। বাবাকে বলত, ‘‘ম্যাচের দিন ভাইকে নিয়ে মাঠে আসবে না। ও তো আমাদের প্রতিপক্ষ গোল করলেও আনন্দে লাফায়।’’ দুই ছেলের কাণ্ড দেখে হাসতেন বাবা। কিন্তু ছোট ছেলেকে মাঠে নিয়ে যাওয়া বন্ধ করেননি।

Advertisement

ডেভিডের বয়স যখন সাত, দাদার ক্লাবেই ফুটবল শিখতে তাকে ভর্তি করে দিলেন বাবা। ফুটবলের পাশাপাশি রাগবির প্রতিও আকৃষ্ট হয়ে পড়ল ছোট্ট ডেভিড। কিন্তু বাবার পরামর্শে শেষ পর্যন্ত ফুটবলকেই বেছে নেয়। মোহনবাগান তারকা সব সময়ই বলেন, ‘‘বাবার জন্যই আমি ফুটবলার হতে পেরেছি। রাগবি আমার প্রিয় খেলা ছিল। কিন্তু বাবা বলেছিলেন, ফুটবল খেললেই তুমি সাফল্য পাবে।’’ তার পর থেকেই ফুটবলার হওয়ার স্বপ্ন দেখা শুরু।

অস্ট্রেলিয়ার স্কুলগুলিতে ছুটি পড়লেই আন্তঃরাজ্য ফুটবল প্রতিযোগিতা শুরু হয়ে যেত। এক দিন অনূর্ধ্ব-১৬ কুইন্সল্যান্ড কোচের চোখে পড়ে যায় বারো বছরের ডেভিড। ফুটবল ফেডারেশনকে তিনি জানান, ‘‘এই ছেলেটিকে আমার দলে চাই।’’ কিন্তু বয়স কম হওয়ায় অস্বস্তিতে পড়ে যান ফেডারেশন কর্তারা। কোচ অবশ্য কোনও যুক্তিই শুনতে নারাজ। উপায় না দেখে ফেডারেশন কর্তারা জানান, ট্রায়াল দিতে হবে ডেভিডকে। নিজেকে প্রমাণ করতে পারলেই দলে নেওয়া হবে। রাজি হয়ে যান কোচ। তার পরে আর পিছনে ফিরে তাকাতে হয়নি সবুজ-মেরুন জনতার নয়নের মণিকে।

২০০৪ সালে অনূর্ধ্ব-১৭ অস্ট্রেলিয়ার জাতীয় দলে ডাক পান। দু’বছর পরে পেশাদার ফুটবলার হিসেবে কুইন্সল্যান্ড রোর-এর সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হন ডেভিড। সে বছরই ডেনমার্কের ব্রন্ডবি আইএফ-র রিজ়ার্ভ দলে ডাক পেয়ে অস্ট্রেলিয়া ছাড়েন তিনি। যদিও ইউরোপে ডেভিডের অভিজ্ঞতা খুব একটা সুখকর হয়নি। তিন বছর পরে লোনে নর্থ কুইন্সল্যান্ড ফিউরিতে ফিরে আসেন তিনি। তার আগে অবশ্য ২০০৮ সালে বিশ্বকাপের যোগ্যতা অর্জন পর্বে চিনের বিরুদ্ধে অস্ট্রেলিয়ার জাতীয় দলে অভিষেক ঘটিয়ে ফেলেন। ২০১১ সালে লোনে সিডনি এফসিতে সই করলেও সাফল্য পাননি। ডেভিডের জীবন বদলে যায় সে বছরই মেলবোর্ন সিটি এফসিতে যোগ দেওয়ার পরে। অসাধারণ খেলে নির্বাচিত হন ‘এ’ লিগের অল স্টার গেমসের জন্য। কিংবদন্তি আলেসান্দ্রো দেল পিয়েরোর পরিবর্ত হিসেবে মাঠে নেমেছিলেন তিনি। তবে সব সময়ই অস্ট্রেলীয় স্ট্রাইকারের মনে কাঁটার মতো বিঁধে ছিল ইউরোপীয় ফুটবলে সাফল্য না পাওয়ার যন্ত্রণা। নিজেকে প্রমাণ করতে ২০১৫-’১৬ মরসুমে হাঙ্গেরির হালাদাস ক্লাবে সই করেন তিনি। ছিলেন ২০১৭-’১৮ মরসুম পর্যন্ত। ৬৬ ম্যাচে ২০টি গোলও করেন তিনি। এর পরে অস্ট্রেলিয়া ফিরে যোগ দেন ‘এ’ লিগের ক্লাব ওয়েলিংটন ফিনিক্সে। রয় কৃষ্ণের সঙ্গে জুটি বেঁধে বিপক্ষের ডিফেন্ডারদের কাছে আতঙ্ক হয়ে ওঠেন। ২০১৯ সালে আন্তোনিয়ো লোপেস হাবাস এটিকে-তে সই করান ডেভিড ও কৃষ্ণকে। অষ্টম আইএসএলে মোহনবাগানের প্রথম একাদশে নিয়মিত সুযোগ না পেলেও ১৭ ম্যাচে চারটি গোল করেছেন তিনি। চব্বিশ ঘণ্টা আগে তাঁর দুরন্ত হ্যাটট্রিকই সবুজ-মেরুনকে এএফসি কাপের মূল পর্বে পৌঁছে দেয়।

এএফসি প্রতিযোগিতায় প্রথম হ্যাটট্রিক করে ৩৪ বছর বয়সি উচ্ছ্বসিত ডেভিড বলেছেন, ‘‘আমার জীবনের অন্যতম সেরা ম্যাচ। এত দিন এএফসি স্তরে কোনও হ্যাটট্রিক ছিল না। অবশেষে সেই আক্ষেপ মিটল’’ যোগ করেছেন,‘‘তিন বছর ধরে এই ক্লাবে খেলছি। যুবভারতীতে নিজেদের সমর্থকদের সামনে ভাল খেলতে পারার অনুভূতিই আলাদা। যখনই আক্রমণে উঠেছি, গ্যালারি থেকে আমাদের উৎসাহিত করেছেন ওঁরা।’’ এএফসি কাপের মূল পর্বে ‘ডি’ গ্রুপে মোহনবাগানের প্রথম ম্যাচ ১৮ মে গত মরসুমে আই লিগ চ্যাম্পিয়ন কেরলের গোকুলম এফসির বিরুদ্ধে।

বাংলার স্বস্তি: সন্তোষ ট্রফিতে বুধবার কেরলের সঙ্গে ২-২ ড্র করে চমকে দিল মেঘালয়। এর ফলে ‘এ’ গ্রুপের চতুর্থ স্থানে নেমে গেলেও খুশি বাংলা শিবির। কারণ, কেরল জিতলে চাপ বাড়ত মনোতোষ চাকলাদারদের। এখন যা পরিস্থিতি শেষ দু’টি ম্যাচে জিতলেই শেষ চার নিশ্চিত বাংলার। বুধবার পঞ্জাব ৪-০ গোলে হারাল রাজস্থানকে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement